প্লাস্টিকের আগ্রাসনে হুমকির মুখে বাঁশবেতনির্ভর জীবন-জীবিকা
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকুলীয় অঞ্চল দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিতি। এখানে বছরে বারবার ঘুরে ফিরে আসে নানান ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করে। আর লবণ পানি প্রবেশের কারণে যেমন এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রাণসম্পদ বিলুপ্ত হচ্ছে সেই সাথে কৃষি জমিগুলোও চাষবাসের অনুপযোগী হচ্ছে। এ লবণাক্ততা বাড়ার কারণে বিভিন্ন পেশার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তার এক নিদর্শন হলো বাঁশ বেতনির্ভর উপকূলীয় ঋষি পরিবারগুলোর উপর।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/03/WhatsApp-Image-2024-03-11-at-3.07.49-AM-1024x485.jpeg)
সম্প্রতি মাঠ পর্যবেক্ষণে উপকূলীয় বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র সম্পর্কে জানার জন্য এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় অংশগ্রহনকারী প্রবীণ ব্যক্তি তারাপদ দাস বলেন, ‘আমরা এখানে প্রায় ৩৫টি ঋষি পরিবার আছি। আমাদরে উপার্জনের প্রধান পেশা হলো বাঁশ বেতের কাজ, যা আমরা বংশপরম্পরায়ভাবে করে চলেছি। কিন্তু এই কাজ দিয়ে এখন আর আমাদের পেট চলছে না। আমাদের আয়ের জন্য অন্য উপায় খোঁজ করতে হচ্ছে। আমাদের ঋষিরা এখন বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত হচ্ছে। এখন আমরা যোন দিচ্ছি, বাইরে ভাটায় কাজ করতে যাচ্ছি, ভ্যান চালচ্ছি, চুল কাটার কাজ করছি, গ্রামে গ্রামে ছাগল ভেড়া কেনা বেচা করছি।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/03/WhatsApp-Image-2024-03-11-at-3.07.49-AM-1-1024x485.jpeg)
তিনি আরও বলেন, ‘সব পরিবার বাঁশ বেতের কাজ করছি ঠিকই কিন্তু তা পরিমাণে খুবই কম। এটি কমে যাওয়ার মুল কারণ হচ্ছে লবণাক্ততা ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে। প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের উপকরণ বাজারে ছেয়ে গেছে। আমাদের তৈরিকৃত পণ্যের একটির যে মূল্য সেখানে প্লাস্টিকের পণ্য হয় দুই থেকে তিনটি। এতে করে আমাদের বাঁশ বেতের জিনিসের ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এছাড়াও লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে এলাকা থেকে বাঁশও কমে গেছে। এখন বাঁশ আসে এলাকার বাইরে থেকে আগে ১০০ টাকা মূল্যে একটি বাঁশ কিনেছি আর এখন ২০০-৩০০টাকা দিয়ে কিনতে হয়।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/03/WhatsApp-Image-2024-03-11-at-3.07.51-AM-1024x485.jpeg)
তিনি আরো বলেন, ‘এই কাজটি করে আমরা খুবই গর্ববোধ করতাম। কারণ আমাদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী বিভিন্ন মানুষে ব্যবহার করছেন। আমার ঝুড়ি, চালন, কুল, খারা, ডোল, ধামা, পাতি, হোঙা, হাঁস মুরগি রাখার জন্য বড় ঝুড়ি, ধানের গোলা ইত্যাদি উপকরণ তৈরি করি। এ কাজগুলো পুরুষের পাশাপাশি নারীরা, লেখাপড়া শেখার ছেলেমেয়েরা সবাই করতো এবং আনন্দ পেতো। কিন্তু এখন যেন শুধু গল্প হয়ে যাচ্ছে। তৈরিকৃত পণ্য নিয়ে বাজারে গেলেও ভালো বিক্রি হয় না! বাধ্য হয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরী করে বিক্রি করতে হয়।’
সবিতা রানী বলেন, ‘আমার বাপের বাড়িতে এই কাজ কম হতো। আমি এখানে এসে শ^শুর শ^াশুরির কাছে বাঁশ বেতের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি কাজ শিখেছি। তবে এ কাজ কমে গেছে। আমাদের ছেলে মেয়েরাও এই কাজ আর করতে চাচ্ছে না। কারণ এটি দিয়ে এখন আর সংসার চলছে না। কিন্তু আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা উচিৎ। তার জন্য সরকারী-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’