“আমরা চাই পাখির ডাকেই আমাদের ঘুম ভাঙুক।”
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে গাজী আল ইমরান
পাখি বাংলাদেশের প্রাণ, পাখি বাঁচান। মানুষ এবং পাখি একই সুতোয় গাথা দুটি প্রাণ। একসময় পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকতো গ্রাম-গঞ্জের শান্ত পরিবেশ। দিনের শেষে সন্ধ্যায় নামতো নীড়ে ফেরা পাখির কলরব। গভীর রাতেও শুনা যেতো রাত জাগা পাখির চঞ্চলতা। কিন্তু সময়ের সাথে এখন সবই হারিয়ে যেতে বসেছে।
বাংলাদেশে অসংখ্য পাখির জাত থাকলেও কিছু কিছু পাখির জাতের অস্থিত্ব আজ হুমকির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈরী আবাহওয়া, কৃষিতে রাসায়নিক কীটনাশক এর ব্যবহার বৃদ্ধি, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, পাখিদের আবাসস্থল ও খাদ্য সংকট এবং পাখি শিকারীদের আগ্রাসনই আজ পাখি বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই খুব শীঘ্রই পাখি সংরক্ষনে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। নয়তো পাখিরা কেবলই বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে চির বিলুপ্তির পথে ধাবিত হবে। কাক এর কর্কশ, শুভ-অশুভতার অনুচিৎ যুক্তিকে পেছনে ফেলে দূষণ মুক্ত নগর জীবনে কাক এর অবদানকে বিবেচনা করতে হবে। এ সমস্ত কারণ বিবেচনা করে পাখির মতো মহামূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ পরিবেশ বান্ধব টেকসই সমাজ গড়ার দিকে আমাদের সবাইকে অচিরেই এগিয়ে আসতে হবে। তবেই হয়তো পাখিদেরকে রক্ষা করার মধ্য দিয়ে মনুষ্য সমাজের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষিত হবে। তা না হলে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে থাকবে প্রকৃতিতে চঞ্চলতা সৃষ্টি করা নানা প্রজাতির পাখি। সাথে সাথে মুখ থুবড়ে পড়বে পরিবেশ, মনুষ্য সমাজ এবং সভ্যতা।
পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থলের কথা চিন্তা করে, পাখিকে ভালবেসে এবং পাখির অস্তিত্ব রক্ষার্থে কিছু উদ্যমী যুবক হাতে নিয়েছে গাছে গাছে পাখির আবাস স্থল গড়ে তুলার কাজ। তারা নিজেরাই ‘অভিরাম গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন’ ও ‘এস. এস. এস. টি. (সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম)’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করে নিজেদের অর্থায়নে গাছে গাছে পাখিদের বাসস্থল নির্মাণের জন্য কলস লাগিয়ে দিয়েছে পূর্ব কালিনগর গ্রামে।
শ্যামনগর ইউনিয়ন এর মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন এর পূর্বকালিনগর গ্রামের নদী তীরবর্তী চর বনায়নে সংগঠন দু’টির উদ্যোগে আধা কি.মি বনায়নে পঞ্চাশটি মাটির কলস বাধা হয়েছে এবং আরো পঞ্চাশটি বাধা পরিকল্পনা আছে। এই উদ্যোগে প্রয়োজনীয় অর্থ সঙগ্রহ করা হয়েছ এবং ভবিষ্যতে আরো সংগ্রহ করা হবে সংগঠন দু’টির সদস্যদের চাঁদার মাধ্যমে। সংগঠনটির কর্মকান্ডের সাথে একাত্ম ঘোষনা করে শুভাকাঙ্খী হিসেবে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন।
অভিরাম গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন এর আহবায়ক বিভাস মন্ডল জানান, “পাখি প্রকৃতির এক দৃষ্টিনন্দন উপকরণ। মানুষের মানষিক প্রশান্তির অনুষঙ্গ হিসেবেও বিবেচিত এই পাখি। জীববৈচিত্র্যের অন্যতম উপাদান হিসেবে পাখি প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে আসছে।” তিনি আরো জানান, “বর্তমানে আবাসস্থলের নিরাপত্তার অভাবে পাখির বংশবিস্তার কম হচ্ছে। যার ফলে কিছু জাতের পাখির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। তাই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলার পরিকল্পনা। আমরা চাই পাখির ডাকেই আমাদের ঘুম ভাঙুক।”