গ্রামীণ শস্যপঞ্জিকা : রূপ ও রূপান্তর ( শেষ অংশ)
২য় অংশ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
http://z.barciknews.com/?p=230
হায়রে খেসারি কালাই : বার বার খুঁজে বেড়াই
নেত্রকোণা এলাকায় একটা সময় গ্রামে ব্যাপকভাবে খেসারি কালাই চাষ হলেও সেচের মাধ্যমে বোরো মৌসুমে ধানের চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখে নানা উদ্যোগসহ নানাবিধ কারণে পরিবেশবান্ধব এই ফসলের চাষ কমতে থাকে। ২০০৫ সালে রামেশ্বরপুর গ্রামের ৫ একর জমিতে প্রায় ২০ বছর পরে আবার খেসারি কালাই ডাল চাষ শুরু করেন কৃষকেরা। ডালের বীজ নিজে সংরক্ষণ করে পরবর্তী বছরে বৃহত্তর আকারে ও বিভিন্ন কৃষকদের মাঝে খেসারি কালাইয়ের বীজ বিতরণ করা হয়। এভাবে ২০০৭ সালে এসে গ্রামে প্রায় কৃষকের ঘরে খেসারি কালাই ডালের বীজ সংরক্ষিত হয় এবং এর চাষের এলাকা বাড়তে থাকে। পরিবারের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই বীজ ও শস্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা শুরু করেন। এছাড়া খেসারি ডাল চাষের পাশাপাশি আট রকমের পাট চাষ করে কৃষকরা এলাকার শস্যআবর্তন বা শস্যচক্রের ধারায় একটি গতিশীল পরিবর্তন এনেছেন। যদিও ২০০৯ সালে দীর্ঘ সময় অনাবৃষ্টির কারণে খেশারী কালাই চাষে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে, দীর্ঘ ৭ মাস একনাগারে বৃষ্টি না থাকার করণে অধিকাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
বাজারের খবরদারি
তুষাই নদীর পাড়ের বাজার ধীরে ধীরে উঠে গেলে রামেশ্বরপুর গ্রামের ধারে অভয়পাশাতে প্রায় পাঁচশত বছর আগে সাপ্তাহিক হাটটি গড়ে উঠে, যা বর্তমানে একটি গ্রামীণ বাজারের রূপ নিয়েছে । অভয়পাশা বাজারটি নেত্রকোণা জেলাপ্রশাসকের কাছ থেকে স্থানীয়রা চুক্তিভিত্তিক ইজারা নেন। অভয়পাশা বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মূসক/খাজনা দেয়। গ্রামের কৃষিজীবী বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, দিনে দিনে বাজারে বিক্রেতার ‘জমার’ পরিমাণ বাড়ছে। ২০০৫ সনে ছিল একদিনের মোট বিক্রয়ের ৪%, ২০০৭ সনে ৫%, ২০০৮ সনে ১০% এবং ২০১১ সনে। স্থানীয় কৃষির উৎপাদনের কেনাবেচার জন্য গড়ে ওঠা বাজার যে আজ তার রূপ পাল্টে এক কর্তৃত্ববাদী চরিত্র নিয়ে হাজির হবে তা গ্রামীণ জনগণ প্রথম দিকে আন্দাজ করতে পারেননি। শস্যফসল চাষের ক্ষেত্রে আজ এই অসম বাজারব্যবস্থার রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক। স্থানীয় বাজার ও বীজের দোকানে নিত্যনতুন শস্য ফসলের বীজের আগমন ও বীজের প্রাপ্যতা সহজলভ্য হলে স্থানীয় কৃষকদের অনেকেই তা কিনে নিয়ে চাষ করেন। বাজারে যে ফসলের বিক্রয়মূল্য বেশি থাকে, কৃষক পরের বছর সেধরনের ফসল চাষাবাদেই বেশি আগ্রহী থাকে। আবার বাজারদর কমে গেলে পরবর্তীতে সে ফসল চাষে কৃষকের আর উৎসাহ থাকে না। রামেশ্বরপুর গ্রামে ২০০২-২০০৯ পর্যন্ত ফাল্গুন-কার্তিক মাসে ব্যাপকহারে মুখীকচুর চাষ হতো। ২০১০ সনে বাজারে মুখীকচুর বিক্রয়মূল্য কমে যায়। মাত্র ২ টাকা প্রতি কেজি মুখীকচু বিক্রি করতে হয়। পরবর্তীতে ২০১১ থেকে এই মুখীকচুর আবাদ এ অঞ্চলে কৃষকেরা করতে আর উৎসাহী হননি।
লিঙ্গীয় অসমতা
রামেশ্বরপুর গ্রামে থেকে জানা গেল কৃষি জমির মূল বাণিজ্যিক ফসল চাষের সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষেরা আর নারীরা বাড়ির আশেপাশের বিছরার সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। এ প্রসঙ্গে পুরুষদের বক্তব্য, বেইট্টাইনে (নারীরা) শশার গোটা, ঝিঙ্গা, উড়ি ও লাউয়ের গোটা আত্মীয় বাড়িত বেড়াইতে যাইয়া আইন্যা লাগায়’। লিঙ্গীয় অসমতার কারণে দেখা যায় নারীর পছন্দের বা নারীর ব্যবস্থাপনায় টিকে থাকা শস্য ফসলগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। এভাবে এসবের ব্যবহার ও চাষ কমে আসে এবং এটির হ্রাস ঘটে। চাষ ও ব্যবহারে প্রচলন না থাকলে কোনো কোনো ফসল চিরতরে কোনো এলাকা থেকে হারিয়ে যেতে পারে। রামেশ্বরপুর গ্রামের কৃষক সায়েদ আহম্মদ খান বাচ্চুর মা চুহাই নামের এক সব্জি চাষ করতেন। বৈশাখে লাগানো হত, আষাঢ়-শ্রাবণে খায় এবং তা থাকতো অগ্রহায়ণ পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে এটি বিলুপ্ত হয়েছে, বাচ্চুর পরিবারে এটি এখন তেমন একটা খাওয়াও হয় না এবং চাষেরও প্রচলন নেই।
বহিরাগত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প ও সহযোগিতা
২০০৫ সালে ইফাদ এর একটি প্রকল্প রামেশ্বরপুরের পাশের গ্রাম বেলাটিতে শুরু হয়। বেলাটি গ্রামের কৃষক মো. হান্নান মিয়ার নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি দল তৈরি করে ইফাদ। প্রতিজনকে ১০কেজির একটি গম বীজের বস্তা, ১০কেজি করে ব্রিধান-২৯ ও ব্রিধান-৩২ এর বীজ দেয়া হয়। পোকামাকড় মারার জন্য নেট জাল দেওয়া হয় প্রতিজনকে। দলের প্রতি সদস্যদের জন্য একটি শস্যমাড়াইকল দেওয়া হয়। একটি দলের জন্য একটি শ্যালো মেশিন দেওয়া হয় সেচের জন্য। বেলাটি গ্রামের মধ্যপাড়ার ৬ একর জমির জন্য এই সহযোগিতা দেওয়া হয়। বাংলা কার্তিক মাসে এ সহযোগিতা পাওয়ার পর কৃষকেরা অগ্রহায়ণে গম বীজ বুনেন। প্রথমবছর গম আবাদ হলে ২০১১ সনের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বর্তমানে বেলাটি গ্রামে ব্রিধান-২৯ ও ব্রিধান-৩২ আবাদ হলেও গম আবাদ হচ্ছে না। গম আবাদের পর গম কাটতে হয় ফা-ুন মাসে। গম কাটার পর বোরো মওসুমের উফশী ধান জমিতে চাষ করতে কষ্ট হয়। কিন্তু সে জমিতে পাট ও আউশ লাগানো যায়। তাছাড়া গম কাটাই-মাড়াই করতে ঝামেলা ও এর চাহিদা ব্যাপক হারে স্থানীয় খাদ্য তালিকায় না থাকায় এর চাষ বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকেরা। তবে কৃষকেরা সবচে’ বড় কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন বোরো মওসুমের উফশী ধান চাষকেই। কারণ একজন কৃষক তার বছরের বর্তমানের প্রধান আবাদ বোরো মওসুমের উফশী ধান চাষকে কোনোভাবেই ব্যাহত বা ক্ষুন্ন করতে চান না। কারণ এর ফলনের উপরেই কৃষকের বর্তমানের সারাবছরের আয় রোজগারের বিষয়টি জড়িত।
