মতিরাম সাধুর মডেল শত বাড়ি: এক সফলতার গল্প
রাজশাহী থেকে উত্তম কুমার
রাজশাহী জেলার তানোর থানার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা মতি রাম সাধু (৪৫)। তথ্য সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪। মতি রামের পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিনজন—তিনি ও তার দুই সহধর্মিণী। তবে ভাগ্যের পরিহাসে তারা সন্তানের মুখ দেখতে পারেননি। একসময় তাদের পরিবারিক আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল ছিল। কিন্তু এখন তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে অনেকটাই সচ্ছল।
মতিরাম সাধুর পেশা কৃষি। চার-পাঁচ বছর আগেও তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আর্থিক সংকটের পাশাপাশি সামাজিক অবস্থানও ভালো ছিল না। ২০২১ সালে মতি রামের সঙ্গে বারসিকের পরিচয় ঘটে। তার বাড়ির পাশে এবং পুকুরপাড়ে অনেক পরিত্যক্ত জমি ছিল। সেই জমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেও সফলতা আসত না। কারণ সবকিছু—চারা, সার, কীটনাশক—বাজার থেকে কিনতে হতো, কিন্তু ফলন ভালো না হওয়ায় তারা আর্থিক সংকটে পড়তেন।
বারসিক নিয়মিত মতি রাম সাধুকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে থাকে। ছায়াযুক্ত জায়গায় উপযোগী ফসল রোপণ করা, জৈব বালাইনাশক তৈরি করা, কেঁচো সার তৈরি—এসব বিষয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাজারনির্ভর না হয়ে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিয়মিত চেষ্টা চালানো হয়। তার পরিশ্রম ও বারসিকের সহযোগিতায় আজ তার বাড়ি মডেল শত বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
মতিরাম সাধুর বাড়ির ছায়াযুক্ত জায়গায় বস্তায় আদা রয়েছে প্রায় ২০০ বস্তা এবং ওল ১৫০ বস্তা। বারসিক থেকে দেওয়া কেঁচো চাষের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ ব্যবহার করে তিনি নিজেই ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করেন। তার নিজের সবজি বাগানে যা সার লাগে তা এখান থেকেই সংগ্রহ করেন। নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার প্রতিমাসে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন, যা থেকে প্রায় তিন হাজার টাকা আয় হয়। এখন আর বাজার থেকে কোনো সার বা কীটনাশক কিনতে হয় না।
এছাড়াও, তার সবজি বাগানে রোপণকৃত সবজির বীজ নিজে সংগ্রহ করেন, যাতে ভবিষ্যতে বাজার থেকে কিনতে না হয়। মতি রাম সাধু ও তার দুই সহধর্মিণীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং কৃষির প্রতি তাদের গভীর জ্ঞান ও আগ্রহের ফলেই তারা আর্থিক ও সামাজিক সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছেন।