সাম্প্রতিক পোস্ট

হালদার পাড়ার একজন আলোকিত যুবক প্রদীপ হালদার

মানিকগঞ্জ থেকে আছিয়া আক্তার

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। একথা আমরা সকলেই জানি। তবে সে শিক্ষা হতে হবে সুশিক্ষা। আমরা বলতে পারি সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষা নিয়ে চলছে বাণিজ্য, মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। তবে এখনও কিছু আলোকিত মানুষ রয়েছেন যারা ভবিষ্যত প্রজন্মকে পড়ালেখার দিকে আগ্রহ, উৎসাহ ও সুশিক্ষিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। প্রদীপ হালদার তেমনই একজন আলোকিত প্রতিভাবান যুবক।


মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার, বায়রা ইউনিয়নের, বায়রা গ্রামের হালদার পাড়ার দারিদ্র পরিবারের ছেলে প্রদীপ হালদার। প্রদীপ হালদার (২৫)। বাবা কান্দুনি হালদার (৬৪)। মাতা মৃত হরিদাসি হালদার। ৫ বোনের পর জন্ম হয় প্রদীপ হালদারের। পাঁচ বোন, মা বাবাসহ পরিবারের সকলের মুখে আনন্দের হাসি। তাদের ঘর যেন আলোয় ভরে গেল প্রদীপরে জন্মের পর। তাই নাম দিল প্রদীপ। শত দরিদ্রের মাঝেও সুখেই ছিল তারা। প্রদীপ হালদারের জন্মের দেড় মাস পর হঠাৎ করে তার মা মারা যান। মা মারা যাবার পর প্রদীপের মামি, বোন, চাচাতো ভাবিরা সকলে মিলে তাকে লালন পালন করেন।


প্রদীপ হালদার ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো এবং সাংস্কৃতিমনা। তাছাড়াও খুব সুন্দর উপস্থাপনাও করতে পারেন। গানের গলাও চমৎকার। তিনি বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি (২০১০ সালে ), বায়রা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি (২০১২ সালে) আর বাংলায় অনার্স, মার্স্টাস পাশ করেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ^ বিদ্যালয় থেকে। এখন সে চাকরি যুদ্ধের পাশাপাশি বর্ণ খেলাঘর আসর এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করাসহ বিভিন্ন সামাজিক সেচ্ছাসেবামুলক কাজে নিজেকে অবিরাম ব্যস্ত রাখছেন।


প্রদীপ ছোট বেলা থেকেই নিজে যেমন পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী ছিল, তেমনি অন্যদেরও লেখাপড়ার জন্য উৎসাহ দিতেন। নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি পাড়ার ছোট ছোট ভাই বোনদের লেখাপড়ায় সাহায্য করতেন। প্রদীপ হালদার টিউশন করে যে টাকা পান তার থেকে কিছু টাকা জমিয়ে এসএসসি পরিক্ষার্থীদের উৎসাহস্বরূপ কিছু পুরুষ্কার দেন প্রতিবছর। তিনি ২০১৬ সাল থেকে শুধু হালদার পাড়ার এসএসসি পরিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরণ শুরু করেন। প্রথমদিকে নিজে এবং বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে অল্প আয়োজন করতেন। বর্তমানে তার এ কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বায়রা স্কুল, কলেজের শিক্ষক, সিংগাইর ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক (জগদীস চন্দ্র মালো) সহ তার পাড়ার বয়স্ক ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকছেন। স্কুল, কলেজের শিক্ষকরা তাকে তার এ কাজের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। প্রদীপের এ উৎসাহস্বরূপ পুরুষ্কার পেয়ে পরীক্ষার্থীরা খুব খুশি এবং ভালোভাবে পড়াশোনা করছে। হালদার পাড়ায় এখন সকল ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে। বলতে গেলে ঝরে পড়া কোনো ছেলেমেয়ে নেই হালদার পাড়ায়।


হালদার পাড়ার সকল অভিভাবক এখন ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে সচেতন। বর্তমানে হালদার পাড়ার সকল ছেলেমেয়ে স্কুলে যায় এবং ভালো ফলাফল করছে।
প্রদীপ হালদার চান শুধু তার এ হালদার পাড়া নয়, বায়রা স্কুলের সকল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পুরুষ্কার দিতে। হাতে গুনা কয়েকটা ছেলেমেয়ে নয়, তার ইচ্ছে এবং স্বপ্ন অনেক শিক্ষার্থীকে পুরষ্কার দেয়া। প্রদীপ হালদারের স্বপ্ন তিনি একজন ভালো শিক্ষক হবেন এবং সুন্দর একটি শিক্ষিত সমাজ গড়বেন।

happy wheels 2

Comments