পোকা দমনে কৃষকের পাশে ফেচকা পাখি
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। প্রাচীন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে ফসল উৎপাদনে যুগে যুগে চাষাবাদে এসেছে অনেক পরিবর্তন। দেশীয় পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সবখানে। সহজে ক্ষতিকারক পোকা দমন ও অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয় হওয়ার কৃষকদের মধ্যে এ পদ্ধতি ব্যবহারের সংখা দিন দিন বেড়ে চলছে। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ এ পদ্ধতি।
কৃষকদের বন্ধু হয়ে আসছে প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশ উড়ন্ত কালো পাখি ফেচকা। এ পাখির পাকস্থলী খুব শক্তিশালী। এনজামি থাকায় সে বিষাক্ত পোকামাকড় খেয়ে হজম করতে পারে। ঘিওর উপজেলার কেল্লাই ও গাংডুবী গ্রামে কৃষকের কচঁ ক্ষেতে ফেচকা পাখি বসে জমিতে সবুজ ফড়িং, কালো পোকা, সবুজ পোকা, মাজরা পোকার ডিম খেয়ে কৃষকের কঁচু ক্ষেত রক্ষা করছে। কালো ও সবুজ পোকা কচুর মাইজ কেটে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে কচু গাছ মারা যায়। সবজি হিসেবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কচুঁর ব্যবহার বেশ পুরানো। বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠির ধর্মীয় আচার ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে কচঁর ব্যাবহার অতি প্রাচীন। দীর্ঘকাল ধরে সবজি ও ভেষজ হিসেবে কচঁ ব্যবহৃত হচ্ছে। কচুতে প্রচুর পরিমান শে^তসার, লৌহ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও সি রয়েছে।
গাংডুবী কৃষক সংগঠনের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বারসিক কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন কাজ করে। সেই জন্য কৃষকরা তাদের জমিতে এখন নিয়মিত ঝাটাঁ পুঁতে দেন। সেখানে পাখি বসে ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা খায় এবং পাখির বিষ্ঠা থেকে কৃষকদের জমিতে জৈব সার তৈরি হয়। এতে কুষকের অনেক খরচ কম হয় এবং জমিও উর্বর হয়।’
কেল্লাই গ্রামের কৃষক দুই ভাই আব্দুল জব্বার খান ও জামাল খান এ বছর ১২০ শতাংশ জমিতে লতিরাজ কচু, মুতা কচু, কাঠ কচুর তিনটি জাতের অনেক চারা রোপণ করেন। সেই কচুর জমিতে তারা ঝাঁটা পুঁতে দেন। এই প্রসঙ্গে তারা বলেন, ‘পাখি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে পোতা ঝাঁটায় বসে বসে পোকা খায়।’ এতে তাদের জমিতে পোকার ক্ষতি কম হচ্ছে। কৃষক মো. রউফ মিয়া বলেন, কোম্পানির এজেন্টেদের পরামর্শে ফসলি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি ও কৃষকরা নানা ধরনের রোগে ভুগছেন। অজানা কীটনাশকের ব্যবহার করে ফসলি জমিতে উর্বরকারী ব্যাকটেরিয়া ফসলি জমির উপকারি পাখির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ দিক দিয়ে আমরা ফসলি থেকে লাভবান হচ্ছি।’
কৃষকরা মনে করেন এভাবে পাখি দিয়ে ধান ক্ষেত, পেঁয়াজ ক্ষেত, মরিচ ক্ষেত, বেগুন ক্ষেতসহ সবজি ক্ষেতে পোকা দমন সম্ভব। পাখি আমাদের পরম বন্ধু তাদের রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।