সাম্প্রতিক পোস্ট

জলাবদ্ধতা নিরসনের আগাম প্রস্তুতি নিন

সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল কাদের

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম মাছখোলা। পৌরসভার ধারঘেঁসে থাকা এ গ্রামটির অন্যতম প্রধান সমস্যা হল জলাবদ্ধতা। বছরে ৪ থেকে ৫ মাস গ্রামটি পানিতে ডুবে থাকে। গ্রামের একমাত্র প্রধান সড়কটি সংস্কার হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলে শুধুমাত্র রাস্তাটুকুই পানির উপর থাকে। তাছাড়া বাকি সড়কসহ পুরো এলাকা কয়েকফিট পানির নিচে তলিয়ে থাকে।

প্রতিবছর মাছখোলাসহ আশেপাশের গ্রামগুলো বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকায় কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গ্রামের বড় বড় প্রাচীন গাছগুলো জলাবদ্ধতার কারণে মরে যাওয়ায় গত কয়েকবছরে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এছাড়া যে সকল গাছের গোড়ায় পানি জমলে দ্রুত মারা যায়, সেগুলোও কমে গেছে। আগে প্রতিটি বাড়িতে আমগাছ, মেহগনি গাছ, সজিনা গাছ, পেয়ারসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ থাকলেও এখন তা নেই বললেই চলে।

জলাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ বাড়িতে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে, একইসাথে গ্রামের টয়লেট ব্যবস্থা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সময় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়ে গেছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির ভিতর হাটুপানি থাকায় মানুষজন আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় অন্য এলাকাতে, যারা থাকেন তারা অত্যন্ত কষ্ট করেই নিরুপায় হয়ে বসবাস করেন। এখানে কাঁচা ও আধাপাকা ঘরের মানুষগুলোর ভোগান্তি অনেক বেশি। গ্রামের স্কুলের মাঠে এ সময় কয়েক ফিট পানি থাকায় বছরের অনেক লম্বা সময় স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। যার ফলে এলাকার শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ে।

মাছখোলার উপর দিয়ে চলে গেছে সাতক্ষীরার অন্যতম প্রধান নদী বেতনা। শুকনা মৌসুমে এই নদী পুরোটাই শুকিয়ে যায়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এই নদী এলাকার পানি নিষ্কাশনে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। গত কয়েক বছর ধারাবহিকভাবে জলাবদ্ধতা থাকলেও বর্ষা মৌসুমের আগে প্রশাসনের তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না। জলাবদ্ধতায় যখন জীবন যায় যায় অবস্থা, তখন প্রশাসন মটর দিয়ে পানি সেচে পানি কমানোর চেষ্টা করে। এত বড় এলাকার পানি কয়েকটি মটর দিয়ে সেচে মৃতপ্রায় বেতনা নদীতে ফেলতে কয়েক মাস চলে যায়। দেখা যায় বর্ষা মৌসুমের পানি সেচতে সেচতে শীতের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলে আসে। এক কথায় সদর উপজেলার মাছখোলাসহ আশেপাশের গ্রামগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসন অগ্রিম পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করে এ এলাকার মানুষ।

লেখক: সদস্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিম

happy wheels 2

Comments