১৫ গ্রামের মানুষের ভরসা দহপাড়ার বাঁশের সাঁকো
মো. মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া (পাবনা)
বড়াল নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত দহপাড়া গ্রাম। গ্রামটির নদীর দু’পাড়ের মানুষের পারাপারের জন্য নেই কোন ব্রিজ। নড়বড়ে একটি বাঁশের সাঁকোই এখন ১৫ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা। এতে করে পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার বৃহত্তর এ জনগোষ্ঠীর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এলাকাবাসীর উদ্যোগে বড়াল নদীর ওপর তৈরি করা ৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এ সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে হাজারো মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও দীর্ঘ প্রায় ৩ বছরেও সেতু নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে ঝুকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোটি দিয়েই নদীর দক্ষিণ পাড়ের ভাঙ্গুড়া উপজেলার দহপাড়া, গজারমারা, শাহনগর, নুননগর, ও চাটমোহর উপজেলার পাইকপাড়া, যাবরখোল, চরপাড়া, মথুরাপুর, জালেশ্বর, পৈলানপুরসহ ১৫/১৬ টি গ্রামের মানুষ পারাপার হচ্ছে।
নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত দহপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী উত্তর পাড়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। নড়বড়ে সাঁেকাটি দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে তাদেরকে। জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারিভাবে ভাঙ্গুড়া উপজেলার দহপাড়া ও চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে বড়াল নদীতে ওয়াপদা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে নদীটির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে মরা খালে পরিণত হয়। তখন থেকেই ওই ওয়াপদা বাঁধটি নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ স্থাপনকারী সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো।
একপর্যায়ে নদীটি সচল রাখতে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি ওয়াপদা বাঁধ অপসারণের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। পরবর্তীতে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় নদী বিষয়ক টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্তে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস ২০১৬ সালের শুরুর দিকে নদী থেকে বাঁধটি অপসারণ করতে আসে। কিন্তু জনসাধারণ তাদের যোগাযোগের অসুবিধার কথা ভেবে বাঁধা দেয়। সেসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা দ্রুত সেখানে একটি সেতু নির্মাণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বাঁধটি অপসারণ করে। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৩ বছর। এলাকার মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সেতু নির্মাণে নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ।
এই প্রসঙ্গে দহপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রদান শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন, ‘সাঁকোটি দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। বর্ষাকালে তাদের এ ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা জরুরি।’ মন্ডতোষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বলেন, ‘এখানে একটি সেতু না থাকায় ১৫/২০ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া আছে। এখন আমরা প্রস্তাবটির পাশ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।’ পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম জহুরুল হক, জনসাধারণের অসুবিধার কথা ভেবে ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের ব্যাপারে তার আগ্রহের কথা জানিয়ে বলেন, ‘এতো বড় সেতু নির্মাণে জাতীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া সম্ভব নয়।’