দুর্যোগের সাথী চাল কুমড়ার বড়ি

দুর্যোগের সাথী চাল কুমড়ার বড়ি

রাজশাহী থেকে অনিতা বর্মণ

বাংলাদেশের সবচে’ খরাপ্রবণ এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চল। ভৌগোলিক কারণেই এখানে খরার প্রবণতা বেশি। তবে বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের আঞ্চলিক অভিঘাত এবং মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে বড় বড় গাছপালাগুলো উজাড় হওয়ায় বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। ফলশ্রুতিতে বরেন্দ্র অঞ্চলে খরার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। উচ্চ বরেন্দ্র অঞ্চল এবং অত্যন্ত খরা প্রবণ এলাকা হিসেবে চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার পানির স্তর দিনে দিনে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। অনেকসময় খরার সময় চারিদিকে কোন ধরনের সবজির আবাদ হয় না, এমনকি চাষাবাদ হয় না। আর এই খরাকালীন সময়ে নারীরা তাদের সমস্যা সমাধানে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন। তেমনি একটি লোকায়ত উদ্যোগ চালকুমড়ার বড়ি তৈরি করে সংরক্ষণ করা।

234
নাচোলের নেজামপুর ইউনিয়নের বরেন্দা গ্রাম। সেখানেও খরার কারণে নানা সমস্যায় পড়েন স্থানীয় মানুষ। কম পানিনির্ভর শস্য ফসলের চাষ প্রসারসহ খরার সাথে মানিয়ে নেয়ার কৌশলগুলোও আবিষ্কার করেন সেখানকার নারীরা। গ্রামের রেজিনা বেগম বলেন, “প্রায় প্রতিবছর বাড়িতে চাল কুমড়া, পুইশাক, শিম, ঝিঙ্গা, ছিচিংগা, পেঁেপ, লাউ এই সব সবজি চাষ করে সংসারের সবজি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কিছু বাড়তি আয়ও করে থাকি। তবে চাল কুমড়ার চাষ বেশি করে থাকি। চাল কুমড়া বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্য সবজি। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে এই সবজির চাষ হয়। এই খরা ও দুুর্যোগে চাল কুমড়ার বড়ি আমাদের দিয়েছে স্বস্তি আর খাদ্য নিরাপত্তা।”

তিনি আরো বলেন, “চাল কুমড়া চাষে তেমন কোন খরচ হয় না। বাড়ির উঠানে এই চাল কুমড়ার বীজ বপন করে, কোন প্রকার বিষ না দিয়েই চাল কুমড়া প্রতিবছরই চাষ করি। আর বেশির ভাগ চাল কুমড়া পাকিয়ে মাসকালাই ডালের আটা দিয়ে বড়ি তৈরি করে সারাবছর ঘরে সংরক্ষণ করে আলু, মাছ, বেগুন এর সাথে মিশিয়ে রান্না করে থাকি। এলাকায় ফাল্গুণ ও চৈত্র মাসে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায়। এই সময় তখন কোন প্রকার সবজি চাষ করা যায় না। তখন সবজি হিসেবে এই চাল কুমড়ার বড়ি রান্না করে পরিবারের তরকারির চাহিদা পূরণ করে থাকি। তাছাড়া ঘরে যখন টাকা বা তরকারি না থাকে তখন এই বড়ি রান্না করে খাই ।”

বরেন্দ্রা গ্রামের সাগরি বেগম বলেন, “শীত মৌসুম এলেই বরেন্দা গ্রামের গৃহিণীরা মজাদার এই সুস্বাদু খাবার বড়ি তৈরিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই বড়ি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য মাংসের সমান। প্রতিবছর শীত এলেই গ্রামের নারীদের অন্য কোন কাজ না হলেও বড়ি তৈরি করতেই হবে।” তিনি আরও বলেন, “তবে বড়ি তৈরির মূল উপাদান মাসকালই এর ব্যবস্থা নারীরাই করে থাকেন। আর এই কালাইকে ডাল থেকে আটা তৈরি করে কুমড়া কুড়ে ভালোভাবে ফ্যাট করে তৈরি করেন কুমড়ো বড়ি। ৪/৫ দিনে কড়া রোদে শুকিয়ে, কাঁচের বোয়ামে সারাবছর সংরক্ষণ করে খাওয়া হয় বড়ি। তবে মাঝে মাঝে রোদ দিয়ে রাখলে আরো বেশি ভালো থাকে।”

বরেন্দা গ্রামের নারীরা চাল কুমড়ো চাষের পাশাপাশি, চাল কুমড়া বড়ি সারাবছর সংরক্ষণ করে পরিবারের সদস্যদের খাদ্য নিরাপত্তায় নিজেদের ভূমিকা রেখে চলেছেন যা খুবই অনুকরণীয় সকলের জন্য।

happy wheels 2