অচাষকৃত উদ্ভিদ টিকে থাকলে সংস্কৃতিও রক্ষা পাবে

মানিকগঞ্জ থেকে শ্যাময়েল হাসদা ও গাজী শাহাদাত হোসেন
‘প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করি, অচাষকৃত উদ্ভিদের বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করি’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের দক্ষিণ হাট বড়িয়াল গ্রামে মণি ঋষিপাড়ায় কৃষক-কৃষাণীর আয়োজনে ও বারসিক’র সহযোগিতায় সম্প্রতি অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলা ও বসতবাড়িতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।


পাড়া মেলায় ঢেকিশাক হেলেঞ্চা, কাটানটা, হেলেঞ্চা, সেচি, চৈতা, হেচি, কলমি শাক, দুধশাক, কচুশাক, চিনিগুড়া, খারকুন, পিপল, দন্ডকলস, পাথরকুচি, তেলাকুচা, কানাই শাক, বউটুনি, বেউথা, ওলট কম্বল, বাসক, জংলা কচু ও হাতিশুরা শাকসহ এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা ২৫ ধরনের অচাষকৃত উদ্ভিদ প্রদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ হাট বড়িয়াল গ্রামের প্রবীণ কৃষক মোঃ বাবর আলী। উক্ত কর্মসূচিতে অচাষকৃত উদ্ভিদের গুনাগুণ, এর ব্যবহার এবং সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।


আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন, বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য ফাতেমা বেগম, হাট বড়িয়াল গ্রামের কৃষক দবির উদ্দিন, বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, বারসিক সহযোগী প্রোগ্রাম অফিসার সুবির কুমার সরকার, গাজী শাহাদাত হোসেন বাদল, সহযোগী গবেষণা কর্মকর্তা শ্যাময়েল হাসদা। এছাড়াও উক্ত গ্রামের কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষার্থী ও মনিঋণি সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ।
আলোচনায় কৃষাণী আলোমতি রানী দাস বলেন, ‘অচাষকৃত উদ্ভিদ আমাদের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। বাংলা বৈশাখ মাসে ১৩ তারিখে, আমরা ১৩ পদের শাক একত্রে করে রান্না খায়। এটা বাঙালিদের সংস্কৃতি এটা সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। অচাষকৃত উদ্ভিদ টিকে থাকলে সংস্কৃতি রক্ষা পাবে।’
ইউপি সদস্য ফাতেমা বেগম বলেন, ‘অচাষকৃত শাকসবজি আমাদের বাড়ি আশেপাশে, জমির আইলে, রাস্তার ধারে জন্মে যেগুলো আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। যেগুলোতে কোন ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার হয় না। তাই এই অচাষতৃত খাবারগুলো আমাদের খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই অচাষকৃত উদ্ভিদ কিনতেও হয় না। শুধু জানা থাকলেই তুলে এনে রান্না করে খাওয়া যায়।’ এছাড়াও তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সেবা পরিসেবা বিষয়ে আলোচনা করেন। হাটবড়িয়াল গ্রামের কৃষক হরিপদ মনিদাসের বয়স্ক ভাতা প্রদানে প্রতিশ্রুতি দেন।


বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন,‘অচাষকৃত উদ্ভিদ আমাদের অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে অথচ অচাষকৃত উদ্ভিদ পুষ্টিগুণে ভরা, ঔষুধি হিসাবে ব্যবহার এবং পরিবেশবান্ধব। অচাষকৃত উদ্ভিদ কিনতে আমাদের টাকাও লাগে না। তাই নিরাপদ খাদ্য হিসাবে পুষ্টি চাহিদা পূরণে অচাষকৃত উদ্ভিদের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং বসতবাড়িতে সবজি, ফলজ, বনজ ও ঔষুধি গাছ রোপণে আহ্বান জানান।


এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই বারসিক কর্মকর্তা সুবীর কুমার সরকার অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলা আয়োজনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও অচাষকৃত উদ্ভিদের ব্যবহার ও গুনাগুণ সম্পর্কে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অচাষকৃত উদ্ভিদ আমাদের যেমন পুষ্টি চাহিদা মেটায় তেমনি ঔষুধি হিসাবে ব্যবহার হয়। এই অচাষকৃত উদ্ভিদগুলো আমাদের চিনতে হবে, কোনটি সবজি হিসাবে ব্যবহার হয় এবং কোনটি ঔষুধি হিসাবে ব্যবহার হয়। অচাষকৃত উদ্ভিদ সম্পর্কে আমাদের তরুন প্রজন্মকে চেনাতে হবে জানাতে হবে এবং এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে বলতে হবে।’
আলোচনা শেষে অংশগ্রহণকারী কৃষক-কৃষাণীরা তাদের বসতবাড়িতে ১২০টি পেয়ারা ও লেবুর চারা রোপণ করেন।

বারসিক খাদ্য নিরাপত্তা, বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষনে গ্রাম পর্যায়ে আলোচনা সভা, মতবিনিময়, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং প্রচারনামুলক বিলবোর্ড দিয়ে মাঠ পর্যায়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

happy wheels 2

Comments