শত কাজে শতমূল
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
শতমূল একটি অতি দরকারী ঔষধি উদ্ভিদ। অতি প্রাচীন কাল থেকে গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষেরা ভেষজ ঔষধ হিসেবে এই পরিচিত উদ্ভিদকে ব্যবহার করে চলেছে। স্থানীয়ভাবে শতমূল বা শতমূলী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এটার ইংরেজী নাম Asparagus racemosus. পুঁথির মালার মত অনেকগুলো মূল একত্রে গাটযুক্ত থাকে এর গুচ্ছমুল। একারণে এর নাম শতমূল দেওয়া হয়েছে। অযত্ন আর সংরক্ষণের অভাবে প্রকৃতির এই অতি মূল্যবান উদ্ভিদটি হারিয়ে যেতে বসেছে।
শতমুল মূলত লতাজাতীয় উদ্ভিদ। বাড়ির আনাচে-কানাচে পতিত কিংবা অপতিত সব ধরনের জমিতে এটা জন্মাতে পারে। অনেক মূল্যবান ঔষধি উদ্ভিদ। নিজেদের প্রয়োজনের জন্য মানুষ এটাকে যতœ সহকারে বাড়িতে লাগিয়ে রাখেন। অনেকেই লতানো এই গাছকে শোভাবর্ধনের জন্য সোজা লাঠির সাথে বেঁধে দেন।
শতমুলকে যত্রতত্র দেখা পাওয়া ভার। যারা পেশায় কবিরাজ তারা ভেষজ চিকিৎসার জন্য নিজেদের আঙিনায় এই উদ্ভিদকে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। নাতিশীতষ্ণ পরিবেশই এর মূল স্থান। গাছের গোঁড়াতে অক্টোবর মাসের দিকে মূল ধরতে শুরু করে। জানুয়ারি মাসে গাছে সবুজ রঙের ফল দেখা যায়, তবে পাকলে লাল হয়ে যায়। শতমুলের মূলটাই হল আসল। এই মূলের রস ঔষধ হিসেবে নানা রোগে ব্যবহৃত হয়। লিউকোরিয়া, বদহজম, গনোরিয়া, ধাতুরোগ, গ্যাসটিক, আমাশয়, ডায়রিয়া, ব্যাথা উপশমসহ নার্ভের দূর্বলতায় শতমূল অধিক কার্যকরী।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষিপদক প্রাপ্ত কৃষাণী অল্পনা রানী ও ফরিদা পারভীনের বাড়িতে সংরক্ষণ করে রেখেছেন এই ঔষধি উদ্ভিদকে। শ্যামনগর এগ্রোটেকনোলোজি পার্কে ঔষধি গাছের প্লটের মধ্যে ও অতি যত্নসহকারে লাগিয়ে রেখেছেন। শতমূল সম্পর্কে ভেষজ চিকিৎসক অল্পনা রানী বলেন, “শতমুল গাছের মুলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে শরীরের দূর্বলতা দূর করে এবং ব্রেইন ভালো হয়। ধাতুরোগের জন্য অনেক উপকারী এই শতমূল।”
অতি দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠছে বসতি, বিনষ্ট হচ্ছে ঝোপঝাড় ও বন জঙ্গল আর যে কারণে প্রকৃতি থেকে দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে শতমূলের মত নানা প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ। বিলুপ্ত প্রায় এই ঔষধি শতমূলকে অনেক প্রকৃতি প্রেমী মানুষেরা নিজেদের প্রয়োজনে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সচেতনতা ও আরো বেশি সংরক্ষণ উদ্যোগই টিকিয়ে রাখবে এই সকল মূল্যবান উদ্ভিদবৈচিত্র্য।