করোনাতে কৃষকরাও সম্মুখ যোদ্ধা
বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার:
এই করোনা মহামারীতে আমরা যখন বিভিন্ন অনলাইন পত্র-প্রত্রিকা, টিভি নিউজ দেখছি তখন একটি খবর হরহামেশাতেই প্রচার হচ্ছে যে করোনা মহামারী মোকাবেলায় ডাক্তারাই সবচেয়ে সামনে থেকে ভূমিকা রাখছেন। হ্যাঁ, অবশ্যই এ ক্ষেত্রে আমরা ডাক্তারদের ভূমিকা কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারব না। কিন্তু ডাক্তারদের পাশাপাশি কি আমরা কৃষকদের ভূমিকা অস্বীকার করতে পারি? যারা আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যর শত ভাগ পূরণ করে চলেছেন নিরলসভাবে? গ্রামের এমন হাজার হাজার কৃষক আছেন যারা করোনাকে ভয় না পেয়ে প্রতিদিন সকালে কোদাল বা লাঙ্গল নিয়ে জমিতে গিয়েছে দেশের মানুষের মুখে খাবার যোগানের ব্যবস্থা করতে। কোন কৃষক হয়তো অন্য কৃষককে বীজ দিয়ে সহযোগিতা করছেন, কেউবা কৃষি উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। কেউবা আবার কোন অসহায় কৃষকের ফসল সংগ্রহ করে দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কোন মূল্য ছাড়াই।
কখনও কখন যুবকরা মিলে এই করোনা সংকট মোকাবেলার জন্য নিজেরা মিলে গ্রামের কোন পতিত জমিতে একত্রিত হয়ে চাষ করেছে বিভিন্ন রকমের সবজি। সেগুলো আবার বিতরণ করেছেন নিজ গ্রামেরই অসহায় কোন পরিবারের মাঝে। যেখানে আবার সহযোগিতা করেছেন গ্রামেরই কোন অভিজ্ঞ কৃষক। কখনওবা বীজ দিয়ে আবার কখনও সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেই চলেছেন। তাদের কথা কী আমরা স্মরণ করেছি?
করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করতেই একে একে বন্ধ হতে থাকে বাহারী ও রকমারী খাবারের সব রেস্তোরা। তাতে মানুষের কি কোন সমস্যা হয়েছে? হ্যাঁ, সে সময় ঘোষণা দিয়েই খোলা ছিল কৃষি পণ্যের সব দোকান। সে সময় ঘরের খাবারে প্রতি মানুষের আস্থাটি আরো পরিপূর্ণ হয়েছে। যে ছেলে/মেয়েটির প্রতিদিন বার্গার বা পিৎজা না হলে চলত না সে কিন্তু তিন বেলা ভাত খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে! সরকার মহামারীর ভয়াবহতার কথা চিন্তা করেই বিবিন্ন উদ্যোগও নিয়েছে, বলতে শোনা গেছে কোন জমি পতিত রাখা যাবে না।
গ্রামের কৃষকরা যে কোন সংকট মোবাবেলায় অভিজ্ঞ। তাই এই করোনা মহামারী মোকাবেলতে তাঁরা কৃষি উৎপাদনে দূর্বার ভূমিকা পালন করেছেন। তাই তাঁদের প্রচেষ্টার কারণেই বাজারে বিভিন্ন ঔষধ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার,মাস্কের কৃত্রিম সংকট হলেও চাল,ডাল,সবজির কোন সংকট হয়নি, বাড়েনি কোন কৃষি পণ্যের দামও। এই মহামারী মোকাবেলায় এই বিষয়টিকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কারণ যদি করোনার কারণে দেশে খাদ্য সংকট হতো তাহলে দেশ প্রত্যক্ষ করত মহামারী কতটা ভয়ংকর হয়। বিভিন্ন গ্রন্থে এবং বয়ষ্ক মানুষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে জানা যায়, যেকোন মহামারীতে খাদ্য সংকট নাকি হয়েই থাকে এবং তা অনেক ভয়াবহ আকার ধারণ করে। খাবার রান্না করে চিন্তা করতে হয় খাবারগুলো পরিবারের কোন সদস্যকে দিবে আর কাকে না দিলেও চলবে। যদিওবা আমাদের দেশের করোনা ভাইরাসের আগমন প্রায় ৫ মাসের বেশি সময় হয়েছে। কিন্তু আমাদের কৃষকদের কল্যাণে কোন খাবার সংকট হয়নি। তাই করোনা মোকাবেলাতে কৃষকরাও সম্মুখ যোদ্ধা। হাজার হাজার কৃষক আমাদের ১৭ কোটিরও বেশি মানুষের মুখে প্রতিদিন তিনবেলা খাবারের যোগান দিযে তা প্রমাণ করে চলেছেন নিরবে ও আড়ালে থেকেই।