হরিরামপুর চরাঞ্চলে ধাত্রীমাতাদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
চরাঞ্চলে নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া যায় না। পাটগ্রামচরে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও বিশেষ করে চরে গর্ভবর্তী মায়ের সন্তান স্থানীয় ধাত্রী মাতার হাতে জন্ম নেয়। তাই মা ও শিশুর স্বাস্থ্য উভয়ই ঝুঁকির মধ্যে থাকে। মাঠ পর্যবেক্ষণ এবং এলাকার মানুষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে জানা যায় যায় যে, এসব ধাত্রী মাতারা তাদের মা দাদীর নিকট থেকে শিক্ষা নিয়ে সন্তান প্রসবকালীন সময়ে সেবা দিয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ না থাকায় দক্ষতার অভাবে গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবের সময় ধাত্রী মাতারা সেবা দিতে গিয়ে মায়ের রক্তক্ষরণ, সদ্য প্রসবকৃত শিশুর যত্ন, অপরিস্কার উপকরণ ব্যবহারের ফলে মা ও শিশু উভয়ই মৃত্যের ঝুঁকি থাকে।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রাম চর, খড়িয়া, গঙ্গাধরদি, নটাখোলা গ্রামে ১৫ জন ধাত্রীমাতা রয়েছে। উক্ত ধাত্রী মাতাদের প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই ধাত্রীমাতাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘উত্তর পাটগ্রামচর নারী উন্নয়ন ঐক্য পরিষদ’ ও বারসিক সম্প্রতি প্রশিক্ষণ আয়োজন করে। এই প্রশিক্ষণ আয়োজনে সহায়তার হাত বাড়ায় হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উক্ত প্রশিক্ষণে সহায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের ৪জন স্বাস্থ্য সহকারী ফরহাদ শিকদার, কুলসুম আক্তার, মোহাম্মদ সোহেল এবং আকতার হোসেন।
প্রশিক্ষণে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় সেগুলো হলো নিরাপদ মাতৃত্ব ও গর্ভকালীন যত্ন, প্রসবের ধাপ ও গর্ভফুল সমন্ধে ধারণা, জরুরি প্রসতি সেবা, এর উপাদানসমূহ, প্রসব পরবর্তী সেবাসমূহ, গর্ভজনিত ৫টি বিপদজনক চিহ্ন, নিরাপদ প্রসবের যন্ত্রপাতি প্রস্তুতি ইত্যাদি। প্রশিক্ষণে সহায়ক কুলসুম আক্তার গর্ভজনিত ৫টি বিপদজনক লক্ষন নিয়ে আলোচনা করেন। প্রসবের আগে বা পরে খুব বেশি রক্ত¯্রাব, মাথা ব্যাথা ও চোখে ঝাপসা দেখা, ভীষণ জ্বর, বিলম্বিত প্রসব, গর্ভাবস্তায় প্রসবের আগে বা পরে খিঁচুনি হওয়া হলো বিপদজনক চিহ্ন। এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে সাথে সাথে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্র বা হাসপাতালে পাঠাতে হবে বলে তিনি জানান। প্রশিক্ষণে হাজেরা খাতুন বলেন, ‘চরে যারা ধাত্রীমাতার কাজ করেন তাদের কারো কোন প্রশিক্ষণ ছিল না, আমরা সবাই মা দাদীর নিকট থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করি। আজকের প্রশিক্ষণ থেকে আমরা কৌশলগত এবং ঝুঁকির বিষয়গুলো সর্ম্পকে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পেরেছি।’
উত্তর পাটগ্রাম চর নারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোছা. আরজিনা বেগম বলেন, ‘পাটগ্রামচরের চরে ডাক্তার পাওয়া যায় না। রাতের বেলায় কেউ অসুস্থ হলে বিপদে পড়তে হয়। চরে ধাত্রীমাতাদের প্রশিক্ষণের ফলে মা ও শিশুর মৃত্যের ঝুঁকি কমে আসবে বলে আমরা আশা করি।’
প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্র্থীদের মধ্যে ১৫ থান গজ কাপড় ও ৩০ পিচ রাবার গ্লাভস বিতরণ করা হয়। উপকরণগুলো দিয়ে সহযোগিতা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।