সমাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন্তঃনির্ভরশীলতা ছিলো, নানা কারণে তা সংকোচিত হয়েছে

রাজশাহী থেকে মোঃ শহিদুল ইসলাম
ভোগবাদীর দিক থেকে যখন মানুষকে এক করে তোলা হয়, মানুষ যখন ভোগবাদীর থেকে এক হয়ে যায়, তখন সংকটের রূপগুলো আরো বাড়তে শুরু করে। এই পৃথিবী শুধু মানুষের নয়, এখানো লাখো লাখো প্রাণবৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আছে, তার প্রতিটিরই আলাদা আলাদা চাহিদা এবং বেঁচে থাকার অবলম্বনগুলো এক সুতোয় গাঁথা। একে আরেকজনের মধ্যে বা সহায়তার মধ্যেই বেঁেচ থাকার নাম আন্তঃনির্ভশীলতা। সকল প্রাণ এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যসহ সবাই যার যার মতো করে এই সমাজে ভূমিকা পালন করবে, টিকে থাকবে, সম্মান শ্রদ্ধাবোধের সাথে এগিয়ে যাবে, কেউ কারো ক্ষতি করবেনা, এইটাই বহুত্ববাদ সমাজের সৌন্দর্য ও রূপ।


সম্প্রতি বারসিক রাজশাহী রিসোর্স সেন্টার কতৃক আয়োজিত দু’দিনব্যাপী বৈচিত্র্য, আন্তঃনির্ভরশীলতা এবং বহুত্ববাদী সমাজ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, তরুণ-যুব এবং উন্নয়নকর্মীদের অংশগ্রহণে বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে প্রাণবৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, আন্তঃনির্ভরশীলতা, এগ্রোইকোলজি, সকল প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তাসহ বহুত্ববাদ সমাজের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এবং আঞ্চলিকভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলের দিকগুলো আলোচনা ও মতবিনিময় হয়। এতে প্রাণবৈচিত্র্য, মানুষের সাথে গাছপালা. পশুপাখি এবং প্রাণহীন পরিপার্শে^র সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ, বৈচিত্র্য, প্রাণবৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণায়ন ও বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য ও করণীয় দিকগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ আলোচনা ও পাওয়াপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন রাজশাহী বিশ^দ্যিালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘সকল প্রাণই এই পৃথিবীর জন্য সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’


সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী রবিউল আলম। এগ্রোইকোলজি, লাইভলিহুড এবং সকল প্রাণের খাদ্য ািনরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক অভিজিৎ রায়। তাঁর আলাচনায় বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু পরিবেশ, মানুষসহ অন্যান্য প্রাণের সহবস্থান এবং খাদ্য নিরাপত্তার দিকগুলো তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি এগ্রোইকোলজি জোনের মধ্যে আলাদা আলাদা ভিন্ন ভিন্ন প্রাণ বা উদ্ভিদবৈচিত্র্য থাকে, থাকে শস্য ফসলের আলাদা বৈচিত্র্যসহ অন্যান্য, এগুলোর সাথে সেই এলাকার মানুষের সম্পর্ক, রিচুয়াল, ট্যাবু ইত্যাদির সম্পর্ক গড়ে উঠে। এমনকি সেই এলাকার মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণবৈচিত্র্যেও ধরনও আলাদা হতে পারে। এ জন্য বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন প্রাণের অস্বিত্ব পাওয়া যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যদি এসকল বৈচিত্র্য বিনষ্ট করি, তাহলে শুধু মানুষ নয়, অন্যান্য প্রাণেরও সংকট তৈরি হয়।


বারসিক’র পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ^াস তারঁ আলাচনায় বলেন, ‘মানুষ এই পৃথিবীর অনেক প্রাণের মধ্যে একটিমাত্র, আর এই মানুষের টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন দুনিয়ার তামাম প্রাণবৈচিত্র্য। মানুষের ভোগবাদী আচরণ যখন আগ্রাসী রূপ নেয়, কোন কিছু বাছবিচার করেনা তখনই সংকটগুলো শুরু হয়। আমরা যাচ্ছেতাই প্রকৃতি ধ্বংস করছি, আমাদের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে অবমূল্যায়ন করছি।’ তিনি বলেন, ‘আামদের সকল প্রাণ, সকল সংস্কৃতিকেই গুরুত্ব দিতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে। তাহলেই একটি বহুত্ববাদী সমাজ বির্নিমাণ হবে।’
কর্মশালায় অশংগ্রহণকারি বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরাম এর সভাপতি শাইখ তাসনিম জামাল বলেন, ‘আমরা তরুণরা নিজেরা এ বিষয়ে সচেতন হয়ে আগামীতে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যসহ পরিবেশ উন্নয়নের দিকগুলো সমন্বিভাবে এগিয়ে নিব।”


উক্ত দুইদিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারি। এতে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন জনসংগঠনের ২৫ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার শেষে সকল অংশগ্রহণকারিগণ আগামীতে করণীয় দিকগুলো নিয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। যাতে, বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যসহ এগ্রোইকোলজি এবং সকল প্রাণের খাদ্য ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো উন্নয়নে ভূমিকা পালন করা যায়।

happy wheels 2

Comments