ডাক্তার হতে চায় পরিশ্রমী ও মেধাবী সাবিনা
তানোর, রাজশাহী থেকে মিজানুর রহমান
নিজের ইচ্ছায় ব্র্যাক প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয় সাবিনা খাতুন। পাড়ার অন্য মেয়েদের স্কুলে যেতে দেখে এ ইচ্ছা জাগে তার। বয়স যখন ৬ বছর বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাটে সারাক্ষণ। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ব্র্যাক স্কুলের পড়া তৈরি করে। এভাবে প্রাথমিক গন্ডি পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে পা দেয়। ২০১৪ সালের জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দেন স্কুলের শিক্ষক ও পরিবারকে। ভালো রেজাল্ট করে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করে সাবিনা। এরপর অদম্য উৎসাহ নিয়ে শুরু হয় এসএসসির পড়ালেখা। তানোর উপজেলার কোয়েল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে সাবিনা।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েল উত্তরপাড়া গ্রামের দরিদ্র চা বিক্রেতা আব্দুর সাত্তারের ছয় মেয়ের মধ্যে ৪র্থ মেয়ে সাবিনা খাতুন। সাবিনার জীবনের শুরুটাই ঝঞ্ঝামুখর। একে তো দরিদ্র পরিবার, তার ওপর ছয় বোনের সংসারে একমাত্র দরিদ্র পিতার আয়ের মাধ্যমে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে ওদের।
দারিদ্রতার কারণে বড় তিন বোনকে পড়াশোনা ছেড়ে কৈশর বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। আর তা স্বচক্ষে দেখে ছোট সাবিনাকেও নামতে হয় জীবনযুদ্ধে। সংসারের সাহায্য করার উপায় হিসেবে স্থানীয় কোয়েলহাটে বাবার সঙ্গে চা বিক্রি করেন সাবিনা। স্কুল আর ঘুমানোর সময় ব্যতীত অদম্য সংগ্রামী সাবিনা চায়ের কেটলি ধরে চা বেঁচে পড়ালেখা চালায়। পরিবার থেকে তেমন উৎসাহ না থাকলেও নিজের প্রচেষ্টা এগিয়ে চলে তার পড়ালেখা। অতি মনোযোগী হওয়ায় সফলতাও আসে।
স্বপ্ন তার ডাক্তার হবার। কিন্তু অর্থাভাবে এইচএসসিতে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ শহরের ভালো কলেজে পড়ালেখা যোগান দেওয়া কোনোমতেই সম্ভব হচ্ছে নয় দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে। এতে ভেঙে যেতে বসেছে সাবিনার সোনালি স্বপ্ন। সাবিনার বাবা আব্দুর সাত্তার জানান, মেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। এতে খুশী তিনি। কিন্তু কলেজে কিভাবে পড়াবে। সামর্থ নেই তার। মেয়ের ডাক্তার হবার স্বপ্ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনিও। সাবিনার মা ফেন্সি আরা জানান, তাদের কোন জমি-জমা নেই। শুধু বসতভিটা আছে। স্বামী ও মেয়ে সাবিনা মিলে বাজারে চা বিক্রি করে যা আয় করে তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলে। মেয়ের ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণ হবে কী না তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম জানান, সাবিনার পরিবার অতিদরিদ্র। লেখাপড়ায় সাবিনার মনযোগ দেখে বিনামূল্যে তাকে খাতা, কলম এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ স্কুল থেকে সরবরাহ করা হয়। সে শত বাধা পেরিয়ে সফলতা অর্জন করে স্কুলের ও এলাকার মুখ উজ্জল করেছে। সাবিনার ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিবেকবানদের একটু সহমর্মিতা ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার অনুরোধ জানান তিনি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সাবিনা খাতুন বলে, “লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারলে পরবর্তী সময়ে ডাক্তার হয়ে দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখব।”