খরাসহনশীল ধান হিসেবে কৃষকের পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করলো তালমুগুর
রাজশাহী থেকে মো: শহিদুল ইসলাম
বরেন্দ্র অঞ্চল উপযোগী খরাসহনশীল ও কমপানি নির্ভর স্থানীয় ধানবৈচিত্র্য নির্বাচনে কৃষক নেতৃত্বে জাত বাছাই কার্যক্রমের গবেষণা প্লট থেকে তালমুগুর, স্বর্ণ মাশুরী ও স্বর্ণ লতাসহ ৫ ধরনের ধানজাত নির্বাচন করলো কৃষকগণ। এর মধ্যে থেকে সব থেকে বেশি উৎপাদন ও রোগ পোকাসহ খরাসহনশীল হিসেবে নির্বাচন করলেন তালমুগুর ধান জাতটি। স্থানীয় কৃষকদের হিসেব অনুযায়ী এই ধানজাতটি আমন মৌসুমে বিঘায় ফলন ১৬ থেকে ১৭ মণ। জাতটির চাহিদা থাকায় মাঠ দিবসে কৃষক-কৃষাণীদের মধ্যে বিনিময় হয়।
রাজশাহীর পবা উপজেলার তেতুলিয়া ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক-কৃষাণীগণ সম্প্রতি ১৪ টি স্থানীয় ধানবৈচিত্র্য থেকে চুড়ান্ত ধানজাত নির্বাচনের জন্য কৃষক মাঠ দিবসের আয়োজন করেন। গবেষণা মাঠ থেকে ধান কাটা ও মাড়াই করে, রোগ পোকা এবং ফলনসহ সার্বিক দিকগুলো বিবেচনা করে কৃষকগণ তালমুগুর, স্বর্ণ মাশুরী, জেসমিন, স্বর্ণ লতাসহ তোলাই পাঞ্চি মিলে মোট ৫টি জাত নির্বাচন করেন।
উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও তেঁতুলিয়া ডাঙ্গা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে চলতি আমন মৌসুমে কৃষক নেতৃত্বে প্রায়োগীগ কৃষি গবেষণার অংশ হিসেবে স্থানীয় ধানজাত বৈচিত্র্য গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। স্থানীয় কৃষক মো: সোহেল রানা পরিচালনায় ৬ কাঠা জমিতে মোট ১৪টি জাত নিয়ে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা হয়। জাতগুলো হলো খিরকন, রঘুশাইল, রুপশাইল, তালমুগুর, হলদে বাটালী, বাশমতি, স্বর্ণমাশুরী, তোলাই পাঞ্জি, নাড়িকেলমুচি, হরিরাজ, রতœা, চারুলতা, জেসিমিন, স্বর্ণলতা। মূলত বরেন্দ্র এলাকা উপযোগী বিভিন্ন পুরাতন ধানজাত সংরক্ষণ-প্রসার ও উন্নয়নে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একই সাথে বীজের সার্বভৌমত্ব, নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় কৃষক নেতৃত্বে ধানজাত গবেষণার কাজটি পরিচালনা হয়ে আসছে।
ধানবৈচিত্র্য বাছাই এর কৃষক মাঠ দিবসে উপস্থিত ছিলেন পবা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মজিবুর রহমান, বারসিক’র গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলামসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রায় ৪৫ জন কৃষক-কৃষাণী।
ধানজাত গবেষণা পরিচালনা কারী কৃষক মোঃ সোহেল রানা বলেন, ‘গবেষণা প্লটে আমরা কোন ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করিনি। দেশি ধান জাতে সার কম লাগে, রোগ পোকাও কম লাগে। আমরা সব বিবেচনায় তালমাগুল ধানটির ফলন বেশি পেয়েছি, এতে রোগ পোকার আক্রম কম এবং ফলনও বিঘায় প্রায় ১৬ থেকে ১৭ মণ হবে। এ ছাড়াও কিছু জাত আমরা ভালো হবে বলে আগামীতে চাষবাদ করবো।’
পবা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষক যদি নিজে বীজ উৎপাদন করে, বীজ রাখে তাহলে বীজ সংকট কম হবে।’ বারসিক গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম বলেন, স্থায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব কৃষির জন্য কৃষকের সক্ষমতা এবং জ্ঞানকে মূল্যায়ন করা দরকার, একই সাথে কৃষকের আগ্রহ এবং তাঁদের জ্ঞানকে গরুত্ব দিতে হবে। বীজের অধিকার, বীজ উৎপাদনসহ কৃষির সার্বিক দিকগুলো কৃষকদের হাতে থাকা দরকার।’
কৃষক মাঠ দিবসটি সঞ্চালনা করেন বারসিক’র প্রোগ্রাম অফিসার অমৃত কুমার সরকার। গবেষণা কার্যক্রমের সাথে পরিচালনা সহযোগী হিসেবে ছিলেন বারসিক’র সহযোগী প্রোগ্রাম অফিসার তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কৃষক নেতৃত্বে ধানবৈচিত্র্য গবেষণা কার্যক্রমের জন্য এখানে কৃষকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী বারসিক বীজ ও চারা দিয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একইসাথে এই গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনায় সার্বিক সহায়তা করে থাকে যাতে কৃষকগণ তাদের মতো করে এই গবেষণা কাজটি পরিচালনা করতে পারেন।