মানিকগঞ্জে পশুর হাটে বন্যার ধাক্কা গরু নিয়ে বিপাকে বানভাসীরা

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) ॥

ঈদ উল আযহার আর মাত্র বাকী ৩ দিন। এখনো জমে উঠেনি কোরবানীর পশুর হাট। বন্যার প্রভাব পড়েছে কোরবানীর পশুর হাটে। বন্যার কারণে ক্রেতা কম থাকায় এইবার পশুর দাম বেশি জমে উঠবে না বলে আশংকা করছে কৃষক খামারীসহ ক্রেতারা। জেলার নিয়মিত কয়েকটি স্থায়ী পশুর হাটসহ কোবরানী উপলক্ষে কয়েকটি অস্থায়ী হাট লাগে। গত সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পশু যেমন কম উঠেছে তেমনিও ক্রেতাও ছিলো হাতে গোনা। যাও উঠেছে তাতেও গরু ও খাসির দাম অনেক কম।

বন্যার পানি কমলেও ঘিওর উপজেলাসহ জেলার বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। আবার অনেকেরই বাড়িতে পানি ও কাদায় মাখামাখি। তাই কারবানীর পশু কিনে বাড়িতে রাখা সমস্যা হওয়ায় অনেকেই আগে পশু কিনছেন না। কোরবানী দেওয়া লোকজন ঈদেও এক/দুই দিন আগে পশু ক্রয় করবেন বলে অনেকেই জানান। এ অবস্থায় পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে খানিকটা শঙ্কাও রয়েছে। তবে তাদের আশা, সহসাই বেচা-কেনা বাড়বে এবং দামও ভালো পাবে।

1

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল জিয়নপুর এলাকার সাহেজ মৃধা। ৮০ হাজার টাকা দিয়ে এক বছর আগে দুটি ষাঁড় গরু কিনেছিল কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য। গরু দুটোকে ভালো-মন্দ খাইয়ে তরতাজাও করে তোলেন। কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় তার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায়। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় গরু দুটি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় একটি স্কুলের বারান্দায়। গত পনের দিনে একেকটি গরুর ওজন কমপক্ষে ২০ কেজি কমে গেছে। এই বন্যায় কোনো খরিদ্দার কিংবা ব্যাপারিও আসছে না। এ নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন সাহেজ মৃধা। শুধু তিনিই নন, তার মতো ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুর ও দৌলতপুর উপজেলার হাজারো গরু চাষি বিপাকে পড়েছেন কোরবানির জন্য লালন পালন করা প্রায় ২০ হাজার গরু নিয়ে।

সরজমিনে দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল গরু চাষিদের দুর্ভোগের দৃশ্য। বাসভাসি প্রায় ৬০টি পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। সবগুলো পরিবারের ২-৩টি করে গরু রয়েছে। সেগুলো বেশিরভাগই কোরবানির গরু। নিজেদের ঘরে খাবার সংকটের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট চরম আকার ধারণ করছে আশ্রয় কেন্দ্রে। রাশেদা বেগম নামের এক গৃহবধূকে দেখা গেল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা একটি লাল রঙের ষাঁড় গরুকে খড় খাওয়াচ্ছেন। শুকনো খড়ের সাথে পানি ও লবণ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। রাশেদা বেগম জানালেন, “কত কষ্ট কইর‌্যা নিজের সন্তানের মতো গরুটা লালন পালন করতাছি একটু লাভের আশায়। কিন্তু বন্যায় আমাগো সব আশা ভরসা নষ্ট কইর‌্যা দিছে। ৪৬ হাজার টাকার গরু ৭ মাস পাললাম। কিন্তু এখন কেউ ৪০ হাজার ট্যাকাও কয় না। ৭ মাসে ওদের পেছনে কম কইর‌্যা অইলেও ২০/২৫ হাজার টাহা খরচ অইছে। এহন যদি চালান উঠাইতে না পারি তয় কিস্তির ট্যাকা পরিশোধ করুম কেমনে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তার পরিবারে।”

2

বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের কৃষক মো. বারেক মিয়া জানালেন, “বন্যায় বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে। তাই অন্যের বাড়িতে দুইটা গরু নিয়া আশ্রয় নিয়েছি। গরুগুলোকে ঠিকমতো খাওয়াইতে না পেরে কাবু হয়ে গেছে। কোরবানির হাটে দুইটা গরু বিক্রি করে আশা করছিলাম কম পক্ষে ২০/৩০ হাজার টাকা লাভ অইবো। কিন্তু এখন দেখতাছি লাভ তো দূরের থাক চালান উঠা নিয়ে হিমসিম খেতে অইবো। কোনো ব্যাপারি এখন পর্যন্ত গরু কিনতে আসেনি। চারিদিকে বন্যার পানি কিভাবে গরু লো হাটে নিয়ে যামু তা জানি না।”

ঘিওরের আশাপুর গ্রামের গৃহবধূ আছিয়া বেগম খুব আদর যত্নে ৪টি খাসি লালন পালন করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। ২৪ হাজার টাকা দিয়ে ৪টি ছাগল কিনেছিলেন তার স্বামী মেহের মোল্লা। আছিয়া বেগম বলেন, “কি আর কমু। বন্যা আমাগো কপাল শেষ কইর‌্যা দিছে। তাইলে ক্যান ঘর বাড়ি ছাইর‌্যা এইহানে আসুম।”
কান্দাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বানিয়াজুরী এলাকার মো. রুহুল আমিন জানান, বাড়ির চারপাশেই পানিতে আচ্ছাদিত। কোরবানীর পশু রাখা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। তাই ঈদের আগের দিন বিকেলে পশু ক্রয় করবো স্থানীয হাট থেকে।
অন্যদিকে চরের গরু চাষিদের আরেকটি বড় আতংক চোর-ডাকাতের ভয়। চরবাসী জানান, প্রতি রাতেই তাদের রাত জেগে গরু পাহাড়া দিতে হচ্ছে।

happy wheels 2

Comments