বীজ সংরক্ষণ করা থাকলে দুর্যোগ মোকাবেলা করা যায়
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের ব্রী-কালিয়াকৈর নয়াপাড়া কৃষক কৃষাণি সংগঠনে বীজের বাজার নির্ভরশীলতা হ্রাস, কৃষকের দুর্যোগকালিন বীজ সংকট নিরসন, স্থানীয় জাতের বীজ ব্যবহার বৃদ্ধিতে সংগঠনের সহ-সভাপতি রমেলা বেগমের সভাপতিত্বে স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের উপর কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি।
বারসিক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান ও ব্রী-কালিয়াকৈর নয়াপাড়া কৃষক কৃষাণী সংগঠনের সভাপতি ও অভিজ্ঞ কৃষক মোঃ হযরত আলী সহায়ক হিসেবে প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করেন। প্রশিক্ষণে সংগঠনের ৩২ জন কৃষক কৃষাণি অংশগ্রহণ করেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/09/IMG_20220907_162457-1024x472.jpg)
প্রশিক্ষণে স্থানীয় বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বারসিক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ফসল উৎপাদনে বীজ যত মানসম্মত হয় গাছ ততবেশি পরিপুষ্ট হয়, ফলনও ভালো হয়। ভালো মানসম্মত বীজ যতটুকু না উৎপাদন কৌশলের ওপর নির্ভর করে তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে যথাযথ পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণের ওপর। বীজ সংরক্ষণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল বীজের গুণগত মান রক্ষা করা এবং যেসব বিষয় বীজকে ক্ষতি করতে পারে সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক হওয়া প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফসলের বীজ যদি সুস্থ সবল হয় তাহলে ফসল সুস্থ সবল হবে। আর সুস্থ সবল ফসল ফলে কৃষকরা লাভবান হবেন। এ কারণেই কৃষকদের জন্যই বীজ সংরক্ষণ খুবই প্রয়োজন।’ তিনি জানান,বীজ শুকানোর অর্থ হচ্ছে বীজ থেকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা সরিয়ে ফেলা এবং বীজ সুস্থ থাকার জন্য যে পরিমাণ আর্দ্রতা দরকার সেই পরিমাণ আর্দ্রতায় আনা। আর্দ্রতার মাত্রা ১২-১৩% হলে ভালো হয়। বীজ শুকাতে হবে রোদে বা সূর্র্যের তাপে। এই আদ্রতা ১২-১৩ শতাংশ নামাতে বীজগুলোকে প্রায় তিন দিন প্রখর রোদে শুকাতে হবে।
কৃষক হযরত আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে বীজ সংরক্ষণের অনেক পদ্ধতি আছে। এক এক ফসলের বীজ এর জন্য এক এক রকম পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়ে থাকে আমাদের দেশে। যেমন দানা জাতীয় শস্য-ধান, গম, ভুট্টার বীজ সংরক্ষণের জন্য ধানগোলা, ডোল মাটির পাত্র, কৌটা, বোতল, চটের বস্তা, পলিব্যাগ ও বেড ব্যবহার করা হয়। আবার, বীজ ঠিকমতো শুকিয়েছে কিনা তা বীজে কামড় দিয়ে পরখ করে দেখতে হয়। বীজে কামড় দেওয়ার পর যদি ‘কট’করে আওয়াজ হয় তবে মনে করতে হবে বীজ ভালোভাবে শুকিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এরপর বীজগুলোকে চটের বস্তায় নিয়ে গোলা করে রাখতে হবে। বীজ পোকার উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য বীজের বস্তায় নিমের পাতা, মেহগনির গোটার গুড়া, নিমের শিকড় ও বিশকাটালী ইত্যাদি মিশিয়ে রাখলে বীজের গুণগত মান ঠিক থাকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বীজ সংরক্ষণ প্রশিক্ষণ মূল্যায়নে কৃষক সামুদ্দিন মিয়া বলেন, ‘বীজ সংরক্ষণ করা থাকলে দুর্যোগ মোকাবেলা করা যায়। বীজ ঘরে থাকলে যে কোন সময়ই জমিতে চাষ বপন করা যায়, বাজারের উপর নির্ভর করতে হয় না। আর এই বীজ সংরক্ষণে কৃষকের অভিজ্ঞতাকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।’
নিজ নিজ অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই যুগ যুগ ধরে বীজ সংরক্ষণ করে আসছেন গ্রামের কৃষক কৃষাণিরা। আবার অনেকেই বীজ সংরক্ষণের কৌশলের সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যবহার করেন বাজারের বীজ। তাছাড়া কৃষকের কাছে পর্যাপ্ত বীজ সংরক্ষণ না থাকার ফলে দুর্যোগকালিন বীজ সংকটে পড়তে হয় কৃষককে। এই সংকট দূর করতে হলে প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে বীজ রাখার চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে।