গোলজান বিবি টিকিয়ে রেখেছেন একটি পরিবার
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
“প্রতিদিন একশ থেকে দুইশ টাকা আয় হয়, তা দিয়েই আমার সাত সদস্যের পরিবার চলে, সকাল আটটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত ময়দা দিয়ে পাপর তৈরি করি, সেগুলো শুকানোর জন্যে মাঠে যাই, বিকাল পর্যন্ত রোদে পাপর শুকাই, পরের দিন ভোর থেকে সেগুলো আবার ভাজি, সকাল আটটার মধ্যেই ভাজা শেষ করে আমার স্বামীকে তৈরি করে দেই। তিনি গ্রামে গ্রামে অথবা বিভিন্ন বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন।” কথাগুলো বলছিলেন- রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের দুবইল গ্রামের গোলজান বিবি (৪৫)।
গোলজান বিবির থাকার জায়গাও নেই, গ্রামের ছোট্ট একটি খাস জায়গাতে কোনমতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। স্বামী বয়স্ক হয়ে গেছে, সন্তান সন্ততী মিলে পরিবারে মোট সাত সদস্য। একসময় তাঁর স্বামী মানুষের জমিতে কৃষিকাজ করে আয় করতেন, কিন্তু বিগত দুবছর থেকে তিনি আর কায়িকশ্রমনির্ভর কাজ করতে পারে না। এ জন্যে তাকে কেউ কাজ দিতে চায় না। উপায়ন্তর না পেয়ে গোলজান বিবি নিজের গ্রামের জগেনের কাছ থেকে এই পাপর তৈরির কাজ শিখে নেন। প্রথমদিকে এই পাপর তৈরির কলাকৌশল শিখতেও তাঁকে বেগ পেতে হয়েছে, সহজে কেউ শিখাতে চায়নি। কারণ ভালো পাপর তৈরি করতে বিশেষ কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদেই এই কৌশল শিখতে গোলজান বিবি বদ্ধপরিকর।
অবশেষে একই গ্রামের জগেন তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ান। জগেনের কাছ থেকে পাপর তৈরির কাজ শেখার পর যাত্রা শুরু হয় গোলজান বিবির। নিজে বাড়িতে পাপর তৈরি করেন। বর্তমান তার কাঁচা পাপর নেবার জন্যে দুর দুরান্ত থেকে অনেক ব্যবসায়ী আসেন। বিশেষ করে যখন গ্রামে গঞ্জে মেলা চলে তখন এই পাপরের চাহিদাও বেড়ে যায়। গোলজান বিবির সাথে কথা বলে জানা গেল, তার পাপরে ক্ষতিকর কোন উপাদান নেই। তিনি লোকায়ত পদ্ধতিতে এই পাপর তৈরি করেন বলেই তার পাপারের চাহিদা বেশি। গোলজান বিবি বলেন, “বাড়িতে বসে থেকেই এই পাপড় তৈরি করে অনেকে সংসার চালাতে পারে। আমি কেউ শিখতে চাইলে শেখাবো। গোলজান বিবি সময় পেলেই কাপড়ে এমব্রয়ডারির কাজ করেন। নানা রকম বাহাড়ি ডিজাইন জানেন গেলজান বিবি। এখান কাপড়ে হাতের সুচ দিয়ে ডিজাইন করেও তিনি টাকা উপার্জন করেন।
গোলজান বিবির এই কাজ আগ্রহী অন্য নারীরাও শিখে নিয়ে সংসারে নিজেকে গোলজান বিবির মত ভূমিকা পালন করতে পারেন। একই সাথে আর্থিক এবং সামাজিক মর্যাদার জায়গায় নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন।