সাম্প্রতিক পোস্ট

নিরাপদ মাতৃত্বে ধাত্রীমাতার দক্ষতা উন্নয়ন করা জরুরি

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে বিউটি সরকার

বর্তমান বিশে^ মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু । প্রচলিতভাবে বলা হয়ে থাকে এ সবই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অবদান। তথাপি মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে ধাত্রীমাতার অবদানকে একেবারে অস্বীকার করা যায় না। কারণ একজন ধাত্রীমাতা প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন নারীদের প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, উপদেশ প্রদান করার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে পারেন নিরাপদ মাতৃত্ব। পালন করতে পারেন মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা। তবে অনেক সময় ধাত্রীমাতার অজ্ঞতা মা ও শিশুর জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সে ক্ষেত্রে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে ধাত্রীমাতাদের দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই।

এ উপলব্ধি থেকেই সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার জামালপুর মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক কৃষাণি সংগঠন ও বারসিক’র যৌথ উদ্যোগে ধাত্রীমাতার দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত প্রশিক্ষণে নয়াবাড়ি, নয়াবাড়ি আদর্শগ্রাম, গাড়াদিয়া, বায়রা ও জামালপুর গ্রামের ১৮ জন ধাত্রীসহ মোট ৪০জন নারী অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করেন পরিবার কল্যাণ সহকারী খালেদা আক্তার।

20180813_162046

নাগরিক হিসাবে গর্ভকালীন ও সন্তান জন্মদানের সময় প্রত্যেক নারীর মাতৃ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশে প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। কারণ পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে প্রতি ৬ হাজার ৫৭৯ জনের জন্য এক জন ডাক্তার রয়েছে। যা জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই মা ও শিশু মৃত্যুর হার প্রতিরোধের কৌশল হিসাবে প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

গ্রামীণ জীবনে এখনো আতুর ঘরের ব্যবস্থা আছে। আর সেই ঘরটা সাধারণত সবচেয়ে ছোট এবং স্বাস্থ্যগতভাবে অনিরাপদ। মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো সন্তান। সেই শ্রেষ্ঠ সম্পদ সন্তানের আগমন উপলক্ষে চমৎকার না হলেও স্বাস্থ্য সম্মত একটা অবশ্যই থাকতে হবে। প্রসবকালীন আপদ বিপদের জন্য পরিবারের সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে এলাকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিতে হবে মাকে। সন্তানের স্বার্থেই মাকে সুস্থ রাখা অনিবার্য। নিছক অচল পয়সার মতো সংস্কারের মায়ায় মা ও সন্তানকে কিছুতেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না।

আমাদের দেশে প্রতিবছর অন্তত ২৪ লাখ নারী ঘরেই সন্তানের জন্ম দেন আধুনিক ব্যবস্থা ছাড়াই। এ ভাবে সচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু। বড় শহরগুলোর বাইরে অদক্ষ ধাত্রীর হাতে পড়ে প্রতিবছর বহু নারী প্রসবকালীন সময়ে মারা যায়। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় রক্তক্ষরণ, প্রসব পরবর্তী জটিলতা এবং অস্বাস্থ্যকর আতুর ঘরে প্রসবের কারণে ২৫ শতাংশ প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। বর্তমানে ৮৫ শতাংশেরও বেশি প্রসব হয় অদক্ষ ধাত্রীর হাতে।

এই প্রসঙ্গে পরিবার কল্যাণ সহকারী খালেদা আক্তার বলেন, “সাধারণত গর্ভবতী মাকে গর্ভকালীন সময়ে ৪ বার ডাক্তার দেখানোর নিয়ম। তাছাড়া মেটারনাল অ্যান্ড নিওটেনাল টিটেনাস (এমএনটি) যাতে না হয় তার জন্য নিয়মিত টি.টি টিকা প্রদান করা বাধ্যতামুলক। প্রসূতি মায়ের কোন ধরনের সমস্যা হলে প্রাথমিকভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিতে হবে এবং বড় সমস্যা হলে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।” তিনি ধাত্রীমাতাদের নিজ হাতে সন্তান প্রসবে নিরুৎসাহিত করেন। তথাপি যদি কোন দক্ষধাত্রী নিজ হাতে প্রসব করাতে চান তাহলে তার করণীয় দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, “প্রসবের সময় অবশ্যই প্রসূতি মাকে আলোতে রাখতে হবে। স্যাতস্যাতে জায়গায় প্রসব করানো যাবে না। টিটেনাসের জীবাণু বেশি থাকতে পারে। প্রসব করানোর সময় হাতে গ্লাবস পড়ে নিতে হবে। নারী কাটার সময় বিশেষ যত্ন সহকারে ও নিয়ম মাফিক কাজ করতে হবে।”

মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর স্বীকৃতিও মিলেছে। তথাপি এখনো বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জন শিশু জন্মের ১ মাসের মধ্যে ২০.১ জন মারা যাওয়াটাও কষ্টদায়ক। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ প্রসূতির মধ্যে ৩২০ জনের মৃত্যু হয় প্রসব, প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিচুনীসহ নানা উপসর্গের কারণে। তাই দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং মা ও শিশু মৃত্যুর হার রোধে পারিবারিক সচেতনতা ও ধাত্রীমাতাদের দক্ষতা উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করা অত্যন্ত জরুরি।

happy wheels 2

Comments