একটি প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঔষধি বাগান থেকেই আব্দুল করিমের সংসার চলে
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
‘প্রায় ত্রিশ বছর থেকে গাছ-গাছালির প্রতি আমার মায়া। এগুলো যাতে হারিয়ে না যায় সেটাই আমার কাজের মূল কারণ। এভাবেই গাছের সাথে আমার সখ্যতা, গাছ চেনা। গাছ গছালির ছাল বাকর আর ফল বিক্রি করেই আমার সংসার চলে।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের সাকো পাড়া গ্রামের কবিরাজ আব্দুল করিম ।
বারনই নদীর পাড়েই রাস্তার ধারেই একটি সাকো সাথে প্রায় পাঁচ শতকের একটি বাড়িতে বসবাস করেন আব্দুল করিম। সংসারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। পরিবারের একমাত্র আয়ের লোক তিনিই। বাড়ির এক কোনায় প্রায় একশতক জমিতে লাগিয়েছন নানা জাতের ঔষধি গাছসহ নানা জাতের ফুলের চারা। তাঁর আয়ের মূল উৎস এই ছোট্ট বাগানটিই।
উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বারসিক ২০২১৫ সালে এই বড়গাছি ইউনিয়নে জনগোষ্ঠীর সহায়ক শক্তি হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন। বারসিক’র কাজের মূল ক্ষেত্র প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থানীয় পরিবেশের উন্নয়নসহ জননেতৃত্বে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালীকরণসহ সহায়কের ভূমিকা পালন করা। এরই লক্ষে বারসিক তাঁর কর্মএলাকায় প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষক এবং আগ্রহী মানুষদের খূজে বের করে এবং তাঁদের সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করে। কাজের লক্ষ্য অনুযায়ী বারসিক আব্দুল করিমের মতো মানুষদের অভিজ্ঞতা এবং কার্যক্রমগুলোকে আরেকজনের মধ্যে এবং আরেক এলাকায় প্রচার প্রচারণা করে থাকে। শুরুতে বারসিক তাঁর এই অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। আব্দুল করিমের বাগানটি সমৃদ্ধ করতে তাঁর মতো তাকে নানা জাতের ঔষধি চারা এবং উপকরণ সহায়তা করে। সেই থেকে আব্দুল করিম এই বাগান থেকে যে আয় আসে তা দিয়েই সংসার চালিয়ে থাকনে। শুরুতে অনেক কষ্ট করেই এই বাগানটি তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। বারসিক সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে।
এলাকার বিভিন্ন মানুষ তাঁর কাছে ছুটে আসেন। ভেষজ পদ্ধতিতে তিনি নানা ছোটখাটো রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। তাঁর সফলতা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। দিনে দিনে কবিরাজ আব্দুল করিমের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। আবদুল করিম বলেন, ‘দিনে দিনে মানুষ কীটনাশক এবং নানা ক্যামিক্যাল মাখাখাদ্য গ্রহণের কারণে রোগবালাই বাড়ছে, আবার অনেকে এখন ভেজষ ঔষধের দিকে আবার ফিরতে চায়, তারা পছন্দ করে এই ঔষধ। কারণ এই ভেজষ ঔষধের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই মানুষ এসব খেলে কোন ক্ষতি নেই।’
আব্দুল করিম নিজের বাগান ছাড়াও এখন অন্য এলাকা থেকে তাঁর গাছ গাছড়া সংগ্রহ করতে হয়। চাহিদা বেশি থাকায় এটা তাকে করতে হচ্ছে। তাঁ নিজস্ব বাগানে ঔষধি গাছ লতাপাতার মধ্যে আছে স্বর্ণলতা, সাদা লজ্জাবতি, শতমুলি, ভূই কুমড়া, থানকুনি, ধুতরা, দুর্বাঘাস, লজ্জাবতী, লাল জবা, রিফিউজি লতা, বাসক, কালোকেশি, তকমা, নানা জাতের পাথর কুচি, চিরতা, তুলশি, নিম, বনজুঁই, মেন্দা, রোজমেরি, হলুদ, আদা, শিউলি, ঘৃতকুমরি, অশ^গন্ধা, সহ নানা জাতের ঔষধি গাছ।
প্রাণের সমৃদ্ধ আমাদের এই দেশ। এর প্রাণের সমাহারেই মানুষ তাঁর জীবন জীবিকা গড়ে তুলেছে। প্রকৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রকৃতির বিভিন্ন উদ্ভিদবৈচিত্র্য বা প্রাণগুলো সুরক্ষা হলে আমাদের পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং নিরাপদ খাদ্য যোগানেরও পথ আরো সহজ হবে। একজন আব্দুল করিম একটি ছোট্ট ঔষধি বাগানের মধ্যে দিয়ে তিনি তাঁর সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন। ঠিক একইভাবে তিনি পরিবেশ প্রাণ, প্রকৃতিও সুরক্ষা করছেন। মানুষের পেশা এবং উদ্যোগগুলো পরিবেশ প্রাণপ্রকৃতিবান্ধব হলে আমাদের সমাজ দেশ আরো সমৃদ্ধ হবে।