শহরমূখী বাসক পাতা
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
দূর্গাপুর উপজেলার ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্ব উত্তরে কালিকাপুর ও চন্দ্রকোণা গ্রামে চাষী পর্যায়ে চাষ করা হচ্ছে বাসক পাতা । উদ্দেশ্য একটাই বাসক পাতা বিক্রি করা। আর এই পাতাগুলোর ক্রেতা হল বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলো। তারা প্রতি ৪ মাস অন্তর অন্তর বাসক পাতা বিক্রি করছেন। স্থানীয়রা জানান, প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে বাসকপাতা বিক্রি করা হয়ে থাকে। গ্রামের এই পাতা কারখানায় গিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঔষধে রূপ লাভ করে আবারো ফিরে আসে বিভিন্ন শহর ও গ্রাম গঞ্জে।
বাসক পাতা চাষে কোন আলাদা যত্ন নেওয়া লাগে না। লাগে কোন সার বিষ প্রয়োগের। গরু ছাগলও এর পাতা খায় না। যার কারণেই ২০১৪ সালে চন্দ্রকোনা গ্রামে একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে বাসক পাতার চারা। এখন সে চারা পাতা সংগ্রহের উপযোগী হওয়ায় সেখান থেকে পাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাতা সংগ্রহ করে ২ দিন রোদ্রে হালকা শুকিয়ে সেটা বস্তাবন্দী করে পাঠানো হয় দূর্গাপুরে। দূর্গাপুর থেকে কম্পানির প্রতিনিধি নিয়ে যায় কম্পানির বিভিন্ন কারখানায়।
এই বাসক পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে তারা আগে জানতো না। তাই বাসক গাছের ডাল দিয়ে তারা বাড়ির চারপাশে বেড়া দিতো বলে জানান। হঠাৎ করে তারা একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারে এই পাতা দিয়ে ঔষধ বানানো হয়। আর এই পাতা বিক্রিও করা যায় তখন থেকে তারাও যত্ন সহকারে বাসকপাতার গাছ রোপণ করা শুরু করেন। এখন অনেকেই তারা এই বাসকপাতা বিক্রি করে কিছু আয় করছেন।
চন্দ্রকোণা গ্রামের বাসিন্দা কমলা বেগম প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে চলেছেন। তিনি উদ্যোগ নিলেন বাসক পাতার কাটিং চারা করতে। এই বাসক পাতার কাটিং চারা তিনি ৪ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বিক্রি টাকা দিয়ে পরিবারের খরচ চালাতে পারছেন বলেন তিনি জানিয়েছেন।
কোন সার বিষ ছাড়ায় বেড়ে ওঠে বাসক গাছ। তবে যেসব স্থানটি শুকনো ও সারবিহীন সেসব স্থানে গোবর দিলে ভালো হয়। তবে স্যাতস্যতে স্থানে দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও পাতাও দ্রুত উৎপাদন হয়ে থাকে। বাড়ির আশপাশে পতিত জায়গায়, বাঁশ ঝাড়ের নিচে খালি জায়গায়, যেখানে কোন শাকসব্জি ও অন্যান্য গাছ গাছালী হয় না সেখানেও বাসক পাতা ভালো জন্মে। যারা চাষ করছেন তাদের অনেকে বলেছেন, বাসক পাতা ছেচে রস বের করে খেলে সর্দি-কাশি ভালো হয়।
ভেষজ ঔষধি গুণে গুণান্বিত এই বাসক পাতার চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কালিকাপুর, চন্দ্রকোণা, পূর্ব বারোমারি গ্রামগুলোতে। এইসব গ্রামের সাধারণ কৃষকেরা বাড়ির কোন অংশ পতিত না রেখে স্থানুপযোগী গাছ গাছালী রোপণ করছেন যার মধ্যে বাসক অন্যতম। বৃহৎ পরিসরে চাষ করতে পারলে আরো লাভবান হতে পারতেন বলে জানান তারা।