ফিরে এসেছে তিশি
সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর নি¤œ প্লাবন ভূমি প্রাকৃতিক কারণে কৃষকগণ আবাদে নানান প্রতিকূলতার সন্মূখিন হন। মাঠে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি প্রবাহিত হওয়ায় ফলের ক্ষতি করে। আবার মাঠ থেকে বন্যার পানি চলে গেলে জমিতে ঘাসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এসকল ঘাস প্রাণিসম্পদের খাবার ও অতিরিক্ত ঘাস জমিতে পচে সবুজ সার তৈরি করে। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে কৃষকেরা কৃষি ও পরিবেশ উপযোগী সম্পদ কাজে লাগানোর মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করে থাকেন। কৃষকরা তাদের অভিজ্ঞতা ও অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নানাবিধ ফসল উৎপাদন করেন। তারা কৃষিফসল আবাদে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেন। এভাবে তারা বৈচিত্র্য ফসল আবাদের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া অনেক ফসল আবার মাঠে ফিরে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো তিশি বা মসনা (এলাকার নাম)। ২০ বছর আগে হরিরামপুরে প্রচুর পরিমাণে মসনা বা তিশি আবাদ হতো।
এই প্রসঙ্গে বাহিরচরের ইয়াসমিন বেগম (৪০) বলেন, ‘আমরা ভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করে বীজ সংরক্ষণ করি। বীজ রেখে আবাদ ফসল ভালো হয়, আবাদে নিজেদের স্বাধীনতা থাকে। তবে কৃষক বর্তমানে বেশি ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় চাষাবাদে বৈচিত্র্য হারাচ্ছেন। আমাদের কাছ থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে মসনা বা তিশি চাষ। এলাকায় মসনা চাষ দেখা যায় না। ফলে মসনা বীজ পাওয়া দুষ্কর। বারসিক হরিরামপুর রিসোর্স সেন্টার গত বছর ১০০ গ্রাম তিশি বীজ চাষাবাদের জন্য দেয়। আমরা অগ্রহায়ণে বপন করি এবং চৈত্র মাসে তিশি সংগ্রহ করি। আমার চাষ করা ২ শতক জমিতে ২০ কেজি তিশি হয়। সরিষা ও তিশি এক সাথে করে ভাঙ্গিয়ে খাবার তেল তৈরি করা হয়। তিশির তেল বেশ পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।’
একই এলাকার কৃষক বলেন, ‘কৃষকের জীবন কৃষি, আমরা আবাদ করে বেঁচে আছি। বিভিন্ন ধরনের আবাদ থাকাই আমাদের জন্য মঙ্গল। তবে তিশি বা মসনা মাঠে একেবারেই আবাদ নাই, আবাদ না থাকায় বীজ পাওয়া যায় না। এ বছর বারসিক থেকে বীজ সংগ্রহ করেছি। আগামী বছর আবাদ করব। মসনার পুষ্টিকর তেল, শরীলের জন্য খুবই উপযোগী। যে কোনো তেল জাতীয় ফসলের চেয়ে মসনা উৎপাদনে বেশি হয়। মসনা আবাদে সার বিষ লাগে না, ফলে উৎপাদন খরচ কম। বীজ সংরক্ষণে রেখে আবাদ করা যায়।’
কৃষক গবেষক শহীদ বিশ্বাস (৪৫) বলেন, ‘কৃষকের জন্য বাধ্যতামূলক হলো বীজবৈচিত্র্য সরক্ষণ করে আবাদ করা। বীজ কৃষকের সম্পদ। কোনোভাবেই হারানো যাবে না। আমাদের চরাঞ্চলে বীজবৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপযুক্ত জায়গা। তাই পলি মাটিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করে থাকি। তবে কৃষক পরিবারে সকলে মিলে কৃষি কাজ করায় উৎপাদন খরচ কম হয়। আমাদের প্রয়োজন মাটিকে বাঁচিয়ে, মাটির জীবন রক্ষা করে আবাদ করা। আমারা গ্রামের কিছু কৃষক সম্মিলিত হয়ে জৈব কৃষি চর্চা করছি। ফলে ফসলে পোকার আক্রমণ কম, ফসল ভালো হয়। ফসল আবাদে মাটি, পানি, বাতাসের ব্যবহার নিশ্চিত করে উৎপাদন খরচ কম হয়।’