অসমতার অবসান হোক

উপকূল থেকে বাবলু জোয়ারদার
আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণরাই মূল শক্তি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ^ আদিবাসী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে গতকাল জয়িতা প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে শ্যামনগর উপজেলার ৬নং রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে আলোচনা সভা ও র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রমজান নগরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ জাহাঙ্গীর আলম বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য জনাব মো: আব্দুল সালাম ও আসমা বেগম , সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার নির্বাহী প্রধান কৃষ্ণপদ মুন্ডা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, সাংবাদিক ও শিক্ষক রণজিত কুমার বর্মণ, প্রশান্ত মুন্ডা, প্রমিলা মুন্ডা। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোপাল মুন্ডা।
অনুষ্ঠানে প্রমিলা মুন্ডা বলেন, ‘আজ বিশ^ আদিবাসী দিবস। প্রতিবছর ৯ আগস্ট এই দিবস পালন করা হয। আদিবাসীদের অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সুরক্ষা প্রদানের স্বার্থে দিবসটি পালন করা হয়। শুধু দিবস পালন করলে হবে না আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে যুব সমাজকে আরো শক্তিশালী হতে হবে। আমাদের অধিকার আমাদেরকে আদায় করে নিতে হবে।’


সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার নির্বাহী প্রধান কৃষ্ণপদ মুন্ডা বলেন, ‘আদিবাসী নারীরাই ঐতিহ্যগত খাদ্যব্যবস্থা এবং ঐতিহ্যগত ওষুধপত্রসহ বিশেষ জ্ঞানের ধারক। এই নারীরা নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে চ্যাম্পিয়ন। তারা পরিবেশ সংরক্ষণ ও নিজের জাতির মানবাধিকার সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।’ তিনি বলেন, ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয় একটি সমতাভিত্তিক সমাজ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে হলে আদিবাসী নারীর কণ্ঠকে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত করতে হবে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক যৌথ চ্যালেঞ্জ সমাধানে অবদান রাখতে পারে। তারা জানত কীভাবে পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে হয়। আমাদের দেশেও পাহাড়-পর্বত, বন, নদী, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ইত্যাদি সংরক্ষণে তাদের রয়েছে বিশাল অবদান। সন্তান ও পরিবার লালনপালন, সংস্কৃতি রক্ষা, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে আদিবাসী নারীর রয়েছে অসামান্য অবদান।’


চক প্রধান প্রশান্ত মুন্ডা বলেন, ‘আমরা শুধু আশা করব, দেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার জীবনধারা, মৌলিক মানবাধিকার, ভাষা ও সংস্কৃতি, আত্ম নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সবাই আরও বেশি সচেতন হবেন, সংবেদনশীল হবেন। এটিই এই দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য।’


যুব সমাজের পক্ষ থেকে প্রিয়তোষ মুন্ডা(দৃষ্টি প্রতিবন্ধী) বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে আমাদের অপ্রতিরোধ্য যাত্রার নানা গল্প আমরা প্রতিদিন শুনছি। আবার বিশাল বৈষম্য ও অসমতার কথা অনেকে বলছেন। যে মাথাপিছু আয়ের গড় হিসাব আমরা দেখছি, তা কোনোভাবেই আমাদের আদিবাসী মানুষ, কৃষক, দলিত জনজাতি, প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রান্তিক মানুষের জন্য সত্য নয়। প্রায় তিন হাজার ডলারের এই মাথাপিছু আয়ের হিসাব এই সময়ে জন জাতির সঙ্গে এক নিষ্ঠুর পরিহাস। আমরা বহু বছর ধরে বলে আসছি, জনজাতিদের উন্নয়ন ও অধিকারের বিষয়টি ওদেরই দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হবে। সম্ভব হলে চোখের দেখা শুধু নয়, অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে হবে।’


উল্লেখ্য, ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ^ আদিবাসী দিবসটি পালনে ৪৯/২১৪ বিধিমালায় স্বীকৃতি পায়। বিশে^র ৯০টি দেশে প্রতিবছর ৯ আগস্ট বিশ^ আদিবাসী দিবস উদযাপিত হয়।

happy wheels 2

Comments