হারাতে চাই না আমাদের স্থানীয় বীজ, ঐতিহ্যবাহী খাদ্য
রাজশাহী থেকে রিনা টুডু
‘ইনা জময়া ইনা ইতো রুক্ষিয়া হাতাঔন’-সাওঁতালী ভাষায় কথাটির অর্থ বাংলা অর্থ হলো আমার খাদ্য,আমার বীজের নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব চাই। বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২৩ উপলক্ষে রাজশাহীর তানোর উপজেলার থান তলা, কঁচুয়া, মাহালীপাড়া ও পিরনপুকুর গ্রামের নারীরা তাঁদের স্থানীয় বীজ ও ঐতিহ্যবাহী খাদ্য গুলো সুরক্ষার জন্য একটি মেলার আয়োজন করেন। এই আয়োজনে জনগোষ্ঠিকে সহযোগিতা করে বেসরকারী গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠন বাংলাদেশ বারসিক। এ কাজে সহযোগি সংগঠন হিসেবে অংশগ্রহণ করে থানতলা আদিবাসী নারী উন্নয়ন সংগঠন, মাহালীপাড়া বাঁম ও বেত উন্নয়ন সংগঠন ও পিরন পুকুর নারী উন্নয়ন সংগঠন।
জলবায়ু পরিবর্তন, বীজের উপর বাজার নির্ভরশীলতাসহ নানা কারণে স্থানীয় জাতের বীজগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। আজ বাড়ির আঙ্গিনায় নারীরা যে সবজি চাষ করে সে সবজির বীজও আজ বাজার থেকে ক্রয় করতে হয়। অথচ এই বীজগুলো আদিকাল থেকে নারীরাই সুরক্ষা করে আসছেন। পাশাপাশি হারিয়ে যেতে বসেছে আদিবাসীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অনেক বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যবাহী খাদ্য। জলাভূমি কমে যাওয়া একমুখি ফসলের বাণিজ্যিক চাষ, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও আগাছা নাশকের ব্যাবহার এর অন্যতম কারণ।
তাই স্থানীয় বীজ ও ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সুরক্ষার দাবি নিয়ে নারীরা “ঐতিবাহী খাদ্য ও বীজ মেলার’ আয়োজন করেন। সেখানে ১৫জন বাঙালি নারী স্থানীয় বীজ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৫জন আদিবাসী নারী তাঁদের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে অংশগ্রহণ করে একটি ব্যাতিক্রমি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। যেখানে সব থেকে বেশি ধরনের খাদ্য বা বীজ উপস্থাপন করে প্রথম হওয়ার নিয়ম করেন নারীরা। পাশাপাশি যেখানে ছোট ছোট ফেস্টুনে স্থানীয় এ বীজ ও খাবার সুরক্ষার বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেন। ৪৫টি বৈচিত্র্যময় অচাষকৃত সবজি, শাক,ফল ও রান্না করা ঔতিহ্যবাহী খাদ্য উপস্থাপন করে প্রথম হন থানতলা আদিবাসী নারী উন্নয়ন সংগঠনের সদস্য সোহাগী কিস্কু(৪৮)। তিনি বলেন, “আগের মতো আর আমরা এই খাবারগুলো পাই না। এখন অনেক সময় ব্যয় করে অনেক দূরে দূরে গিয়ে খাবারগুলো সংগ্রহ করতে হয়। আজ আমি এখানে অংশগ্রহণ করে বুঝলাম যে এই খাবারগুলো হারিয়ে গেলে আমাদের কতো সমস্যা হবে।’
পিরনপুকুর নারী সংগঠনের সদস্য মর্জিনা বেগম (৪০) ৪৯টি স্থানীয় জাতের সবজি, তেল, মসলা ও ধান বীজ উপস্থাপন করে বীজ ক্যাটাগরিতে প্রথম হন। তিনি বলেন, “আমি আমার বাড়ির আঙ্গিনায় সারাবছর মৌসুমি শাকসবজির চাষ করি। আগে বীজ বাজার থেকে কিনতাম এখন আর বাজার থেকে বীজ কিনি না। আমার সংরক্ষণকৃত বীজ নিজে চাষ করে বেশি হওয়া বীজগুলো অন্যদের মাঝে বিনিময় করি। আমি আমার বাড়িকে স্থানীয় বীজবাড়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।’
উক্ত আয়োজন নিয়ে বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ঐতিহ্যবাহী খাদ্য ও স্থানীয় বীজগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো সুরক্ষায় সরকারী ও বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’