ঘিওরে আলুর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কাঙ্খিত দাম না পেয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে চাষীদের। আলু চাষীরা উৎপাদন খরচ উঠাতে হিমশিম অবস্থায় পড়েছেন। ফলে ঘিওরে দিন দিন কমে যাচ্ছে আলু আবাদের পরিমাণ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ৪৫৪ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয়েছে ৩৪৫ হেক্টর জমি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৯ হেক্টর কম। কারণ হিসেবে কৃষকরা জানান, বিগত কয়েক বছর যাবত আর্থিক ক্ষতিতে কমে যাচ্ছে আলু চাষের পরিমাণ।
এদিকে গত কয়েকদিন থেকে পুরোদমে আলু তোলা শুরু হয়েছে। বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ হারে আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিক পড়ে যাওয়ায় উক্ত পরিমাণ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাই আলুর ভালো ফলন হলেও কৃষকের মুখে নেই হাসি। উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বিষয়টি সম্পর্কে সরেজমিন অনুসন্ধানকালে একাধিক আলুচাষীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
উপজেলার বালিাখোড়া গ্রামের আব্দুল করিম জানান, তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছেন। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকার মতো। অথচ এসব জমি থেকে আলু বিক্রি করা হয়েছে মোট ৬৫ হাজার টাকা। ফলে তার প্রতিবিঘায় লোকসান হয়েছে ৫ হাজার টাকা করে। সিংজুরী এলাকার কৃষক রুহিদাস মন্ডল জানান, এই এলাকার বেশিরভাগ আলু চাষি গরীব। তাদের প্রতিবিঘা আলু চাষে যে খরচ হয় তা একমোটে যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই শহর বা গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে আলু চাষ করে থাকেন। ফলে তাদের কাছেই আলু বিক্রি করতে হয়। এজন্য বাজারের চেয়ে আরো কমদামে আলু বিক্রি করছেন তারা। আর এই কারণে প্রতি বিঘায় লোকসানের পরিমাণ ৭ হাজার টাকা পর্যন্তও হচ্ছে বলে জানান এই আলু চাষি।
একই কথা বলেন, রাধাকান্তপুর গ্রামের গ্রামের কৃষক মুন্নাফ মোল্লা, বড়টিয়া গ্রামের মো. বাবুসহ একাধিক কৃষক। বানিয়াজুরী গ্রামের কৃষক কবির খান জানান, এবার হঠাৎ করেই ছত্রাক নাশক মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য ব্যয় হয়েছে বেশি। এছাড়া বাজারে আলুর দামও কম। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই বাজার দর অনুযায়ী আলু বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। আগামী মৌসুমে আলুর পরিবর্তে তাদের জমিতে ভূট্টা, মিষ্টি কুমড়া ও ধানের আবাদ করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ আশরাফ উজ্জামান জানান, এ অঞ্চলের মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ফলনও হয় বাম্পার কিন্তু বাজারে আলুর দাম তুলনামূলক কম পাওয়ায় কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। তাই দিন দিন কৃষকরা আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।