কৃষকের অধিকার আদায়ে দরকার শক্তিশালী কৃষক সংগঠন

সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
‘গত দুই দশকে কৃষকের উৎপাদিত ধান চাল ও সবজির দাম বাড়লেও সেই কখনোই কৃষকের কাছে পৌঁছেনি। ধান, চাল সবজির বাড়তি দামের সুফল পায়নি কোন প্রান্তিক ভঝমিহীন কৃষক। ধান ব্যবসায়ী, চাল ও কল মালিক এবং চাল ব্যবসায়ীদের মতো মধ্যস্বত্ব ভোগীরা এই সুবিধা পেয়ে থাকে নিয়মিত। এতে দিনকে দিন ভূমিহীন প্রান্তিক কৃষকের অবস্থা নাজুক হয়। ব্যবসায়ীরা হয় শক্তিশালী আর কৃষক হন বঞ্চিত। এই কারণে দিনে দিনে ধান চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন কৃষক। এ ক্ষেত্রে ধান চাষকে লাভজনক না করতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত হবে এবং খাদ্য সংকট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তাই কৃষকে ও ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎসাহ তৈরি করতে হলে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যয় কমিয়ে কৃষিপণ্যের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিতে ভর্তূকির পরিমাণ বাড়িয়ে প্রকৃত কৃষকদের নিকট সরকারি কৃষি প্রণোদোনা পৌছে দিতে হবে। দুর্যোগকালিন শস্যবিমা চালু করার পাশাপাশি কৃষি ঋণ কৃষকের জন্য সহজলভ্য করতে হবে।’


সম্প্রতি বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন বক্তারা। বারসিক কর্মকর্তা শাহীনুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল লতিফ।
আলোচনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি ও কৃষিতে অভিজ্ঞ প্রবীণ কৃষক মো. এ কে এম করম আলী মাস্টার বলেন, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্য। আর সেই খাদ্য উৎপাদন করছেন কৃষক। কৃষিনির্ভর দেশে কৃষিই একমাত্র মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করছে। খাদ্যশস্য উৎপাদন ছাড়া দেশের অর্থনীতি সৃমদ্ধ হবে না। নানা দুর্যোগেও আমাদের কৃষকরা কৃষি পেশা ছাড়েননি। করোনা ভাইরাসে সবাই ঘরবন্ধী থাকলেও খাদ্য সংকট নিরসনে কৃষকরা মাঠে লড়াই করেছেন। কিন্তু অধিকার ও মর্যাদায় কৃষকরা সব থেকে পিছিয়ে। কৃষকের অধিকার আদয়ের জন্য শক্তিশালী সংগঠন খুবই কম। কৃষকের অধিকার আদায়ের জন্য এরকম শক্তিশালী দরকার।’


আলোচনায় মো. হযরত আলী বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষিতে ভূমিহীন প্রান্তিক বর্গা চাষীরাই বেশি। দেশের খাদ্য চাহিদার বেশির ভাগ অংশই তাঁরা পূরণ করেন। কিন্তু কৃষিপণ্য উৎপাদনের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি, বর্গা বা লিজকৃত জমির অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত নানা সংকট বর্গা চাষীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।’
আলোচনায় সেলিনা খাতুন বলেন, ‘কৃষিতে নারীর অধিকার এখনো স্বীকৃতি হয়নি। একজন নারী পরিবারের সকল কাজ সামলিয়ে কৃষি কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। কিন্তু একজন নারীর নিজস্ব কৃষি কার্ড না থাকার কারণে নিজেকে কখনো কৃষক হিসেবে দাবি করতে পারেন না। নারী কৃষকের স্বীকৃতি ও কৃষি শ্রমের মজুরি বৈষম্য নারীর অধিকারকে ক্ষুন্ন করছে।’


উল্লেখ্য, আলোচনা আরো অংশগ্রহণ করেন কোষাধ্যক্ষ সুভাষ মন্ডল, সদস্য সেলিনা খাতুন, মনোয়ারা বেগম, কৃষক মো. দারোগ আলী শিকদার, আব্দুল আলীম, মো. ফরহাদ হোসেন ও বারসিক কর্মকর্তা গাজী শাহাদাত হোসেন বাদল।

happy wheels 2

Comments