এখনও ভালো আছেন শতবর্ষী লেবিং নকরেক
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে মুন্না রংদী
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের লেবিং নকরেক। তিনি তারানগর গ্রামের একজন অধিবাসী। জন্মগ্রহণ করেন নলছাপ্রা গ্রামে। জাতিগোষ্ঠীগত পরিচয় তিনি একজন গারো জাতীগোষ্ঠী। বিবাহের সূত্রে বর্তমানে তারানগর গ্রামে বসবাস করেন। কিন্তু কত সালে তিনি জন্মলাভ করেন তার সঠিক হিসাব জানা সম্ভব হয়নি। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১২-১৩ বছর বয়সী যুবক ছিলেন বলে তিনি জানান। সে সময় তিনি মাঠে গরু মহিষ চড়াতেন। সে হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে তার আনুমানিক বয়স প্রায় ১২০ বছর।
লেবিং নকরেক ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড় সন্তান। এক ভাই এক ও বোন মারা গেছেন। এক বোন প্রহনী নকরেক এখনো জীবিত আছেন। তার বয়সও প্রায় ১০০ কাছাকাছি বলে জানান তিনি। তাঁর ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে বর্তমানে আছে ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে। কারণ এক ছেলে ও এক মেয়ে অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন। তার স্ত্রীও অসুস্থতার কারণে ১৯৭৫ সালের ২০ আগষ্ট মারা গেছেন । তখন তার ছোট মেয়ের বয়স দেড় বছর। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে ছেলে মেয়েদের বড় করতে।
লেবিং নকরেক কঠোর পরিশ্রম করেছেন জীবনে। দিন মজুর হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে তাকে। তার কষ্টের দিন এখন শেষ। ছেলে মেয়ে ও নাতী নাতনীরা এখন ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করছেন। বাড়িতে অনেক বড় ৩টি ঘর করেছেন। সেখানেই থাকেন তিনি। জমি জমাও করেছেন চলার মত। সব মিলিয়ে এখন তিনি ভালো আছেন বা সুখে আছেন।
সুখে থাকলেও এখনো সুস্থ থাকার জন্য এমন বৃদ্ধ বয়সেও তিনি বসে থাকেন না। এখনো পরিবারের বিভিন্ন কাজ কর্ম করে থাকেন। নিজের সাধ্যমত যেমন গরু, ছাগল, হাস মুরগি পালন করেন। এসব পশুসম্পদের দেখশুনা করা, গরুর জন্য ঘাস কাটা, খড় কাটা ও বাড়ির আঙ্গিনায় শাকসব্জি চাষ করা সবই তিনি এখনো নিজ হাতে করেন। মৌসুমভিত্তিক সব্জি চাষ করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা ও প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করা ও বিক্রি করা সবই তিনি করেন। সারাদিন এই কাজ সেই কাজ করে তার দিন শেষ হয়ে যায়। কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে তিনি ভালবাসেন। কাজ করলে নাকি তার শরীর ভালো থাকে। কাজ না করলে অসুস্থবোধ করেন বলে তিনি জানান। তিনি মনে করেন, প্রতিদিন নিজেকে বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত করার কারণেই তিনি এখনও সুস্থ আছেন। কৃষি কাজ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষি করতাম গোবর দিয়ে। তখন কোন সার ছিল না, মাটির সাথে গোবর মিশিয়ে শাকসব্জি চাষ করতাম। ভালো ফলনও হতো।আর এখনতো সার না দিলে সব্জিই ভালো হয় না।’
গত ৩ বছর যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছেন। অথচ বয়স্ক ভাতা আরো আগে থেকেই পাওয়া কথা ছিল তাঁর। লেবিং নকরেক যথেষ্ট স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার জন্য তিনি শারীরিক পরিশ্রম যেমন করেন ঠিক তেমনি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের দিকেও সমান গুরুত্ব দেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তিনি মাস্ক ছাড়া কোথাও বের হন না। এমনকি গরু চাড়াতে গেলেও মাস্ক পড়ে গরু ছাগল চড়াতে যান। তার এই সচেতনতা অন্যদেরকেও সচেতন করছেন।