খরা তহবিল ও জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে রাজশাহীতে গণপদযাত্রা অনুষ্ঠিত
প্রেস বিজ্ঞপ্তি (রাজশাহী)
জলবায়ু গণপদযাত্রা থেকে আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন (কপ-২৮) এ ধনী দেশুগলোর প্রতি খরা পীড়িত বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য খরা তহবিল ও জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি জানানো হয়েছে। একইসাথে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সীমিত করতে সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধের চুক্তি ও বাস্তবায়ন কারার সিদ্ধান্ত নিতে জোর দাবি জানান।
আজ (২১ নভেম্বর ২০২৩) রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম’র আয়োজিত জলবায়ু গণ-পদযাত্রাতে এ দাবি জানানো হয়।
জলবায়ু পদ যাত্রাটি রাজশাহীর জিরোপয়েন্ট থেকে মনিচত্বর কুমরাপাড়া হয়ে প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে বড়কুঠি মুক্ত মঞ্চে এসে সংক্ষিপ্ত সভার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সেভ দ্যা নেচার এন্ড লাইফ সোসাইটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী, উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এর গবেষক মো: শহিদুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবুসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম এর প্রচার ও প্রচারণা সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক।
পদযাত্রায় বলা হয়, জলবায়ু পরির্বতনের জন্য ধনী দেশগুলো বেশি দায়ী হলেও এর ক্ষতির শিকার হয় গরীব দেশগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলো আঞ্চলিক সংকট তৈরি করছে। বাংলাদেশর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা, অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপদাহ এই জনপদকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। খরার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে পানির অভাব তীব্রতর হয়েছে। রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিজমি কমে যাওয়াসহ, বাস্তুতন্ত্রের ব্যাঘাত ও মানুষের আর্থ-সামজিকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। খরার কারণে প্রান্তিক মানুষের আত্মকর্মসংস্থান কমেছে। কাজ ও নিরাপদ জীবনের আশায় গ্রাম ছেড়ে মানুষ শহরে ছুটছে। কিন্তু সেখানেও এই মানুষগুলো নানা অধিকার ও সেবা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। এই অঞ্চলে খরা ও পানি সংকটের কারণে সামাজিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক পানির জন্য আত্মহত্যা করছে। সার্বিকভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে খরার নেতিবাচক প্রভাব বহুমাত্রিক আকারে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু খরার ব্যাপ্তি ও বিপর্যয় বিবেচনায় নিয়ে উপরের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের বিশ্লেষণ করলেও এখনো অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় খরা বিষয়ে অগ্রগতির মনোযোগ দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরা ও দুর্যোগের এই আর্তচিৎকার দেশ হতে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণী মঞ্চে আলোচনা, সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং এই জনপদের খরা দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশেষ তহবিল গঠন করা এখন সময়ের দাবি।
জলবায়ু পদ-যাত্রায় শুভেচ্ছা বক্তব্য তুলে ধরেন বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক সাবিত্রী হেমব্রম। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও খরার কারণে আদিবাসীদের সমস্যা বেশি হচ্ছে। পানির সংকট বেশি হচ্ছে। পানির জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলে আদিবাসী কৃষক আত্মহত্যা করেছে।’ পানির জন্য সুশাসন বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
মূল ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম এর সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো আসছে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে এবার বৈশ্বিক নেতা ও নীতিনির্ধারণীদের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন (কপ) ‘কপ-২৮’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে।’ দুবাই ‘কপ-২৮’ সম্মেলনের উদ্দেশ্যে দেশের নীতিনির্ধারণী এবং বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন মঞ্চের কাছে তিনি জলবায়ু গণপদযাত্রা থেকে ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন। ৫ দফা দাবি গুলো হলো:
১. ‘কপ-২৮’ জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরা দুর্যোগ,পানি সংকট সমাধানসহ ও বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু ন্যায্যতায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
২.বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত জলবায়ু তহবিল ছাড়ের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ধনী দেশগুলোর শুধু আশ্বাস নয়, প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল দ্রুত ছাড় দিতে হবে।
৩. খরা মোকাবলোয় বরেন্দ্র অঞ্চলে জরুরিভিত্তিতে পানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য পৃথক ‘খরা ও জলবায়ু তহবিল’ গঠন করাসহ ‘খরা ভাতা’ চালু করতে হবে।
৫. বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সীমিত করতে আসন্ন ‘কপ-২৮’ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।