স্বপ্ন পুরণের হাতছানি আছিয়া বেগমের

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চুনা গ্রামে আছিয়া (৪৫) বেগমের বসবাস। স্বামী কালাম (৫০) তরফদার। এক মেয়ে আর এক ছেলেসহ ৪জন সদস্যের ছোট পরিবার তাঁর। স্বামী দিনমজুরের কাজ করে কিন্তু এলাকায় দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। সেই কারণে বছরে প্রায় ছয় থেকে সাত মাস আছিয়া বেগমের স্বামী জেলার বাইরের কাজে থাকতে হয়। এদিকে এলাকার দিকে জোন হলে আছিয়া বেগমেও জোনের কাজে যায় একটু ভালো থাকার আশায়। তবুও যেন ভালো থাকা হয় না। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চুনা গ্রামে আছিয়া বেগমের বসবাস, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে প্রতিনিয়ত বেড়িবাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ে আছিয়া বেগমের সাজানো সংসার ভেঙে দিয়ে যায়। আছিয়া বেগমের পরিবার যেন উঠে দাঁড়াতে পারেনা, নতুন করে সাজে আবার ভেঙে দিয়ে যায়।

আছিয়া বেগম গত আগস্ট ২০২১ সালে বারসিক’র বাস্তবায়নে নেটজ (পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস) এর সহাযোগিতায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয় আছিয়া বেগম। তিনি চুনার শাকিল সিএসও দলের সদস্য। আছিয়া বেগম শাকিল সিএসও দলের সদস্য হওয়ার পরে জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত সাপ্তাহিক গ্রুপে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও নিয়মিত গ্রুপে আলোচনা পরবর্তী তিনি ছাগল পালন ও হাঁস, মুরগি পালন করার সিদান্ত গ্রহণ করেন। তারই পরিপেক্ষিতে পরিবেশ প্রকল্প থেকে দুইটি ছাগল এগার হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে। আর বাকি পঁচিশ শত টাকার ছয়টি হাঁস, চারটি মুরগি ও একশত একুশ টাকার দুইটি গাছের চারা (কদবেল ও ছবেদা) এবং সবজির বীজ ক্রয় করেন। বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে মোট তের হাজার পাঁচ শত টাকার সম্পদ পান আছিয়া বেগম। তিনি হাঁস, মুরগি ক্রয়ের সময় নিজের কিছু টাকা কন্ট্রিবিউশন করেন।

ঘাঁস, মুরগি ক্রয়ের প্রায় এক/দেড় মাস পর থেকে ডিম আর ছয় মাস পরে ছাগল দুইটি- দুইটি করে মোট চারটি বাচ্ছা হয়। বর্তমানে মোট ছাগল হয় ছয়টি। এরই মধ্য তিনি হাঁস, মুরগির ডিম বিক্রয় করে সাপ্তাহিক সিএসও মিটিংএ সঞ্চয় জমা একই সাথে অল্প করে কন্ট্রিবিউশন, দূর্যোগ ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছেন। শালিক সিএসও দলের সকলের চেয়ে সঞ্চয় জমা আছিয়া বেগমের বেশি, কন্ট্রিবিউশন ও পরিশোধ হয়ে গেছে।

ছাগলগুলো লালন পালন করেন চারটি ছাগল বিক্রয় করে দিয়েছেন উনিশ হাজার টাকায়। সেই ছাগল বিক্রয়ের টাকা আর হাঁস, মুরগির ডিম বিক্রয়ের টাকা দিয় এসফোরআই এ জমা করেছেন একুশ হাজার। আরো বেশি টাকা জমিয়ে একটি গরু ক্রয় করবেন বলে। আছিয়া বেগমের একটি মেয়ে রোজিনা (২২) খাতুন, মেয়েটিকে বিয়েও দিয়েছেন বেশ কয়েগ বছর হলো আর একটি ছেলে আল আমিন (১৩) হোসেন। সে ক্লাস সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে। ছেলে আল আমিন লেখাপড়ায় ভালো। সে নিয়মিত স্কুলে যায়। আছিয়া বেগমের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন একটি গরু ক্রয় করা এবং সেই সাথে ছেলেটি লেখাপড়া শিখানো। সেই স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি আছিয়া বেগম। ছাগল আর হাঁসমুরগী পালন করে বেশ ভালোই আয় হচ্ছে তাহার। হাঁস, মুরগিসহ ডিম ছাগল বিক্রয়ের টাকা দিয়ে ছেলের লেখাপড়া খরচ, কিছু পারিবারিক খরচ মিটায়ে অল্প করে টাকা জমিয়ে রাখছেন এসফোরআইতে।

আগামী বছরের মধ্যেই গরু ক্রয় করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে গ্রুপে মিটিং এ এসে নিজ বাড়ির বসতভিটা উচু করেছেন। বসতভিটায় চারিপাশে বৃক্ষও লাগিয়েছেন এবং ঘরটির চারিপাশে রশি দিয়ে টানা বাধা যাতে দুর্যোগের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পায় আছিয়া বেগম।

happy wheels 2

Comments