বদলে গেছে বেগুনেরও বর্ষপঞ্জিকা
নয়া বাড়ি লইয়্যারে বাইদ্যা
লাগাইল বাইগন
সেই বাইগন তুলতে কইন্যা
জুড়িল কান্দন।
(নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচলিত মৈমনসিংগ গীতিকার একটি গীত)
বৈশিষ্ট্যময় বেগুনের অঞ্চল হিসেবে রামেশ্বরপুর গ্রামে প্রায় ছয় রকমের দেশি বেগুন এবং কিছু হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ হলেও বর্তমানে তুলনামূলকভাবে বারোমাসী হাইব্রিড বেগুন চাষেরই প্রচলন বেশি। যেসব কৃষক পরিবারে পারিবারিক চাহিদার জন্য বেগুন চাষ হয় তা মূলতঃ চাষ করেন পরিবারের নারীরাই। তারাই এসব বেগুন বীজ বছর বছর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে রাখেন। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় বাড়ির আশেপাশের বিছরা ও ঘরের উঁচু জায়গাগুলোতেই বেগুন গাছগুলো লাগানো হয়। এবং এক্ষেত্রে নারীদের পছন্দ দেশি জাতের বেগুন। কিন্তু যেসব পরিবারে একটু বড় জায়গাতে বা বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বেগুন চাষ করা হয় সেক্ষেত্রে তা পুরুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাইব্রিড জাত ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিক বেগুন ক্ষেতে রাসায়নিক সার ও বিষের বহুল প্রয়োগ ঘটে।
আউশের করুণ আখ্যান
স্থানীয়দের ভাষ্য, আউশ মওসুমের ধানগুলো সবচে’ শক্ত ধান। পানিতে আগে ধান জমিন ডুবে গেলে কলাগাছের ভেলা বানিয়ে বিন্দা দিয়ে আউশ ধান টেনে টেনে তোলা হত। আউশ ধানের ভাত সচরাচর ধনী পরিবারে খাওয়া হত না, আউশকে গরিবের ধান বলা হত। গ্রামীণ শ্রেণী কাঠামোয় আউশ তাই প্রতিনিয়ত এক প্রান্তিক জাত হয়ে ওঠতে বাধ্য হয়। কৃষিকামলার জন্য আউশের ভাত বরাদ্দ ছিল, এমনকি কোনো বাড়িতে চোর ধরা পড়লে তাকেও আউশের ভাত খাইয়ে ছেড়ে দেয়া হত। তবে এখনও প্রবীণেরা আক্ষেপ করেন, হিদলের (বিশেষ প্রক্রিয়াজাত পুঁটি মাছের শুঁটকী) ভর্তা আর আউশের পান্তা ভাতের। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের প্রবীণ পুরুষেরা বলেছেন, টেংরা মাছ আর লাফা বেগুনের পাতলা ঝোল গরম গরম আউশ ধানের ভাতের সাথে খেতে তারা পছন্দ করতেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত ধনী পরিবারের প্রবীণ পুরুষ কৃষকেরা বলেন, চিকন বিরই ভাতের সাথে কুকড়া (মুরগী) বা বাউশ মাছের তরকারি তাদের প্রিয় খাবারের একটি। সামাজিক শ্রেণী ভিন্নতায় খাবারের স্বাদ ও পছন্দের ধরণটি পাল্টে যায়, যা কোনো গ্রামজীবনের কৃষিতেও প্রভাব ফেলে। কারণ সচরাচর আউশ যেহেতু ধনী ও মাঝারি কৃষক পরিবারের তেমন একটা পছন্দের জাত নয়, তাই এর চাষাবাদও কমতে সেসব পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। কারণ গ্রামীণ সমাজে স্বচ্ছল ও জমির মালিক পরিবারের জাত বাছাই ও চাষের ক্ষেত্রে জাত নির্বাচনের ক্ষমতা, ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক পরিবারের চাইতে বেশি। আউশের ভেতর বোয়ালিয়া ও কালাবোয়ালিয়া ছিল আগের দিনের আগালি বা আগাম জাত। এসব ধান আগে কাটা যেত। আউশের অধিকাংশ ধানের ভাত খেতে মিষ্টি স্বাদের বলে অধিকাংশ প্রবীণেরাই মত দিয়েছেন।
দলিত ছেমা জমিন
সাধারণতঃ গ্রামের কৃষকেরা আগের দিনে পূর্ব-পশ্চিমে হাল চাষ করতেন। সূর্য পূব দিকে উদিত হয় এবং যখন মাটিতে হাল বাওয়া হয় তখন সূর্য্যরে আলো সরাসরি মাটির স্তরসমূহে প্রবেশ করে। সকল জমিনে সূর্যের আলো সবসময় একভাবে পড়ে না, আবার অনেক জমিতে একেবারেই সূর্য্যরে আলো পৌঁছায় না। কোনো কোনো জমিন ছায়ায় অবস্থিত। যেসব জমিতে রোদের প্রখরতা খুব একটা অনুভূত হয় না বা যেসব জমি ছায়া জায়গায় অবস্থিত সেসব জমিনের ধানকে ছেমা জমিনের ধান বলে। গ্রামের অবকাঠামো দিন দিন বদলে যাওয়ায় গ্রামে ছেমা জমিনের পরিমাণ কমে এসেছে, কারণ মানুষ গ্রামীণ জংগল কেটে বসতি ও কৃষিজমি সম্প্রসারিত করেছে। বোরো মওসুমের গচি ধান ছেমা জমিনের জাত। পরবর্তীতে উফশী যত জাত এসেছে তার ভেতর মুক্তা ধানই কেবলমাত্র কিছুটা ছায়া জমিনে জন্মাতে পারে। গচি, রতিশাইল ধানের পাশাপাশি সরিষা, ধনিয়া, হলুদ, আদা, পান, বাঁশ, স্বর্ণআলু ছেমা জমিনে জন্মায়। গ্রামে সূর্য্যরে আলোকগ্রহণশীলতার উপর নির্ভর করে জমির শ্রেণীবৈচিত্র্য কমে যাওয়ায় এর প্রভাব ফসচক্রের উপরও কিছুটা পড়েছে। কারণ ছায়া জমিনের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় ছায়া জমিনের ধান আবাদের ক্ষেত্রে একটা প্রভাবও তৈরি হয়েছে। জেরের জমি ও হাওরের খোলা প্রান্তরের জমিতে সূর্য্যরে আলো বেশি পড়ে। কিন্তু কানির বা টানের জমি এবং বাড়ির কাছাকাছি বিছরা এলাকায় সূর্য্যরে আলো কম পড়ে। প্রবীণদের মতে, আগেরদিনে সূর্য্যপ্রখরতা এবং আলোকগ্রহণশীলতার উপর নির্ভর করে একএকজমিতে একএক জাত চাষ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সূর্যপ্রখরতা বা আলোকগ্রহণশীলতাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। স্থানীয় তথ্যমতে, ৫০ বছর আগের চেয়ে বর্তমানে সূর্যের আলোর প্রখরতা বেড়েছে। আগেরদিনে চৈত্রমাসেও কৃষকেরা জমিনে কাজ করতে পারতো, কিন্তু এখন দিনের বেলায় দুই ঘণ্টাও কাজ করা সম্ভব হয় না আলোর প্রখরতার কারণে।
আলোকগ্রহণশীলতা ও ধান চাষের সময়বদল
স্থানীয় এলাকায় জেরের জমিন মানে নিচু জলাজমিতে সচরাচর আষাঢ়ি রোয়া লাগানো হত জ্যৈষ্ঠ কি ১৫ আষাঢ় পর্যন্ত। স্থানীয় কৃষকেরা খেয়াল করেছেন, জ্যৈষ্ঠ মাসে ধানের চারা লাগালে ধানের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ এতে পোকামাকড় বেশি ধরে। কৃষকেরা তাই জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় বাদ দিয়ে ১৫ শ্রাবণ পর্যন্ত ধানের চারা লাগানো শুরু করলেন। তারা দেখলেন এতে ফলন ভালো হচ্ছে এবং পোকামাকড় কম আক্রমণ করছে। আগের দিনে জ্যৈষ্ঠ মাসে বীজ ফেলে চারা তোলা হত কিন্তু বর্তমানে আষাঢ় মাসে ধানের বীজ ফেলে শ্রাবণ মাসে ধান লাগানো হচ্ছে। কিন্তু আগের দিন কি বর্তমানেও ধান কাটার সময়কাল বদলায়নি, তা কাটা হচ্ছে অগ্রহায়ণ মাসেই। ৪ কাঠা জমিনের জন্য প্রায় সোয়া কেজি ধান বীজ লাগে এবং ফলন হয় ১৬ মণ। ২০০৭-২০০৮ সালে রামেশ্বরপুর গ্রামের কৃষকেরা এই পদ্ধতিতে ধান রোপণ শুরু করেন। আলোকগ্রহণশীলতার সাথে তাল মিলিয়ে কৃষকদের এ চর্চাকে স্থানীয় কৃষি অফিস ব্যাখা করেছেন, জলী আমন জাতগুলো অনেক বেশি। এসব জাত মাঠে থাকলে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের নানান সমস্যা দেখা দেয়। তাই এসব জাত একটু দেরিতেই চাষ করা ভালো।
কৃষি অফিসের বক্তব্য
আটপাড়া কৃষি অফিসের সূত্রমতে, ধানের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে হাইব্রিডের ফলন বেশি। উফশী ধানের ভেতর আবার ব্রিধান-২৯, ব্রিধান-২৮ এর চাষের ক্ষেত্রে শ্রমিক বেশি প্রয়োজন হয়। উফশী থেকে হাইব্রিড ধান জাত ১৫-২০ দিন আগাম ফলন দেয়, তাই অনেকের কাছে হাইব্রিডের চাহিদা বেশি। হাইব্রিডের বাজারমূল্য ও চাহিদা উফশীর চেয়ে কম। সম্প্রতি কৃষিবিভাগের মাধ্যমে বাংলামতী নামে ব্রিধান-৫০ আটপাড়া অঞ্চলে কৃষকদের মাধ্যমে চাষ করানো হলেও এর চাহিদা বাড়ছে না; কারণ এই ধান ভাঙ্গানোর সময় চাল ভেঙ্গে যাচ্ছে। ২০০৯ সন থেকে আবাদ শুরু হওয়া বোরো মওসুমের এই হাইব্রিড ধানজাতটি তেমন একটা জনপ্রিয় হবে না বলে কৃষি অফিসের ধারণা। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, স্থানীয় এলাকায় আবহাওয়াগত পরিবর্তন খুব একটা নেই। উচ্চমূল্যের সেচব্যবস্থার জন্য প্রতি ১০ শতাংশ জমি চাষের ক্ষেত্রে কৃষককে সেচযন্ত্রের মালিককে ৫০ কেজি ধান দিতে হয়। রবি মৌসুমের বেগুন, টমেটো ও মূলা সবসময় বাজারে বিক্রয় করা যায় না, মূল্যের হেরফের হয়; পরিবহন ব্যবস্থাও ভালো না।
স্থানীয় সরকারের বক্তব্য
শস্যপঞ্জিকা বদলানোর ক্ষেত্রে এ অঞ্চলে রাজনৈতিক কোনো প্রভাব তেমন নেই। তবে কৃষি সাহায্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে একে দলীয়করণ করা হয়। সরকারি কৃষি সহযোগিতা সম্পূর্ণ দলীয় রাজনীতির প্রভাব দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও তখন দলীয় লোক হয়ে পড়েন। দলের বাইরের অন্য কৃষকের কাছে কোনো কৃষি সেবা ও সহযোগিতা পৌঁছায় না। প্রতিটি ইউনিয়ন ও উপজেলাতে সার-বিষ মনিটরিং কমিটিতে অবশ্যই ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকরভাবে যুক্ত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিনিধি যে লড়াই করে কৃষকের জন্য কোনো সরকারি কৃষি সহযোগিতা আনবে তা কিন্তু হবে না, কারন এখন সে অবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে একটি বাজার কমিটি থাকলেও সব বাজারে তা থাকে না, যেমন অভয়পাশা বাজারে কার্যকরী কোনো কমিটি নেই। বাজার কমিটিতে ইউনিয়ন পরিষদকে যুক্ত করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। প্রাকৃতিক কারণে এটি ঘটতে পারে। অধিক কুয়াশার কারণে আলু চাষ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
জাতের বিশুদ্ধতা
অনেকক্ষেত্রে কৃষকেরা একটি জাত চাষ করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন কিন্তু যখন দেখা যায় বহিরাগত কোনো একটি জাতের কারণে ওই জাতটির ভেতর সংমিশ্রণ ঘটেছে তখন সংমিশ্রণের জন্য পূর্বের জাতটি ধীরে ধীরে বাতিল হয়ে যায়। দানা জাতীয় শস্যের ক্ষেত্রে সংমিশ্রিত বীজ ও জাত কৃষকের খুব একটা পছন্দ নয়। পরাগায়ন ও সংকরায়নের মাধ্যমে এই মিশ্রণ ঘটতে পারে বলে কৃষকেরা সচরাচর খুব সাবধানে জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষা করেন। ল্যুয়েট্টি (১৯৯৯) পশ্চিম মেক্সিকোর চুজালাপা আদিবাসীদের স্থানীয় ভুট্টা জাতবৈচিত্র্যর বিশুদ্ধতা সংরক্ষণের উপর এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ভূট্টার জীনবৈচিত্র্য সংরক্ষণে চুজালাপা আদিবাসীদের রয়েছে বীজ ব্যবস্থাপনার বিশেষ দক্ষতা এবং এর মাধ্যমেই তারা তাদের কৃষিজীবনকে টিকিয়ে রাখতে চায় যাতে এসব জাতের কোনো সংমিশ্রণ না ঘটে । গবেষিত অঞ্চলে দেখা গেছে, ধানের ক্ষেত্রে একজন কৃষক যখন একটি জাত ব্যবহার করে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন বারবার সে ওই জাতটিই চাষ করতে চায়। ওই জাতের প্রতি তার একধরনের বিশ্বাস ও সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। তখন অন্য উপযোগী জাত হলেও তা সে নতুন বলে গ্রহণ করতে পারে না। জাতের বিশুদ্ধতা ধরে রাখার জন্য পরিবার, বংশ, পাড়া এবং কোনো ক্ষেত্রে কোনো গ্রাম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কোনো কোনো জাত কোনো কোনো পরিবার, পাড়া ও গ্রামের নামে তার বিশুদ্ধতা ও বৈশিষ্ট্যময় চরিত্রের জন্য খ্যাত ও আকাংখিত হয়ে পড়ে। গ্রামীণ বীজ বিনিময় প্রথার মাধ্যমে এই জাত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বিনিময় প্রথাটি কোনো কারণে ক্ষুণœ হলে বা জাতের বিশুদ্ধতা হারালে তার প্রভাব গ্রামীণ শস্যপঞ্জিকার উপরেও পড়ে।
ভূবৈচিত্র্য হ্রাস
ভূমির অবস্থানগত জায়গা থেকে রামেশ্বরপুর গ্রামের জমিকে উঁচু, মাঝারি উঁচু, মাঝারি এবং নিচু এ চারটি ভাগে ভাগ করে ২০০৭ সালে বারসিক রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টার একটি ফসল বিন্যাস ছক তৈরি করে। কিন্তু ভূমির এ বৈচিত্র্য দিনে দিনে কমে আসায় ভূমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শস্যফসল চাষের ধারাবাহিকতাও বদলে যাচ্ছে।
বদলে যাচ্ছে শস্যপঞ্জিকা : বদলে যাচ্ছে রঙ
ফসলের মাঠ, বিছরা, বাড়ির উঠানসহ গ্রামের চারপাশ মওসুমভিত্তিক শস্যফসলের চাষে ঋতুভিত্তিক রঙ পাল্টায়। আইয়োব (২০০৭) তার নেত্রকোণা জেলার ইতিহাস পুস্তকে লিখেছেন, সমগ্র জেলাই উর্বর ভূমি দিয়ে গঠিত। সেই উর্বর ভূমিতে ফসল সবুজ ও সোনালি বর্ণের ঢেউয়ের মেলা বসে। সে সোনালি ও সবুজের মেলায় কৃষকের প্রাণ আনন্দে হেলেদুলে খেলা করে। এরই সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধানশালিক, ডাহুক, কুড়াসহ নানা বর্ণ ও জাতের পাখি কলরব করে । বাংলা কার্তিক মাসে জমিনে খেসারি কালাইয়ের বীজ ছিটিয়ে দেয়া হতো। কুয়াশা যত বেশি পড়ে মাটি তত ভিজে ওঠে এবং বীজ অংকুরোদগমে সুবিধা বাড়ে। এ সময়টাতে খেসারি