যমুনা নদীকে পুনঃখননের উদ্যোগ নিন
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল ও রামকৃষ্ণ জোয়ারদার
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। তবে অনুমান ও হিসাব কষে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৭০০ নদী আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ঐতিহাসিক নদী যমুনা। যমুনা, ইছামতির শাখা। ইছামতি ভারতে ২৪ পরগণা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেবহাটা উপজেলার রাঁধানগরের কাছে এসে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা নির্ধারণ করে পূর্বমুখো হয়ে নাজিমগঞ্জের পূর্ব পাশ দিয়ে কালিগঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে। কালিগঞ্জের মথুরেশপুরের পূর্ব ধার দিয়ে যমুনা মৌতলাকে পূর্ব পাশে রেখে ভূরুলিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে শ্যামনগর উপজেলায় প্রবেশ করে। এরপর শ্যামনগরের সদরের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরীপুরের সোনার মোড়ের কাছে এসে যমুনা ও ইছামতি আবার দু’ভাগে ভাগ হয়। যমুনা পশ্চিম দিকে চিংড়াখালী সোনাখালীর মধ্য দিয়ে মাদার নদী নাম ধারণ করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। সুন্দরবনের মধ্যে মাদার নদী নামে কিছুদুর অগ্রসর হয়ে পুনরায় যমুনা নদী নাম ধারণ করে বঙ্গপোসাগরে প্রবেশ করে।
আদি যমুনার পরিচিত রূপ আজ আর নেই। এই নদীটি প্রায়ই বিপন্ন বলা চলে। উপকূলবাসীর মতে, আদিকাল থেকে যমুনা নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল এ অঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য, জীবন জীবিকা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। যুগ যুগ ধরে যমুনা নদী সংযোগ এলাকায় কৃষক, জেলে, কামার, কুমার, তাঁতী, কবিরাজ, মৌয়াল, বাওয়ালসহ বাঙালি ও আদিবাসী গ্রামীণ জনগণ এক স্থানিক প্রতিবেশ নির্ভর জ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে রক্ষা করে চলেছিল শস্য ফসলের জাত, কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য ভান্ডার, গৃহস্থলী উপকরণসহ নানান গ্রামীণ পথ ও প্রযুক্তি। কিন্তু কালক্রমে জলবায়ু পরিবর্তন, উপকূলীয় বাঁধ তৈরি, নদী দখল ও দূষণ, নদী সংযোগ খালগুলো ভরাট, অবৈধ দখল ও অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের কারণে ঐতিহাসিক যমুনা নদী ও নদীনির্ভর মানুষের জীবনযাত্রা বর্তমানে ভয়াবহভাবে বিপন্ন।
সম্প্রতি বিপন্ন যমুনা নদী পুনঃখনন, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্যনির্ভর জীবন জীবিকা পুনঃগঠনের দাবিতে উপকূলীয় সাতক্ষীরার সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিম ও উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির যৌথ উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাব চত্তরে বিপন্ন যমুনা নদী রক্ষার দাবিতে নানা ধরনের লেখা যেমন: ‘যমুনা নদী মরবে না, অধিকারীরা পড়বে না’, ‘আমার নদী আমার জল, বইতে দাও অবিরল’, ‘যমুনা নদী পুনঃখনন, জলাবদ্ধতা নিরসন’, ‘যমুনা নদী খনন করি, জলাবদ্ধতা দুর করি’, ‘রক্ষা পেলে নদীর অধিকার, রক্ষা পাবে মানুষের অধিকার’, ‘ঐতিহাসিক বারুনী মেলাকে রক্ষা করি’, ‘আমার নদী আমার সংস্কৃতি রক্ষা করি’, ‘নদীর অধিকার, মানুষের অধিকার’, ‘আদি যমুনা রক্ষা করি শ্যামনগরকে রক্ষা করি’ সম্বলিত প্লাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।।
যমুনা নদীকে খনন করার প্রয়োজনয়ীতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কেন্দ্রের সভাপতি কৃষক সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কুমুদ রঞ্জন গায়েন, কৃষক দেবী রঞ্জন মন্ডল, কৃষাণী ফরিদা পারভীন, সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের সভাপতি মারুফ হোসেন মিলন, সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শাহীন জানান, আদি যমুনার প্রবাহ না ফেরাতে পারলে বিপর্যস্ত হবে এই এলাকার কৃষি, প্রাণবৈচিত্র্য ও সংস্কৃতি। নদীর সংযোগ খালগুলো ভরাট, অবৈধ দখল ও অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের কারণে যমুনা নদী ও নদীনির্ভর মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হতে চলেছে। একই সাথে উপজেলা সদরে জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাঁরা অবিলম্বে যমুনা পাড়ের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খননের জোরালো দাবি জানান।