দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে দিনে দিনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে

শ্যামনগর,সাতক্ষীরা থেকে ফজলুলহক
সাতক্ষীরাজেলার শ্যামনগর উপজেলাটি উপকূলবর্তী হওয়ার প্রতিনিয়ন প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতবিক্ষত। বিশেষ করে বুড়িগোয়ালিনী, পদ্মপুকুর, গাবুরা ও মুন্সিগঞ্চ ইউনিয়নগুলো অন্যতম। কখনো ঘূর্ণিঝড়, কখনো জলোচ্ছ্বাস, কখনো নদীর বাঁধ ভাঙন লেগেই থাকে। এই দুর্যোগগুলোর কারণে মানুষের জানমাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে সরকারী-বেসরকারিভাবে মানুষের জানমালের ক্ষতি যাতে না হয়, দুর্যোগের ঝুঁকি যাতে কমিয়ে আনা যায় এমন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকও দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে উপকূলীয় অঞ্চলে। বারসিক প্রতিনিয়ত দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সভা, প্রশিক্ষণ, উঠান বৈঠক, কুইজ, রচনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা পরিচালনা করে আসছে।


গত আগস্ট ২০২১ সালে বারসিকের বাস্তবায়নে নেটজ (পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস) এর সহাযোগিতায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্পের কাজ শুধু হয় শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, পদ্মপুকুর, গাবুরা, মুন্সিগঞ্চ ইউনিয়নে। পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে চারটি ইউনিয়নে একটি করে মোট চারটি দুর্যোগ স্বেচ্ছাসেবক কমিটি করা হয়েছে যার প্রত্যক কমিটিতে পনের জন করে মোট সদস্য ষাট জন। পরিবেশ প্রকল্প থেকে প্রত্যক কমিটির সদস্যদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তিন দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যক ইউনিয়ন পরিষদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে ত্রৈমাসিক আলোচনা সভা করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক কমিটি মূলত ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে সমন্বয় করে দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে। দুর্যোগের আগে, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগের পরে কি কি করণীয়, সেগুলো প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালিয়ে যাবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রচারণার ফলাফল স্বরুপ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়িবাধ সংস্কার হলে বাঁধের পাশে বসবাসকারী মানুষ সংস্কার হওয়া বাঁধে নিজ উদ্যোগে ঘেরা দিয়ে, নিজ নিজ বাড়ির সামনে কেউ ঘাস, কেউবা গাছ লাগাচ্ছেন। এমন একটি দৃশ্য চোখে পড়লো প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চুনায়।


চুনার সমাজ সেবক আজিজুল হক বলেন, ‘দুর্যোগে প্রতিনিয়ত নদীর বেঁড়িবাঁধ ভেঙে যায়। যার ফলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঁধের পাশের মানুষগুলো। সে কারণে নিজ নিজ উদ্যোগে ঘেরা দিয়ে ঘাস ও গাছ লাগাচ্ছেন বেঁড়িবাধে যাতে সহজে বেঁড়িবাঁধ না ভাঙে। ঘাস এবং গাছের কারণে বেঁড়িবাধের মাটি শক্ত থাকে, সহজে ভাঙে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে দিনে দিনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।


বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের বুড়িগোয়ালিনীর চুনা গ্রামের শালিক সিএসও দলের সভানেত্রী তহুরা খাতুন বলেন, ‘দুর্যোগ বিষয়ে প্রতিনিয়ত গ্রুপে আলোচনা ও দুর্যোগ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রচারণায় এলাকার মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার মানুষ দুর্যোগর ঝ্ুঁকি কমাতে নিজ নিজ জায়গা থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বিশেষ করে বেঁড়িবাধের পাশে ঘাস ও গাছ লাগাচ্ছে, যাতে করে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সহজে ভেঙে না যায়। এমনিভাবে যদি মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং নিজ নিজ উদ্যোগ গ্রহণ করে,তাহলে দুর্যোগ ঝুঁকি কমবে।’

happy wheels 2

Comments