ডেঙ্গুরোগ মোকাবেলায় নগরের সবাইকে যুক্ত করতে হবে
ঢাকা থেকে সুদিপ্তা কর্মকার
‘১০ টায় ১০ মিনিট প্রতি শনিবার, নিজ নিজ বাসাবাড়ি কর পরিস্কার” ঢাকা উত্তর সিটিকর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের এই শ্লোগানকে ধারণ করে গতকাল চাঁদ উদ্যানের নারী এবং যুব সংগঠনের উদ্যোগে এবং বারসিক’র সহযোগিতায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং ডেঙ্গুরোগ মোকাবেলায় এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধনে ডেঙ্গু রোগ মোকাবেলায় জন সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের শ্লোগান লেখা বিলবোর্ড নিয়ে চাদ উদ্যানের নারী, পুরুষ, যুব এবং বারসিক প্রতিনিধিরা মিলে প্রায় ৬০ জন এই মানব বন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনের শুরুতে বারসিক সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম সবাইকে এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করার জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগ একটি ঘাতক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার শুধু ঢাকা শহরে ৫ জন মানুষ মারা গিয়েছে এবং ২০৬ জন চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এখন পর্যন্ত এই রোগের কোন ঔষধ আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। আমরা যারা ঢাকায় থাকি তারা যে কোন সময় এই রোগে আক্রান্ত হতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এডিস নামক মশার কামড়ে এই ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে। এই রোগ কোন ধনী-দরিদ্র মানে না। এই রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। এই রোগ গ্রীস্মমন্ডলীয় এলাকার রোগ। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পরে এই রোগ একটি বৈশি^ক আপদে পরিণত হয়েছে। এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অফ্রিকার মহাদেশের প্রায় ১১০ টি দেশে এই রোগ বেশি দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এডিস মশার বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ায় দিন দিন এই রোগ বেড়েই চলছে সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগ বিস্তার লাভ করে। বেসরকারী তথ্য মতে, সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ৫ থেকে ৫০ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ প্রতিবছর এই রোগে মৃত্যুবরণ করে। একইভাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ থেকে ৫ লক্ষ মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় এবং অনেক মানুষ মারা যায়।’
বারসিক কর্মসূচী কর্মকর্তা সদিপ্তা কর্মকার বলেন, ‘আমরা যদি সচেতন থাকি তবে আমরা এই রোগ মোকাবিলা করতে পারি। আমরা আমাদের চারপাশে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি প্রতি দিন দিন পরপর পরিস্কার করি তবেই এই শহরকে আমরা ডেঙ্গুমুক্ত করতে পারি। আমরা শুধু সরকার বা সিটি কর্পোরেশনের দোষ ধরতে ভালোবাসি, সমালোচনা করি। এই শহরের বাসিন্দা হয়ে আমরাদের সবাইকে এই শহর পরিস্তার রাখার দায়িত্ব নিহে হবে। আমাদের সকাল এবং বিকাল বেলা সবধান থাকতে হবে যাতে মশায় কামড়াতে না পারে। আমাদের সবাইকেই মশারী ব্যবহার করতে হবে।’
বারসিক কমিউনিটি সহায়ক রুনা আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাসা বাড়ির চারপাশে যে সব জায়গায় পানি জমে যেমন, ফুলের টব, টায়ার, কাপ, প্লাষ্টিক পাত্র, ডাবের খোসায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। আমরা যদি এই জমে থাকা পানি পারিস্তার করতে পারি তবে আমরা এই শহরে ডেঙ্গুর রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। এটা সবাইকেই করতে।’ যুব প্রতিনিধি মিশু আক্তার বলেন, ‘এই রোগ মোকাবেলা করতে হবে আমাদের নিজেদের ভালোর জন্য। আমরা আমাদেতর চারপাশ নিয়মিত পরিস্কার রাখবো।’ নারী নেত্রী নাসিমা আক্তার বলেন, ‘এই রোগ আমাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। আমরা সবাই যদি সর্তক থেকে নিজেদের চারপাশ পরিষ্কার করি তবে আমরা সবাই সুস্থ থাকতে পারব।
এই মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, হেনা আক্তার রুপা, পুজা রানী মন্ডল, মৌমিতা আক্তারসহ প্রমূখ।