উপকূলের নির্ভীক ও নিঃস্বার্থ তরুণদের কথা বলছি
সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে রুবিনা রুবি
মহামারী করোনা কালীনে গোটা পৃথিবী যখন শান্ত তখন অশান্তের মতো মানুষের দ্বারে দ্বারে সেবা দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কিছু তরুণ যুবক। কি অদম্য সাহসের সাথে নিজেদের শক্ত রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এ যুদ্ধ এক অদৃশ্য শত্রুর সাথে, যে অদৃশ্য শক্তির হাত থেকে প্রিয় মানুষদের বাঁচানোর যুদ্ধ। দিন নেই রাত নেই ছুটে চলেছে শহর থেকে একবারে প্রত্যন্ত গ্রামে। নিজের জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে দাফন করে চলেছে করোনা রোগীর মরাদেহ। যেখানে নিথর মরদেহের আত্মীয়স্বজনরা সহধর্মিণী সন্তান সবাই স্বার্থপর সেখানে যুবরা নিজের জীবন তুচ্ছ করে দাফন করেছে সেই লাশ।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/08/FB_IMG_1630124004551.jpg)
বলছি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার শ্রেষ্ঠ যুব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ূথ টিমের কথা। মানুষের সেবা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে সিডিও ইয়ূথ টিম ২০১১ সালে আত্মপ্রকাশ করলেও মূল কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালে। শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে রয়েছে ১২টি টিম এবং উপজেলা ভিত্তিক ৩টা শ্যামনগর, কালিগঞ্জ,এবং সাতক্ষীরায়। তাছাড়া রয়েছে সহযোগী সংগঠন এবং কলেজভিত্তিক ইউনিট।
বাংলাদেশে ৮ মার্চ সর্ব প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। সেই থেকে সিডিও ইয়ূথ টিমের যুবরা মানুষের জন্য কাজ করে চলেছে এবং তাদের কাজ এখনও চলমান। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয় সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় তার মধ্যে শ্যামনগর অন্যতম। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যুবরা সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করছে নিরন্তরভাবে। প্রসাশনের সাথে যুক্ত হয়ে দিন রাত কাজ করেছে লকডাউন সফল করার জন্য, কোভিড ভ্যাক্সিন কেন্দ্রে যাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি না হয় সেখানেও তারা সহায়হতা করছে, করছে শত শত মানুষের ভ্যাক্সিন নিবন্ধনের কাজও।
কী করেনি এই যুবকরা? করোনা আক্রান্ত মানুষকে সুস্থ করার জন্য তারা বাড়ি বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, সেটা যত রাত হোক না কেন। শ্যামনগর উপজেলায় একমাত্র সিডিও ইয়ূথ টিমের যুবরাই করছে করোনা রোগীর লাশ দাফন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা এ কাজ করছে। এ কাজ করতে গিয়ে তারাও আক্রান্ত হয়েছে, কোভিড বিজয়ী হয়ে আবার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/08/IMG_20210828_102135.jpg)
মানুষের নিরাপত্তার জন্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এই যুবকরা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে মসজিদ এবং বাজারেও, বিতরণ করছে মাস্ক, অনাহারীর মুখে তুলে দিচ্ছে খাবার। গরীব অসহায় বাচ্চাদের জন্য করেছে মানবতার পাঠশালা। এ সব কাজের ফাঁকেও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য এবং উপকূল রক্ষায় বৃক্ষ রোপণ করছে। শুধু তাই নয়; এই মহামারীর সময়ে প্রতিদিন মূমুর্ষ রোগীর জন্য আছে সিডিও রক্ত দান সহায়তা কেন্দ্র যেখান থেকে প্রতিদিন রক্ত সহায়তা করা হয় মূমুর্ষ রোগীকে। আছে হাজার রক্ত দাতা যারা সর্বদা প্রস্তুত রক্ত সহযোগিতা করার জন্য!
এইভাবে প্রতিনিয়ত মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে তরুণ যুবরা। তারা সবাই এক একজন আদর্শ দেশপ্রেমিক। তারা যেন তীক্ষ্ণ ধারালো অস্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী। কোন কিছুই যেন তাদের দমাতে পারেনা। যে কোন পরিস্থিতিতে তারা সর্বদা প্রস্তুত। এ যেন সাধারণ মানুষের জন্য তাদের এক অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধ। স্যালুট জানাই ওইসব যুবদের যারা নিজের কথা চিন্তা না করে নিঃস্বার্থভাবে মানুষ ও দেশের কল্যাণের জন্য নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছে।