হাজল পদ্ধতিতে মুরগির বাচ্চা তৈরি
ঘিওর,মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার ও জামাল হোসেন
এমন এক সময় ছিল যখন মানুষকে কোন কিছুই লালন-পালন করতে হত না। প্রকৃতির হাতেই ছিল সমস্ত লালন-পালনের দায়-দায়িত্ব। মানুষ প্রকৃতির দেওয়া সম্পদ তার ইচ্ছে মতো ব্যবহার করতে পারতো। কালক্রমে বিবর্তন ধারায় পরিবর্তনে মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমশ প্রাকৃতিক সম্পদ ও হ্রাস পেতে থাকে। কিন্তু খাদ্যে চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এই বাড়তি মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে নানান পেশার মানুষ।
এরকম একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশি মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা তৈরি করে ভালো উপকার পেয়েছেন সাইকাই গ্রামের নারীরা। পোলট্রি জাতীয় প্রাণীর মধ্যে দেশি মুরগি হচ্ছে অন্যতম একটি। দিন দিন কমে যাচ্ছে দেশী মুরগির চাহিদা।
বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রাম মানিকগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ঘিওর উপজেলার সাইলকাই। এই গ্রামে ৮৫টি পরিবারের বসবাস করে। গ্রামের প্রতিটি পরিবার কৃষি কাজের সাথে জড়িত। বাড়িতে রয়েছে কৃষি খামার। যেমন-সবজি ও ফল বাগান, গরু, হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়া ও কবুতর প্রভৃতি। গুটি কয়েক পরিবার ব্যতীত প্রায় সকল কৃষক পরিবার দেশি হাঁস-মুরগি লালন-পালন ও সংরক্ষণ করে। গ্রামের কৃষাণীরা মুরগি ও হাঁসের ডিম ফুটানোর জন্য হাজল ব্যবহার করছে। এটেল মাটি দিয়ে তৈরি করতে হয় হাজল। ঝর্ণা বেগম হাজল তৈরি শিখেছেন তার বাবার বাড়ি থেকে। আর এখন নিজ পাড়া ও অন্য পাড়া গিয়ে হাজল তৈরি শিখান।
এই প্রসঙ্গে ঝর্ণা বেগম বলেন, “হাজলে আমি মেলা ধরনের সুবিধা পাইছি। হাজলে সবগুলো ডিম ফোটে বাচ্চা হয়। মুরগির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কারণ হাজলে মুরগির খাবার ও পানি থাকে। এজন্য মুরগি হাজল থেকে খাবারের জন্য বাইরে যায় না। ডিমে ভালো ওম পায়্। বাচ্চাও সুস্থ-সবল হয়। মা মুরগি আবার বিশ থেকে পচিঁশ দিন পর পুনরায় ডিম দিয়ে থাকে। আগে ডিম দিয়ে বাচ্চা তুলতে সময় নিত সত্তর থেকে আশি দিন। আর এখন ঐ সময়ে ৪ বার বাচ্চা তুলতে পারেন।”
বাচাতন বেগম নামের একজন নারী বারসিকের সহযোগিতায় ঘিওর উপজেলার যুব উন্নয়ন হতে হাঁস ও মুরগির টিকা দেবার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে হাঁস মুরগির টিকা দেন। হাঁস ও মুরগির টিকা দিয়ে দেয়। ফলে প্রায় সবগুলো বাচ্চা বাঁচে। ঝর্ণা বেগম আরও বলেন, “বাজারে দেশী মুরগির ডিমের চাহিদা অনেক। আমি প্রতিমাসে প্রায় আড়াই হাজার টাকার হাঁস ও মুরগির ডিম বিক্রি করে থাকি। এমনকি বাড়িতেও ডিম ও মুরগি খাওয়া হয়। আমার হাঁস ও মুরগি পালনে বাড়তি যে উপার্জন হয় তা ছেলেমেয়েকে লেখা পড়ার কাজে ব্যয় করতে পারি। আমার দেখাদেখি অনেকে হাজল পদ্ধতিতে বাড়তি উপাজর্ন করছেন।”
ঝর্ণা বেগমের মত অনেক নারী আজ হাজল পদ্ধতিতে মুরগি পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। শুধু সাইলকাই গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পাশে বীরসিংজুরী, বাংগালা এবং বাইলজুরী গ্রামের নারীরা ও ইতোমধ্যে হাজল ব্যবহার শুরু করেছে। ফলে এলাকার জন্য হাজল পদ্ধতিতে মুরগি পালন গ্রামে নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরিতে সম্ভাবনাময়ী হয়ে উঠেছে।