সমৃদ্ধ হচ্ছে শিশু কিশোরদের জ্ঞানের ভান্ডার
চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
গ্রীক শব্দ ‘ইপিষ্টেম’ এবং ‘লগোস’ এ শব্দ দুটি থেকে ইপিষ্টেমোলোজী নামক যে শব্দের জন্ম তার আক্ষরিক অর্থ জ্ঞানবিদ্যা। জে.এফ ফেরিয়ার ইন্সটিটিউট অব মেটাফিজিক্স গ্রন্থে প্রথম জ্ঞানবিদ্যা কথাটি ব্যবহার করেন। দার্শনিক প্যাট্রিক ইন্ট্রোডাকশন টু ফিলোসফি গ্রন্থে বলেছেন, জ্ঞানবিদ্যা জ্ঞানের উৎপত্তি প্রকৃতি বৈধতা সীমা এবং অবস্থার আলোচনা। জ্ঞানের উৎপত্তি বিষয়ক মতবাদগুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনা থাকলেও একথা অস্বীকার করার উপায় নেই মানুষ প্রতিনিয়তই জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে চায়। বুদ্ধিবাদের জনক ফ্রান্সের দার্শনিক রেনে ডেকার্ত তার বুদ্ধিবাদ বিষয়ক মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নিজের অস্তিত্ব ব্যতীত সব কিছুকেও সন্দেহ করলেও অন্যান্য ধারণার পাশাপাশি আগন্তক ধারণা যে আমাদের পারিপাশির্^ক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দেয় তা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। আবার অভিজ্ঞতাবাদী জন লক তার এসে কনসার্নিং হিউম্যান আন্ডারষ্ট্যান্ডিং গ্রন্থে অভিজ্ঞতাকে জ্ঞান লাভের উৎস বলে বিবেচিত করেছেন। তার মতে, জন্মের সময় মানুষের মন থাকে অলিখিত সাদা কাগজের মত। বাইরের বস্তু ইন্দ্রিয়ের সংস্পর্শে আসলে সেই বস্তুর যে ছাপ বা ধারণা মনে পরে তা থেকে জ্ঞান হয়। উপরোক্ত বাক্যগুলো ধান ভানতে শীবের গীতের মতো মনে হলেও এ রচনার জন্য প্রাসঙ্গিক।
অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাই ইতিহাস। সচেতন মানুষ মাত্রই ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। বড়দের পাশাপাশি শিশু কিশোরদের কৌতুহলী মন ও অজানাকে জানতে চায় অদেখাকে দেখতে চায়। জানার আকাঙ্খা তাদের মধ্যে সৃষ্টি করে কৌতুহল। নিজেকে, নিজের পারিপাশির্^ক অবস্থা, নিজের সমাজ রাষ্ট্রকে জানার চেষ্টা শিশু কিশোরদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। নতুন নতুন যে ধারণা বা ছাপ তাদের মনে পরে তা তাদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করতে বর্তমান সরকার শিশু কিশোরদের সে চেষ্টা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তাই তারা যেন দেশকে জানতে পারে, জাতিকে জানতে পারে, স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে পারে, তারা যেন স্বাধীনতার চেতনা লালন করে এ লক্ষ্যে সারা দেশে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকারের অংশ উপজেলা প্রশাসন এ কর্মসূচি পালন করায় শিশু কিশোররা সঠিক ইতিহাস, সঠিক দর্শন সম্পর্কে জানতে পারছে। সমৃদ্ধ হচ্ছে তাদের জ্ঞানের ভান্ডার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা, ২৫ মার্চের কালো রাত, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় সঙ্গীত এগুলোতো আমাদের ইতিহাস। আজ শিশুরা এসব ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমানের জন্ম দিন, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোতে উপজেলা প্রশাসন শিশুদের জন্য আয়োজন করছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় একজন শিশু যখন জাতীয় পতাকা, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ বা এমন অন্যান্য বিষয়ের চিত্র অংকন করে তখন সে চিত্রটি যেন তার মনে গেঁথে যায়। এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে সে। জাতীয় পতাকা আঁকতে গেলে এর সঠিক মাপ, উত্তোলনের নিয়ম কানুন, কেনো কখনো অর্ধনমিত রাখা হয় আবার কখনো পুরোটাই উত্তোলন করা হয় এমন প্রশ্ন তার মনে আসতেই পারে। আর এমন প্রশ্নের উত্তর যখন সে জানতে পারছে তখন সে জানতে পারছে ইতিহাস। সে জানতে পারছে লাল সবুজ রঙের তাৎপর্য। বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এমন রচনাগুলো কেবল তাকে শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন শিক্ষাই দিচ্ছেনা দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণাও যোগাচ্ছে। শুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীত চর্চা প্রভাব ফেলছে শিশু কিশোরদের কোমল মনে ।
বিশেষ দিবসগুলো উপলক্ষে আয়োজিত র্যালিতে যখন শিশু কিশোররা অংশ গ্রহণ করছে তখন আবেগাপ্লুত হচ্ছে তারা। আলোচনা সভায় যখন তারা অংশ নিচ্ছে আলোচকদের বক্তব্য শুনছে তখন এটি তাদের শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠছে। তারা প্রভাবিত ও হচ্ছে। প্রায়শই বিভিন্ন দিবসে প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্র দেখে এক একজন শিশুর মধ্যে যেন তৈরি হচ্ছে এক একটি ভূবন। যে ভূবন তাকে আলোড়িত করে। করে আন্দোলিত, করে স্বাধীন চেতা ও যোগায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার শক্তি সাহস। কেবল শ্রেণী কক্ষের পড়ালেখায় সীমাবদ্ধ না থেকে এসকলসহ শিক্ষা শিশুর মনো বিকাশে যেমন ভূমিকা রাখছে তেমনি তাকে সচেতন ও করছে।
এ প্রসঙ্গে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার জানান, দেশের উত্তরণ ও সমৃিদ্ধকে মূল লক্ষ্য রেখে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নির্ধারিত এসকল বিষয়গুলো নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছে। আগামীতেও করবে। যারা ইতিহাসে স্বাক্ষর রেখে গেছেন তাদের পথ অনুসরণ করবে শিশু কিশোররা। শিশু কিশোরদের মধ্যে জন্ম নিবে দেশাত্মবোধ। বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা, রাজনৈতিক জীবন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, জাতীয় পতাকা, ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এমন রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে একজন শিশু কিশোর যখন এ বিষয়গুলোর উপর পড়ালেখা করবে তখন সে আপনা আপনি ইতিহাসের মধ্যে ডুবে যাবে। আজকের শিশুরাই যেহেতু আগামী দিনের ভবিষ্যত তাই তাদের আদর্শ নেতৃত্ব আগামী দিনের বাংলাদেশকে করবে আরো বেশি সমৃদ্ধ করবে।