হ্যালি পাতা
মাহফুজা আখতার
হ্যালিপাতা
হ্যালিপাতা। একটি লবণ সহনশীল উদ্ভিদ। প্রাকৃতিকভাবেই এটি জন্মে। দেখতে নলের মত চিকন। তিন শিরবিশিষ্ট। এর রঙ সবুজ। লম্বায় ৬০ ইঞ্চি। মাথায় তিনটি হেলানো পাতা থাকে। এই উদ্ভিদের ফুল তেখতে জিরা মসলার মতো। সাধারণত নদীর তীরে, খালের পাড়ে বিশেষ করে যেখানে জোয়ার ভাটা হয় সেখানেই এই উদ্ভিদটি জন্মে। নদীর বালু এই গাছের গোঁড়ায় পড়ে এর শিকড় আর শক্ত হয়। এজন্য যেখানে এই উদ্ভিদটি দেখা যায় সেখানে নদী ভাঙনের হার কম।
কি কাজে লাগে এই পাতা?
হ্যালিপাতা হচ্ছে পাটি তৈরির একটি মূল্যবান উপাদান। উপকূলীয় অঞ্চলের গ্রামীণ নারীরা তাদের গৃহস্থালি কাজ সম্পন্ন করার পর এই পাটি বোনার কাজ করে। দীর্ঘদিন থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা এই পাটি বোনার কাজ করে আসছে। সাধারণত পাটি বোনার জন্য গ্রামীণ বছরে একবার ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে হ্যালি পাতা কাটে। কাটা হ্যালিপাতা এরপর রোদে শুকিয়ে আটি করে রাখা হয়। রায়হানপুর গ্রামের নারীরা জানান, বছরের ৬ মাস এই পাতা দিয়ে পাটি বোনা যায়। তারা জানান হ্যালিপাতা দিয়ে বোনা পাটির বাজারমূল্য বেশি। একটি হ্যালিপাতার পাটির মূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। প্রাকৃতিক এই উদ্ভিদের ব্যবহার জানার সবচে’ বড় বিষয় হলো গ্রামীণ নারীর কর্মসংস্থান তৈরি। কারণ এই পাতা সংগ্রহ করে গ্রামীণ নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি পাটি বোনার কাজ করে সংসারের জন্য বাড়তি আয় করতে পারে। এতে করে সংসারে স্বচ্ছলতা যেমন আসে তেমিনভাবে সংসারের আয়ে অবদান রাখতে পারায় সমাজ-সংসারে গ্রামীণ নারীর মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়।
বারসিক’র উদ্যোগ
গ্রামীণ নারীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত সংসারের কাজ সেরে তাদের সুবিধামতো এই হ্যালি পাতা দিয়ে পাটি বুনেন। কিন্তু প্রাণবৈচিত্র্য বিনাশী কর্মকান্ডের কারণে নারীরা আগের মতো সেই পাতা সংগ্রহ করতে পারছেন না। এছাড়া এই পাতা সংগ্রহ অনেকে বিক্রি করে বিধায় নারীরা বাধ্য হয়ে এই পাতা কেনেন সার্মথ্যানুযায়ী। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকে তা কিনতে না পারায় তাদের এই ঐহিত্যবাহী অনুশীলন ব্যাহত হয়েছে। ফলে আর্থিকভাবেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমতাবস্থায় বারসিক উদ্যোগ নেয় এসব নারীদের সহায়তা করার। বারসিক সবসময়ই পরিবেশবান্ধব ঐহিত্যবাহী স্থানীয় উদ্যোগগুলোকে উৎসাহ দিয়ে আসছে। সামান্যতম সহযোগিতায় যদি এসব পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ আবার অনুশীলিত হয় তাহলে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা পাবে তেমনিভাবে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় অনুশীলনগুলো বেঁচে থাকবে; আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে পরিবারগুলো। মূলত এই বিশ্বাস থেকে বারসিক গ্রামীণ নারীদের সহায়তা করে আসছে।
এই ধারাবাহিকতায় বরগুণার পাথরঘাটা উপজেলায় বিগত বছরগুলোতে বারসিক বেশ ক’জন নারীকে ‘গ্রামীণ সম্মানা’ ন্যুনতম সহযোগিতা করে। এই সহযোগিতা পেয়ে গ্রামীণ নারীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুশীলন আবার চর্চা করায় আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। সমাজ-সংসারে মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের আয়বর্ধনমূলক কাজে নিয়োজিত থাকার মাধ্যমে।