বাংলার ফল : ক্ষুদে জাম
দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি,উপকূলীয় অঞ্চল
জাম একটি রসালো ফল। জাম গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়া জাম ফলের জন্য উপযুক্ত কাল। জামের বাণিজ্যিক আবাদ তেমন নেই বললেই চলে। তবে শখ করে অনেক গৃহস্থ বসতবাড়ির আশপাশে পতিত জমিতে লাগিয়ে থাকে। মানুষের কাছে বেশ লোভনীয় জাম। আর পাখির জন্যও উপাদেয় পাকা জাম। গাছের উচ্চতা ৩০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। বেশ শক্ত হয় জাম গাছ। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, জাম গাছ শত বছরও বেঁচে থাকে। কচি অবস্থায় জাম ফল সবুজ থাকে আর পাকলে কালো ও বেগুনি আভার বর্ণ ধারণ করে। পাকা জাম ফল মিষ্টি হয়। তবে হালকা টকযুক্ত সুস্বাদু। আমাদের দেশে ফলের আকার অনুযায়ী দু’ধরনের জাম দেখা চোখে পড়ে। বড় জামকে কালোজাম এবং ছোট জামকে ক্ষুদে জাম বলা হয়। অঞ্চলভেদে ক্ষুদে জামকে আবার লোয়াজাম অথবা লোয়াকরা জাম নামে পরিচিতি আছে।
বড় জাম আকারে বড়, মাংসল, নরম ও বেশ রসালো। ক্ষুদে জাম আকারে ছোট, শক্ত ও অপেক্ষাকৃত কম মাংসল ও রসালো। আমাদের দেশে মার্চ মাসে জাম গাছে মুকুল ধরে এবং জুন-জুলাই মাসে জাম পরপিক্ক হয়। আষাঢ়ে মূলত জামের ভরা মৌসুম। এজন্য জামকে আবার আষাঢ়ে জামও বলে। বড় জাম (কালো জাম) আগাম পাকে তবে ক্ষুদে জাম মূলত আষাঢ়ে পাকে। কালো জাম গাছের আকার আকৃতি ও পাতা বড় হয় এবং ক্ষুদে জাম গাছের আকার আকৃতি ও পাতা অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। বাংলাদেশে সর্বত্রই জাম গাছের দেখা মেলে। তবে যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে উৎপাদন বেশি হয়। স্থানীয় ভালো জাতের বীজ নির্দিষ্ট স্থানে রোপণ করে বা একবছর বয়সের চারা রোপণ করে জামের আবাদ করা যায়। আজকাল জামের চাহিদা থাকায় বড় জাম গাছের চারা নার্সারিতে উৎপাদন হয়। তবে ক্ষুদে জামের কোন আবাদ নেই। অচাষকৃত ক্ষুদে জাম প্রকৃতিগতভাবেই পথেঘাটে জন্মে থাকে। ফলে তা পাখির জন্য আহারের সংস্থান করে। আবার গ্রাম্য শিশু কিশোরদের কাছে ক্ষুদে জাম লোভনীয়।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জাম ফলেল প্রজাতি অনেকটাই এভন বিলুপ্তির দিকে। এর উৎপত্তি স্থান বাংলাদেশ, ভারত, বার্মা, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তান বলে ধারনা করা হয়। জাম লঁসনঁষ, সধষধনধৎ ঢ়ঁষস নামে পরিচিত, এর বৈজ্ঞানিক নাম ঝুুুমরঁস পঁসরহর ,এটি গুৎঃধপবধব পরিবার ভূক্ত একটি ফল।
জাম গাছের ও ফলের বহুবিধ ব্যবহার ও উপকারিতা রয়েছে। এটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির অভাব পূরণ করে। পশু পাখির খাদ্যের উৎস। জাম কাঠ একটি উৎকৃষ্ট মানের কাঠ। কাঠ সহজে পানিতে পঁচে না। আসবাবপত্র, গৃহনির্মাণ, যন্ত্রপাতি, নৌকা ও কুটির শিল্পের কাজে ব্যবহৃত হয়। জাম গাছ পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। বহুবিধ ওষধি গুণসমৃদ্ধ জামের কচিপাতা পেটের পীড়া নিরাময়ে সহায়ক। জাম ফলের রস হজম শক্তি বৃদ্ধি, রক্ত পরিস্কার ও রক্তের লোহিত কনিকা গঠনের সহায়তা করে। পাকা জাম সৈন্ধব লবণ মাখিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা রেখে চটকিয়ে ন্যাকড়ায় পুঁটলি বেধেঁ টানিয়ে রাখলে যে রস বের হয় তা পাতলা দাস্ত, মুখে অরুচি ও বমিভাব দূর করে। জাম ও আমের রস একত্রে পান করলে বহুমুত্র রোগীর তৃষ্ণা প্রশমন হয়। জামের ছাল পানিতে ভিজিয়ে রেখে চিনিসহ ছালের রস পান করলে আমশয় রোগ দুর হয়।
এছাড়াও জামে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে উৎকৃষ্টমানের শ্বেতসার, আমিষ ও চর্বি রয়েছে। জাম ফলে উন্নতমানের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান। রসালো জাম ফলের পুষ্টি উপাদানের সবটুকুই শরীরের কাজে লাগে। জাম থেকে রস, স্কোয়াশ ও অন্যান্য সংরক্ষিত পানীয় খাদ্য তৈরি হয়।
এ ব্যাপারে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার বলেন, “জাম ফল মানুষ ও পাখির আহার। এ ছাড়া ঔষধি গুণসমৃদ্ধ জাম মানব দেহের নানা রোগ ব্যাধির উপশম করে। আমাদের প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষা জামের আবাদ প্রয়োজন। গাঁয়ের সড়কের পাশে, বাড়ির আশেপাশে, স্কুল কলেজের পাশে, পতিত জমিতে জামের আবাদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। জাম গাছ যাতে বিলুপ্তির দিকে না যায় এজন্য এর আবাদ সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।