জলাবদ্ধতা দূরীকরণে করণীয় বিষয়ক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সম্ভব্য জলাবদ্ধতা দূরীকরণে করণীয় বিষয়ক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল (২৮ মার্চ) সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো: আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতী, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/03/sat-3.jpg)
সংলাপে ‘আসছে বর্ষা ও জলাবদ্ধতা : নিষ্কাশনের পূর্ব প্রস্তুতি জরুরি’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রবীণ সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিক’র সহকারী কর্মসূচি কর্মকর্তা গাজী মাহিদা মিজান।
সংলাপে বক্তারা বলেন, ‘বছরের নয় মাস সাপ ব্যাঙের সাথে পানিতে থাকবো আর তিন মাস ভালো থাকবো এমনভাবে আমাদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই যন্ত্রণা থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই। আমরা জলাবদ্ধতামুক্ত জনপদ চাই।’ জনভোগান্তির এই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তারা আরও বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই চিংড়ি চাষ এলাকাগুলো গুড়িয়ে দিয়ে যথাযথ নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পানি সরানো না গেলে সাতক্ষীরার মানুষ আবারও জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে।’
নাগরিক সংলাপে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতী ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু প্রায় একই সুরে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের বরাদ্দকৃত টাকার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। খননের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা যেন যথার্থ উপায়ে ঠিকাদার নিয়োগ করে খনন কাজ পরিচালনা করে।’
সংলাপে অংশ নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর করতে ভদ্রলৌকিক সংলাপ করে লাভ হবে না বরং প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্টদের ঘেরাও করে জবাবদিহিতা আদায় করতে হবে। সরকার সাতক্ষীরার দুটি নদী বেতনা ও মরিচ্চাপ এবং সংশ্লিষ্ট ৮২টি খাল খননের মহাপরিকল্পনা নিয়ে ৪৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। অথচ এই টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারছে না।’ তারা আরও বলেন, ‘সরকারের বরাদ্দ দেওয়া টাকা পাউবো কর্মকর্তারা নিজেদের আড়াল করে ঠিকাদারদের নামে কিনে নেয়। সেই কাজে নিয়োগ করা হয় সাব ঠিকাদার। আর সাব ঠিকাদাররা শ্রমিকদের সাথে চুক্তি করে সামান্য কিছু কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের ইতি টেনে থাকেন। অনতিবিলম্বে প্রাণসায়ের খাল যথানিয়মে খনন করে বেতনার তিন চারটি অকেজো স্লুইসগেট গুড়িয়ে দিয়ে এবং চিংড়ি চাষের নামে দেওয়া ছোটবড় বাঁধ ভেঙে চুরে ও সাতক্ষীরা পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে সচল করে জনগণকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হবে।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/03/sat-2-1.jpg)
এই দাবি আদায়ে মাঠে নামার কথা উল্লেখ করে সাতক্ষীরা পৌরসভা, সদর উপজেলা পরিষদ, সকল ইউপি চেয়ারম্যান, সকল জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজকে এক প্ল্যাটফর্মে এসে কাজ করতে হবে বলে তারা আহ্বান জানান।
নাগরিক সমস্যাসমূহ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন নাগরিক নেতা ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু, বাসদ নেতা অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, বাংলাদেশ জাসদের নেতা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, জাতীয় পার্টির নেতা আনোয়ার জাহিদ তপন, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, উন্নয়ন কর্মী জি এম মনিরুজ্জামান ও অ্যাড. মুনীরউদ্দীন, সাংবাদিক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরী, জলবায়ু কর্মী এস এম শাহিন আলম, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত মাছখোলা গ্রামের বাসিন্দা আশুরা বেগম, রাজারবাগান এলাকার অণিমা দাসী, বদ্দিপুর কলোনীর জাহানারা বেগম, আশরাফ আলী প্রমুখ।