কালাইয়ের জমিগুলো কালচে ধূসর বর্ণ ধারণ করে। কার্তিক মাসের শেষের দিকে খেসারির জালা চারা বড় হতে থাকে। তখন চারপাশের ক্ষেতের রঙ সাদাটে সবুজ দেকায়। অগ্রহায়ণ-পৌষে গাছ বড় হয়ে ফুল ও ফল চলে আসে। তখন জমিনের রঙ পূর্ণ সবুজ দেখায়। মাঘ-ফা-ুনে খেসারি ভালোভাবে পেকে ওঠে এবং কালাই তোলা যায়। এসময় জমিনের রঙ মরা লালচে রঙের দেখায়। এই যে বীজ বুনন থেকে শুরু করে ফসল আহরণ পর্যন্ত প্রতিটি শস্য তার চারপাশের জমিনের রঙকে নানানভাবে পাল্টে দেয় এটাই হচ্ছে স্থানীয় শস্যফসল পঞ্জিকার এক প্রতিবেশগত ব্যাকরণ। চারধারের, ফসলের মাঠের রঙ দেখে বোঝা যায় এখন কি মাস, কাল ও ঋতু বিরাজ করছে। এক একটি ফসল যেন এক একটি ঋতুর নির্দেশক। এক একটি ফসলের বিভিন্ন বয়স ও কালের নানান রূপান্তর ও বর্ণবৈচিত্র্য যেন এক একটি পঞ্জিকার পাতা। কিন্তু এটি বদলে গেছে এবং যাচ্ছে, বলা উচিত একে অন্যায়ভাবে বদলে ফেলা হচ্ছে। যেমন আমরা রামেশ্বরপুরের খেসারি কালাই নামের একটিমাত্র ফসল প্রজাতি নিয়ে কথা বলছিলাম। এই প্রজাতি তার জীবনকালে প্রায় পাঁচবার নানান রঙে বদলে দিতে চারপাশ। খেসারি কালাই নিশ্চিহ্ন হওয়ার পাশাপাশি এই রঙের ধারাপাতও বদলে গেছে।
স্থানীয় বাজার ও বীজের দোকানে নিত্যনতুন শস্য ফসলের বীজের আগমন ও বীজের প্রাপ্যতা সহজলভ্য হলে স্থানীয় কৃষকদের অনেকেই তা কিনে নিয়ে চাষ করেন। আউশ ও আমন ধানের আবাদের পর বোরো মওসুমে যখন কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উফশী ধানের আবাদ শুরু হয় তখন থেকে স্থানীয় জাতের ধানের চাষাবাদ কমতে থাকে। পাশাপাশি আউশ মওসুমে ধানের আবাদ প্রায় উঠে যায়। এলাকার মোট ধান আবাদ মূলতঃ বোরো মওসুম এবং উফশী ধান জাতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। জমির মালিকানার ধরণ এবং মালিকানা পরিবর্তনও জমিতে কি ধরনের ও জাতের চাষাবাদ হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে। গণমাধ্যম ও সরকারি-বেসরকারি প্রচার-প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকে নতুন শস্যফসলের জাত আবাদ করেন। ২০০১ থেকে গবেষিত অঞ্চলে বারসিকের কার্যক্রম স্থানীয় এলাকার জাতবৈচিত্র্য ও শস্যপঞ্জিকার রূপান্তরে প্রভাব তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। কৃষি জমির স্বল্পতাও বৈচিত্র্যময় জাত আবাদ না করার কারণ। সরকারি কৃষি কর্মসূচি ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অনাগ্রহ, কৃষকদের সাথে দূরত্বমূলক সম্পর্ক ও গ্রামের কৃষি ব্লকসমূহে অনিয়মিত যাতায়াত সব মিলিয়ে কৃষকদের শস্য ফসল আবাদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়, যা স্থানীয় এলাকার ফসলচক্র পরিবর্তনের ভূমিকা রাখে। গ্রামে যার উৎপাদন ও ফলন ভালো হয় তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও সেসব জাত চাষে আগ্রহী হয়। অনেক কৃষক আছে পারিবারিক চাহিদা, বংশগত ঐতিহ্য ও নিজস্ব শখের বশে বিভিন্ন রকমের জাত চাষ করে থাকে। অনেক সময় কৃষক তার ধার-দেনা শোধ করার জন্য কোনো বাণিজ্যিক ফসল আবাদ করে থাকেন। উৎপাদন পদ্ধতির জটিলতা, জাত ও চাষ সম্পর্কিত স্থানীয় জ্ঞানের অভাব এবং গ্রামীণ সামাজিক দ্বন্দ্ব সংঘাতও কোনো কোনো ফসল চাষ করা বা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। কোনো কৃষি প্রকল্প ও কর্মসূচি, বেসরকারি সংগঠনের সম্পর্কিত উন্নয়ন উদ্যোগও গ্রামীণ ফসলচক্রে প্রভাব তৈরি করে।
