কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্যতা রক্ষায় নানা জাতের ফসল চাষ গুরুত্বপূর্ণ
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/12/132683415_716032192674922_4681528583109107193_n.jpg)
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়:
আমার সন্তান যেন থাকে “দুধ ভাতে” মায়ের এই ধরনের আশির্বাদের সাথে বাঙালীর পরিচিতি “মাছ ভাতের বাঙালী ”বা “ডাল ভাতের বাঙালী ”হিসেবে। ছোটখাটো অনানুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণ নয় এমন খাবারের নিমন্ত্রণে- মৌখিকভাবে গৃহস্থ বলেন আজ আমার বাড়িতে দুপুরে বা রাতে ডাল ভাতের আমন্ত্রন – আসবেন। প্রায় সকল খাবারের হোটেলে খাবারের সাথে ডাল দেওয়া হয়। তাই ‘ডাল’ বাঙালীর আত্মপরিচিতির সাথে অনেক ভাবে জড়িয়ে আছে।
ডাল এর ইংরেজি নাম (চঁষংব) শিম গোত্রের অন্তর্গত খাদ্যশস্য। বাংলাদেশের বেশী উৎপাদিত গুঁটিজাতের প্রধানত ডাল সমূহ মুগ, মসুর, ছোলা, মটর, অড়হর, মাষকলাই, খেসারি ইত্যাদি। সব রকমের ডাল মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী। ডালের প্রুচুর প্রোটিন আছে। তাই ডালকে গরীবের আমিষও বলা হয়ে থাকে। খিচুড়ি, পিঁয়াজু, ঘুঘনি, চটপটি, ডালপুরি, ডালের বড়ি, রমজান মাসে ছোলা ও ডালের বেশন , জিলিপি তৈরীতে ব্যাপক ভাবে বিভিন্ন ধরনের ডাল ব্যবহার করা হয়। নিরামিষ খাদ্য হিসেবে ডাল ব্যবহৃত হয়। ভারতবর্ষে ডাল চাষ শুরু হয় আর্যদের আগমনের ফলে। প্রাচীনকালে ডালে বিশেষ প্রচলন ছিল না। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ডালের প্রচলন শুরু হয়। ডাল রবিশস্য, বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় ডাল জাতীয় শস্য উৎপাদিত হয়।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/12/133904966_822125421697588_7515730655145641795_n.jpg)
খেসারি ডাল বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের উৎপাদিত হয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ব্যবহার বহুদিনের পুরানো। খেসারি ডাল হিসাবে ছাড়াও বিভিন্ন রীতিতে খেয়ে থাকে। পশু খাদ্য হিসেবেও এর ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। খেসারি দানা ছাড়াও খেসারির সবুজ গাছ ও শুকনো গাছ পশুর উপাদেয় খাদ্য। খেসারির গাছের গোঁড়ায় গুঁটিতে প্রচুর ন্ইাট্রোজেন থাকে তাই ইউরিয়া সারের কাজ করে। যে সকল জমিতে আমন চাষ হয় সেই সকল জমিতে কার্তিক অগ্রহায়ন মাসে আমন ধান কাঁচা থাকা অবস্থায় আর্দ্রতাপূর্ণ জমিতে খেসারি কলাই বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়। বর্তমানে ব্যাপক বোরো ধানের চাষের কারনে খেসারি কলাই চাষ কম হয়। এটেল-দোঁআশ মাটিতে খেসারি ভালো ফলন হয়। বেলে দোঁআশ মাটিতে চাষ দিয়ে খেসারি বপন করা হয়।
খেসারি কলাই উৎপাদনে বিশেষভাবে পরিচিত মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা ও ঘিওর উপজেলার দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন চক সমূহ। বিশেষ করে ধারারচক, ঘোস্তা-মান্তারচক, কুন্দরিয়া হেলাচিয়ার, বরুনার চক সমূহ গুনগত মানসম্মত খেসারি উৎপাদিত হয়ে থাকে।
এক সময়ে এ সকল চক সংলগ্ন গ্রাম সমূহের কৃষক জনগোষ্ঠী তাদের জমিতে আমনধান পাকার (গার্শির পর) সময় চিপচিপে কাদার মধ্যে খেসারি কলাই বীজ ছিটিয়ে বপন করতো । বপন সময়কাল কার্তিক অগ্রহায়ন মাস আর চৈত্র বৈশাখ মাসে তাদের জমি হতে খেসারি কলাই সংগ্রহ করতো। খেশারি কলাই গরুদিয়ে মলন দিত। খেসারি কলাই শাক ,নারীরা তুলে শাক হিসেবে খাবার প্রচলন ছিল। খেসারি কলায়ের সাথি ফসল হিসেবে চৈত্যা সরিষা পাওয়া যায়। আমার বেড়ে ওঠা ধারার চক সংলগ্ন কোন গ্রামে। আমাদের বাড়িতে অন্যান্য ফসলের সাথে “ খেসারি কলাই বতর” মাকে অন্যদের সহযোগিতায় নিতে দেখেছি। বর্তমানে কাজের কারনে গ্রামে যেতে হয়। গতসপ্তাহে আমি ধারার চকে যাই ,গিয়ে চকের বানিজ্যিক পরিবর্তন দেখি। এখন জলি আমন চাষ হয় না,কয়েকটি ইটভাটা ইতিমধ্যে জমি দখল করে তাদের চিমনি দিয়ে আগুনের ধোঁয়া বের করছে। কথা হলো এগারশ্রী গ্রামের কৃষক শ্যামল রায়ের সাথে তিনি বললেন এখন তারা জমিতে ইরি (বোরো) চাষ করে তাই খেসারি কলাই চাষ করা হয় না। তাছাড়া ইটভাটার ধোঁয়ায় খেসারি কলইএর ফুল হতে ফল হতে চায় না নষ্ট হয়ে যায়। দুই একজন যাও খেসারি বোনে তা গরুকে খাওয়ানোর জন্য। তিনি আরো বলেন আগে খেসারির ডাটা(ভূষি) সারা বছর রেখে গরুকে খাওয়াতাম এবং খেসারি বোনা জমিতে সার লাগতো না ,এখন গরুর খাদ্য কিনতে হয় বা ঘাস লাগাতে হয় আর জমিতে রাসায়নিক সার দেওয়ার ঘাস মরে যাচ্ছে এবং জমির উরবর্তা শক্তি কমে গেছে।
ঘোস্তা মান্তা,হেলাচিয়া চকে এখনও সিিমত আকারে আমনের জমিতে খেসারি চাষ হয় । খেসারির বাজার মূল্য ভালো এবং যেহেতু চাষ বা সার দিতে হয় না তাই উৎপাদন খরচ নেই। তাছাড়া উপাদেয় গরুর খাদ্য হিসেবে ডাটা ব্যবহার করার কারনে খেসারি চাষ লাভ জনক। কথা হয় ঘোস্তা এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক আরশেদ আলী সাথে তিনি বলেন ঘোস্তা মান্তা হেলাচিয়া চকের খেসারি কলইএর দাম ও চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশী কারনে এই এলাকার মাটি এঁটেল দোঁআশ আর প্রতিবছর বর্ষার পানিতে প্রচুর পলি জমি ফলে মাটির উরবর্তা শক্তি ঠিক থাকে তাই গুনগত খেসারি বীজ উৎপাদিত হয়