প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
ষড় ঋতুর বাংলাদেশের কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলায়। কৃষকগণ ঋতু বৈচিত্র্যের সাথে তাল মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ করে খাদ্য ও পুষ্টির যোগান দেয়। কৃষক পরিবারের ছেলে-মেয়েরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কৃষিতে বাস্তব শিক্ষা অর্জন করে ফসল ফলিয়ে যাচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ হরিরামপুরের রতনদিয়া গ্রামের গাছ প্রেমিক আলী আহমদ বেপারি (৭০)। তিনি একজন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। গাছ তাঁর জীবনের ধ্যান জ্ঞান। আলী আহমদ বেপারি (৭০)বলেন, “নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সফল করতে যখন বাড়ি বাড়ি ফলের চারা বিক্রয় করার উদ্যোগ নেই, তখন আমার বয়স ৩১ বছর। আমার ইচ্ছা, শক্তি, সামর্থ্য, মানুষের সহযোগিতা গাছ-পালার প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ৪০ বছর ধরে গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে ফলফলানির চারা পৌছে দিতে পারছি।
তিনি আরো বলেন, “প্রতি ভোরে নিজ বাড়ি বা আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আমার সঙ্গী হয় ভ্যান গাড়ি। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা নার্সারি থেকে ভ্যানে চারা তুলে গ্রামে-গ্রামে ঘুরি। মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী আমার নিকট থেকে ফলের চারা সংগ্রহ করেন।” তিনি আরও বলেন, “ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের হাতে ফলের চারা তুলে দিতে আমার অনেক আনন্দ লাগে। টাকা দিতে চাইলে নেই না, আমি বলি এই চারাটা তোমাকে ভালোবেসে দিলাম। ছেলে-মেয়েরা চারা পেয়ে খুব খুশি হয়। আমারও খুব ভালো লাগে। আমার আশা থাকে, আজকে আমি দিলাম, ছেলে-মেয়েরা বড় হলে সেও মানুষকে সহযোগিতা করবে।”
তিনি জানান, অনেকের বাড়িতে নিজ হাতে যতœ করে চারা লাগিয়ে দেন। প্রতিটি চারা যেন বাঁচে সেজন্য চারা নেওয়ার সময় পচা গোবর দিয়ে চারা লাগাতে বলেন। পচা গোবর সার দিয়ে ফলে চারা রোপণ করলে সহজে বেঁচে উঠে, তাড়াতাড়ি বড় হয়ে ফল দেয়। তিনি নিজ হাতে নার্সারি থেকে আম, জাম, ছবেদা, লেবু, কদবেল, লিচু, পিচফল, কাঁঠাল, জলপাই, পেপে, আমরা, কামরাঙ্গা, জামরুল, নারিকেল, ডালিম এর চারা তুলে নিয়ে আসেন। ফলে চারা ভালো থাকে- নষ্ট হয় না। এই ভালো কাজ তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করতে পারলে, তিনি পরম শান্তি পাবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, “গাছ-পালা আমার প্রাণ, আমার জীবন। সকল প্রাণ সকলের উপর নির্ভরশীল এজন্য গাছপালাকে বৃদ্ধি করতে হবে। আমার ইচ্ছা শক্তি সামর্থ এই কাজ করতে সহযোগিতা করেছে। এখন আমার বয়স হয়েছে ৭০ বছর, একাজ করতে কষ্ট হলেও মনে শক্তি কমেনি।” আলী আহমদ বেপারি বলেন, “গ্রামের রাস্তা ঘাট অনেক সময় ভাঙা থাকে, চারা বহন করতে কষ্ট হয়। এজন্য ২ বছর ধরে আমার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে সাথে নিয়ে এলাকায় ঘুরি। আমার সকল চারা এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রয় করি। কারণ হলো, যারা নার্সারি ও বাজার থেকে চারা কিনতে পারে না তাদেরকে সহযোগিতা করি। তবে চারা বিক্রয় করে আমার সংসার চলে, ৩ মেয়ে বিবাহ দিয়েছি, তারা সবাই ভালো আছে।
প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগটি তিনি সফলভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সবুজ মানুষটির প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন।