অজানা রোগে আক্রান্ত ‘বাড়ির ডাক্তার’কে চিকিৎসা দেবে কে?
বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
নিম গাছের বহু গুণের কারণে তাকে ডাকা হয় ‘বাড়ির ডাক্তার’। নিমের পাতা, ফুল, ফল, শেকড়, গাছের ছাল ও কাঠ সবই মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর জন্য উপকারী। অনেক উপকারী হলেও আজ কোন এক অজানা রোগে আক্রান্ত রাজশাহীর তানোর উপজেলার শতশত দেশী নিম গাছ। বিশেষ করে রাস্তার দ-ুপাশের নিম গাছ আক্রান্ত হয়েছে বেশি।
নিমের উপকারী দিক বিবেচনা করে সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকারি, বেসরকারি সকল ক্ষেত্র থেকেই নিম গাছ রোপণে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। পাশাপাশি বরেন্দ্র অঞ্চলের আবহাওয়াকে বিবেচনা করলে নিম গাছই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে প্রেক্ষিত থেকে এ অঞ্চলে বিগত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিমাণে নিম গাছ রোপণও করা হয়। কিন্তু চলতি বছরে দেখা যাচ্ছে তানোর উপজেলার মালবান্ধা, গোল্লাপাড়া, দুবইল, ভালুকান্দর, সাহপুর, কামারগাঁ, যোগিশো, মেলান্দি, হাতিশাইল, তালন্দ, তানোর-মন্ডুমালা সড়কসহ বিলকুমারী পাড়ের পুলবাঁধের হাজার হাজার নিম গাছ আজ জীবন মরণের সন্নিকটে।
চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে গাছের কচিপাতাগুলো শুকিয়ে লাল হতে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে কান্ডসহ চিকন ডালপালাগুলো শুকিয়ে লাল বর্ণ ধারণ করে। প্রথমে দেখলে মনে হচ্ছে পানির অভাবে গাছগুলো রোগাক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু পাশের আম, জাম, শিশু গাছগুলো বেশ সুস্থ আছে। তাই বুঝতে সমস্যা হয় না যে, নিমগাছগুলো রোগাক্রান্ত। এই বিষয়ে কথা হয় তানোর উপজেলার মালবান্ধা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. বদর উদ্দিন (৬৫) সাথে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমার একটি ১৫ বছরের নিম গাছ এভাবে মারা যায়। আমি গাছটি কেটে দেখি শেকড়ে উই পোকার আক্রমণ হয়েছে ভেবেছিলাম সে কারণে হয়তো মারা যাচ্ছে নিম গাছগুলো, পরে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখি যে ছোট ছোট শেকড়ের সাহায্য নিয়ে নিম গাছ মাটি থেকে রস সংগ্রহ করে সেগুলো শুকিয়ে গিয়েছে। পরে ধারণা করলাম মাটিতে রস না থাকার কারণে বা পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে। কারণ নিমের শেকড় মাটির বেশি গভীরে যেতে পারে না।’
নিম গাছ বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশের জন্য খুবই উপযোগি হওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলের জন্য আরো একটি উপযোগিতা আছে তা হচ্ছে এ অঞ্চলের মাটির ঘরের দরজা-জানালা নিম কাঠের হওয়া বাঞ্চনীয়। কারণ অন্য কাঠ মাটির জন্য তারাতারি নষ্ট হয়ে গেলেও নিমকাঠ দীর্ঘস্থায়ী।
কোন অজানা রোগ বা মাটিতে রস ঘাটতির জন্য নিম গাছগুলোর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে থাকুক না কেন এর সঠিক কারণ নির্ধারণের মাধ্যমে যদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গাছগুলো রক্ষায় এগিয়ে আসে তাহলে এ অঞ্চলের পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে তেমনি মানুষ তার প্রয়োজনীয় ঔষধ নিমগাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।