পরিশ্রমী মল্লিকা বেবির সাফল্যগাঁথা
রাজশাহী থেকে আয়েশা তাবাস্সুম
‘পড়ালিখা জানিনা নিজের নামই ঠিক মতো লিখতে পারিনা আমি। এই আমি উপার্জন করতে পারবো কল্পনাই করতে পারিনি।’
উপরোক্ত কথাটি বলেছেন রাজশাহীর তানোরের বাসিন্দা মল্লিকা বেবি। মল্লিকা বেবি জন্মগ্রহণ করেন চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমনুরা থানায়, যদিও বর্তমানে তিনি তানোরেই থাকেন। ৬ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। অভাবের সংসারে তিনবেলা খাবারই যেখানে জোটেনা সেখানে আবার পড়াশোনা? তার কাছে এ যেন আকাশ কুসুম কল্পনার শামিল।
অনেকে দরিদ্র পরিবারে জন্মালেও তাদের একাগ্রতা, মেধা, মননশীলতা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্যের চুড়ায় পৌছেন এবং নিজের ভাগ্য নিজেরাই লিখেন নেন। মল্লিকা বিবি এসব মানুষের মধ্যে একজন। তিনি বরাবরই চাইতেন না পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে। সবসময়ই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।
তাই ২০০০ সালে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে তিনি পাড়ি জমান স্বপ্নের শহর ঢাকাতে এবং একটি গার্মেন্টসে কাজ নেন এবং সেখানেই তার সেলাইয়ের হাতেখড়ি হয়। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে তিনি গামেন্টসে চাকরি করেন। এরপর চাকুরি ছেড়ে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন এবং তার বিয়ে হয় আরেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. শরীফ আলীর সাথে। প্রথমে তাদের সংসারে নানান অভাব-অনটন থাকলেও তা নিয়ে তিনি খুব বেশি বিচলিত হননি। তিনি স্বপ্ন দেখেন তাঁর পরিবারকে সচ্ছলতার মুখ দেখানোর। তাই তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি ২০০৫ সালে ঋণ নিয়ে পায়ে চালানো সেলাই মেসিন কিনেন এবং শুরু করেন তার স্বপ্নযাত্রা।
প্রথমে তিনি অল্প অল্প করে শুরু করেন ওর্ডার নিতে। তবে এই অল্প অল্প থেকেই তাঁর কাজ দ্রুত সবার মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে তিনি নারী, শিশু ও পুরুষদের সব ধরনের পোশাকের অর্ডার নেন। এখন পাশ্ববর্তী ৩-৪ টা গ্রামের মানুষ তাদের পোশাক বানানোর নির্ভরযোগ্য স্থানই হচ্ছে এই মল্লিকা বিবি। ইতিমধ্যে তিনি ১০০ জন নারীকে টেইলারিং শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি তার এই টেইলারিং করে মাসে ৪-৮ হাজার টাকা আয় করেন। তাঁর এই আয় দিয়ে তিনি তাঁর সংসার ও সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। এছাড়া তিনি একটি গরুও কিনেছেন। তাঁর আশা, এভাবে তিনি তাঁর স্বপ্নযাত্রাতে সফল হবেন। মল্লিকা বেবির সাফল্য দেখে গ্রামের অনেক নারী ও কিশোরীরা টেইলারিং শিক্ষা নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি তার টেইলারিং আর হাতের কাজ নিয়ে আরও সামনে এগিয়ে যেতে চান।।।