একটি ব্রীজ পাল্টে দিতে পারে ২৫ গ্রামের মানুষের জীবনমান
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাকঃ
দিন যায়, দিন আসে কিন্তু বদলায় না ২৫ টি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ৪৬ বছরেও শোলধারা এলাকায় ইছামতি নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ; থেকে যায় কেবলই প্রতিশ্রুতি। মাত্র একটি সেতুর জন্য এলাকাবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বার মাস কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ও শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া এই দুই ইউনিয়নের এলাকাবাসীরা ইছামতি নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এই নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় বর্ষার সময় প্রতিনিয়ত ২৫টি গ্রামের লোকজনসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা কিংবা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাঁকোর ওপর থেকে পানিতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ পথচারীরা। শুষ্ক মৌসুমে ওই জরাজির্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপার এলাকাবাসীর জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাড়ায়।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, দুই উপজেলার ইছামতি নদীর ওপর বাঁশ ও কাঠের সাকোঁ ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে। সাকোঁটি দিয়ে বানিয়াজুরি ইউনিয়নের শোলধারা, কেল্লাই, কাকজোর, বানিয়াজুরি, জোকা, নয়াচর, তারাইল, গাংডুবি এবং শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বুতুনি, বেজপাড়া, ধোলাকান্দা, কাছিধারা, ছোটবুতুনি, ইসারাবাজ, কোঠাধারা, বিলবৈড়ল, বিবিরাস্তি, শিমুলিয়া, খাইলসা, ফেচুয়াধারা, দোচুয়া, গালা, ডাকিজোড়া, পাড়াগ্রাম, ইন্তাজগঞ্জ সহ ২৫টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার লোকের সহজ পারাপারের একমাত্র অবলম্বন এটিই। বর্তমান সংসদ সদস্য সহ সকল সময়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে বারবার মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। তবে এই ব্রিজটির গুরুত্ব কোন সময়ই পরিকল্পনায় উঠে আসে নি। এলাকা বাসী আক্ষেপ করে বলে, “ভোটের সময় এলাকায় এসে অনেকেই বলেছিলেন, পাশ করলে এটা তৈরি করে দেবেন। নির্বাচন কত হল, কত সরকার গেল-এলো এখনও কেউ কথা রাখেন নি।”
এলাকাবাসী জানান, প্রতি বছর বানিয়াজুরি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাজকুমার দাস ও কৃষ্ণ দাস ৫-৬ হাজার টাকা ডাকের মাধ্যমে নিয়ে তারা আরোও ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে পাটনির মাধ্যমে সাঁকো তৈরি করে। তারা পারাপাররত কোন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা পয়সা না নিয়ে প্রত্যেকটি গ্রামের বাড়ি বাড়ি থেকে ধান, চাল, গম. ভূট্টা, পেয়াজ, সহ নানা শস্য উত্তোলন করেন। এ সাকোঁ দিয়ে ভ্যান, মটরসাইকেল, রিক্সা, বাইসাইকেল সহ নানা ধরনের যানবাহন পারাপার হয়। সাকোঁটি দিয়ে পারাপারের সময় এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলা ব্রিজ ভেঙ্গে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে। মোটরসাইকেল চালিয়ে পারাপারের সময় নিচে পড়ে আহত হন বেশ কয়েকজন। এতকিছুর পরও টনক নড়েনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কারও। আর কত প্রাণহানী ঘটলে ব্রিজটি হবে এটাই এখন স্থানীয়দের প্রশ্ন।
স্থানীয় কেল্লাই মনসুর উদ্দিন বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইস্কান্দার মীর্জা বলেন, “অত্র এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় সহ ওই পারের প্রায় আড়াইশ’ শিক্ষার্থী ব্রীজ পার হয়ে স্কুলে আসে। অনেক শিক্ষার্থী বইখাতা নিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়েছে। কিন্তু ব্রিজ হলো না। তিনি দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানান।”
বুতুনী গ্রামের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার রাসেল আহমেদ জানান, “ব্রীজ না থাকা এবং রাস্তাঘাটের দূরাবস্থার জন্য আতœীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব বাড়ীতে নিয়ে আসতে পারি না। এছাড়াও এই অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই এলাকার ছেলেÑমেয়েদের বিয়ে করতে অনেকেই অনিহা প্রকাশ করেন।”
বানিয়াজুরি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চতু জানান, “ইছামতি নদীর ওপর ব্রীজ আমরা পরিষদ থেকে ডাকের মাধ্যমে দিয়ে থাকি। অত্র এলাকার কৃষকরা কৃষি পণ্য আনা নেয়ায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়।” এই এলাকার কৃষকরা পণ্য নিয়ে বানিয়াজুরি বাস স্ট্যান্ড আসতে যেখানে ২০ টাকা লাগার কথা সেখানে ১৫-২০ কিঃ মিঃ ঘুরে শতাধিক টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এব্যাপারে কৃষকরা ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। সাথে এ সড়কের প্রায় ৫-৬ কি.মি. রাস্তা খানাখন্দে বিভিন্ন স্থান গর্ত হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ দিনেও মেরামত না করায় বৃষ্টি ও বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে চলাচলরত পরিবহন সম্ভব হয় না।
এই প্রতিবেদন এর সময় সাকোঁর ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক দেখে আক্ষেপের সুরে বলেন, “ছবি তুইল্লা আর কি অইবো? জন্মের পর থেইকা দেখছি মাপামাপি চলছে। কিন্তু আজও তা অফিস পর্যন্ত যাই নাই। যতই ছবি তুলো ব্রীজ আর অইবো না। আমাগোমত গরিব মানুষের ডাক সরকারের কানে যায় না।”