শেষের অংশ
ভাবি গো লতা ছালুন ভালা লাগেনা
পাইবা মাছের হিদল থইয়া হিদল দিলা না
রাইঙ্গা ভাবি গো লতা ছালুন ভালা লাগে না।।
দৌড়ের নাওয়ে যাইয়ো নাগো পানি পড়ে গায়
বাড়িত গেলে গাইল দিব সোনা দড়ির মায়
বাড়ি আমার জঙ্গল টেঙ্গা
নাও অইছে বঙ্গী বেটির নাও।।
বাইদার ছেড়ি বাড়া পাড় দেয়
বড়ই গাছের তলে
বাইদার ছেড়া ইডা মারে বড়ই খাওনের ছলে।।
মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের নিম্নসমভূমি অঞ্চল নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জের গ্রামীণ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এখানকার স্থানীয় বৈচিত্র্য ও জীপবযাপনের ধরণকে ঘিরে। হাওর-নদী জলাভূমির এ অঞ্চলে নাও বাইচ এর সময় জারি গান, বাজনাছম, গাডুর ছম হতো। এসব ছম বা গানে স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি ও প্রতিবেশের বিষয়গুলো ব্যাখ্যা ও বিবরণের চল ছিল। উপরের গান গুলো থেকে আমরা তার কিছুটা ধারণা নিতে পারি। গ্রামীণ শস্যপঞ্জিকার নিরন্তর রূপ ও রূপান্তর বিষয়ে চলতি সমীক্ষা গ্রামীণ প্রতিবেশের শস্যপঞ্জিকার স্বকীয় বিকাশ ও রূপান্তরের পক্ষে গ্রামীণ জনমত দেখতে পেয়েছে। গ্রামীণ শস্যপঞ্জিকার উপর গ্রামীণ জনগণের বৈষম্যহীন সার্বভৌম ব্যবস্থাপনার দাবি করেছেন গবেষিত অঞ্চলের জনগণ। চলতি সমীক্ষা শস্যপঞ্জিকার সাথে গ্রামীণ জীবনের সামগ্রিক সম্পর্ককে স্পষ্ট করেছে, স্পষ্ট করেছে এর প্রতিবেশীয় সম্পর্ক ও সংযোগের ধরণটিকেও। গবেষিত অঞ্চলের মতো দেশের সকল কৃষিপ্রতিবেশের কৃষি ও জুম জীবনের শস্যপঞ্জিকা আখ্যান স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে সমুন্নত রাখতে রাষ্ট্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাতীয় বীজ নীতি (১৯৯৩), জাতীয় কৃষি নীতিসহ (১৯৯৯) প্রস্তাবিত জাতীয় কৃষিনীতি (২০১০) দেশের ভিন্ন ভিন্ন কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলের জন্য শস্যপঞ্জিকার ধরণ ও বৈচিত্র্য কেমন হতে পারে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। পাশাপাশি গ্রামীণ শস্যপঞ্জিকার উপর গ্রামীণ জনগণের অধিকার সুরক্ষায় এখনো কোনো নীতি কি আইন গৃহীত হয়নি। জাতীয় কৃষি নীতি, আইন, সনদ ও কর্মপরিকল্পনায় শস্যপঞ্জিকা এবং শস্যপঞ্জিকার স্বকীয় বিকাশমানতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে যুক্ত করা জরুরি। কোনো ধরণের বহিরাগত চাপ, কর্তৃত্ব বা বলপ্রয়োগ নয়; গ্রামীণ শস্য পঞ্জিকার অধিকার সুরক্ষায় প্রতিবেশীয়-ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহবান জানাচ্ছে চলতি সমীক্ষাপত্র