বরেন্দ্র অঞ্চলের নতুন সম্ভাবনা আখ
বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
যতদূর চোখ যায় উঁচু নিচু সিড়ির মত জমিতে শুধু ধান আর ধান। আবার শুধু আলু আর আলু। আবার কিছু জমিতে বৃষ্টিনির্ভর আমন ব্যতিত অন্য কোন ফসল হয় না বলে জমিগুলো মৌসুমি পতিত থাকে। কারণ ফসল চাষে প্রচুর পরিমাণে পানি সংকট। এ সংকট দিন দিন আরো মারাত্মক আকার ধারণ করছে। কারণ পানির স্তর দিন দিন আরো নিচে নেমে যাচ্ছে। ডিপ টিউবওয়েল দিয়েও পানি পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
উক্ত সমস্যা বিেিবচনায় নিয়ে কৃষকরা নিয়ে এসেছেন চাষের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের আভাস। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ফসল নিয়ে করে চলেছেন নিজেদের মত গবেষণার কাজ। তেমনই একটি উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামের কৃষক মো. গোলাম মোস্তফা। তিনি তাঁর নিজের ৭৫ শতাংশ জমিতে বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে চিবিয়ে খাওয়ার জাত বাবুলাল, অমৃত ও মিশ্রীমালা জাতের বীজ আখ সংগ্রহ করে রোপণ করেন।
গত বছরের অক্টোবর মাসে বীজ আখ সংগ্রহ করে একটি স্যাঁতসেতে জমিতে আখগুলো রেখে অংকুর গজিয়ে নিয়ে এরপর সেগুলো মূল জমিতে রোপণ করা হয়। যেহেতেু আখ পরিপক্ক হতে এক বছর সময় প্রয়োজন হয়। তাই সে জমিতে সাথী ফসল হিসেবে কালোজিরা ও ধনিয়া রোপণ করে বাড়ি ফসল হিসেবে সে জমি থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করেন। এরপর চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে আখগুলো পরিপক্ক হতে থাকে।
আখ চাষ সম্পর্কে কৃষক মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ধান ও আলুতে প্রচুর পরিমাণে পানি সেচের প্রয়োজন হয়। তাই ফসল চাষে পানি কমানোর জন্য আমি আখ চাষের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করি।’ চাষাবাদ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা চাষ করা সহজ। বীজ করে নিয়ে মূল জমিতে রোপণ করতে হয় ৩-৪ বার সেচ দিলেই চলে। পরিমাণমত সার দিয়ে জমি পরিষ্কার রাখলে তেমন রোগবালাই আক্রমণ করে না। আমার আখ চাষের ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। আমি এগুলো পাইকারি হিসেবে বিক্রয় করেছি ৫০ হাজার টাকা বিঘা। তবে এর সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে একবার রোপণ করলে তিনবছর মুরি ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। তখন খরচ অনেক কম হয়। বিঘা প্রতি মাত্র ৮-১০ হাজার টাকা।’
দুবইল গ্রামের অনান্য কৃষক আগচাষের সুবিধা দেখে নিজের জমিতে চাষ করার জন্য এখনই চাহিদা জানাতে শুরু করেছেন। আগামী বছর গ্রামের অনেক জমিতেই এই আখ চাষ করবেন বলে অনেক কৃষক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।