পরস্পরের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে চান তাঁরা
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়
ভুলি রানী। বয়স ৯০ এর বেশি। তাদের পাঁচ ভাই ছয় বোন। তিনি কত নম্বও তা ভালো করে মনে নেই তাঁর। তিনি ও তাঁর ছোট্ট বোন ছাড়া বাকি ভাই বোন মারা গেছে। ১২/১৩ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁর তিন ছেলে রয়েছে। তাঁর স্বামী মারা গেছেন ৩০/৩৫ বছর আগে। তিনি বর্তমানে তাঁর বড় ছেলে সংসারে আছেন, ভালো আছেন। তাঁর বৌমা তাকে খুবই যতœ করেন বলে তিনি জানান।
ভুলি রানীর বৌমার নাম রুপসী। তিনি একজন কৃষাণী। বয়স ৬৫ বছর। সংসারের নানান কাজ করেন। গরুকে খাওয়ানো, রান্নার জ¦ালানি তৈরি ও যোগান করা, গরুর ঘাষ কাটা, গাই দোহানো, খাল থেকে মাছ ধরা, মাছ কাটা, ঘর ঝাড় দেওয়া, দোয়ার নেপা (লেপলা) চুল্লা তৈরি করা, শ^াশুরির দেখাশোনা, সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ নানান কাজই তিনি করেন। রুপসী নিজের হাতে সংসার গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি বাড়িতে একটি আধাপাকা ঘর দিয়েছেন। এক মেয়ে ও এক ছেলে দুজনকেই বিয়ে দিয়েছেন।
রুপসী জানান, বাড়িতে স্বামী শাশুরিসহ তিনজন তাঁরা বসবাস করেন। তাঁর শাশুরি এই বয়সেও সংসারের নানান কাজ করেন। উঠান ঝাড়– দেওয়া, রান্না ঘর লেপা, ঘর ঝাড়– দেওয়াসহ সারাদিন এটা সেটা করে থাকেন। তাঁর শাশুরি কাজ করেন বলে চলাচল করতে পারেন। তাঁর তেমন কোন রোগব্যাধি নেই এবং চাহিদাও নেই। নেই কোন অভাব অভিযোগ। রুপসী বলেন, ‘আমার শ্বশুর মারা যাবার পর থেকেই এক সাথে আছি। আমাদের মধ্যে নেই কোন অভাব, অভিযোগ নেই। আছে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা। শাশুরি আমার গুরু হন। তাকে ভক্তি, শ্রদ্ধা করা আমার কর্তব্য। আমি যদি আমার শাশুরিকে না দেখি তবে এ বৃদ্ধ বয়সে তিনি কোথায় যাবেন?’
রুপসী আরও বলেন, ‘আমাদের দুজনের ভিতর খুবই মিল। পরস্পরের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকায় এই দীর্ঘ সময়ে আমরা বসবাস করছি। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের জমি, জমা নগদ সম্পদ খুবই কম। কৃষি কাজে পরিশ্রম করি এবং কয়েকটি গরু পালন করি। এ থেকে যা আয় হয় সেটা দিয়েই আমাদের সংসার কোন রকমে চলে যায়। আমাদের তেমন চাহিদা নেই।’
রুপসী তাঁদের বাড়িতে বারোবাসি জাতের মরিচ ও দেশি জাতের বেগুন লাগিয়েছেন। তাছাড়া সারাবছর ফল ধরে এমন পেঁপে গাছ আছে তাদের। পালানে নানান জাতের আপনজ¦ালা শাক আছে। তা দিয়ে পারিবারিক পুষ্টিনিশ্চিত করেন। এসব চাষে রুপসীরা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। গরুর গোবর বা ভুসি পচা দিয়ে সার বানিয়ে জমিতে ব্যবহার করেন। নিয়মিত দুধলে গাই থাকায় সারাবছর গরুর দুধ বাজারে বিক্রি করেন। সেটা তাদের আয়ের একটি বড় মাধ্যমও বটে। রুপসী বলেন, ‘আমরা ভালো আছি। পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি। আশা করি সকল পরিবারেও এরকম সম্প্রীতি গড়ে উঠবে।‘