সেতুটি সংষ্কার হলে ভোগান্তি কমবে ১২ গ্রামবাসীর

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ।।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের নালোড়া সেতুটি সংস্কার না হওয়ায় ৩০ বছর ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে ১২টি গ্রামের বাসিন্দা। দৈনন্দিন ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ এলাকার মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর আগে গাজীখালী নদীর ওপর নালোড়া এলাকায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৮ সালের বন্যায় সেতুর দুপাশ ভেঙে যায়। এরপর থেকে স্থানীয়রা দু’পাশে বাঁশ দিকে সংযোগ সাঁকো বানিয়ে চলাচল করছে। বছর বছর চাঁদা তুলে সাঁকো মেরামত করা হতো। কয়েক বছর এভাবে চলার পর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেরামতের খরচ দেয়া শুরু হয়। এভাবেই এখনো চলছে।

IMG_20181123_160055

এ সেতু দিয়ে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার মত্ত, মালঞ্চ গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরমত্ত, গুজুরী, বাহিরচর ও বাংগড়া, রামদিয়া, বকজুরি, সোনাকান্দর, গোপালপুরসহ কমপক্ষে ১২টি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। সেতুর দুই পাশে রয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, পুরনো জমিদার বাড়ি, উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেনের বাড়ি, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, বেতিলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার। এছাড়া সেতুটি মানিকগঞ্জ শহর, পৌরসভা, কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ও বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপন করেছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, কোনো রকম দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। দুপাশে বাঁশের সাঁকো। টিকে থাকা অংশের রেলিং ভেঙে পড়ছে, পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে, একটি পিলার অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে হেলে আছে।

স্থানীয়রা জানায়, সেতুটি সংস্কার না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে কৃষকদের। এ অঞ্চলের শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল বাইরের বাজারে নেয়া যাচ্ছে না। সেতুর কারণে বড় পাইকাররা আর আসেন না। কৃষকরা জানান, ফসল বাজারে নিতে কষ্ট হয়। অনেক সময় পাঁচ-সাত কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। ব্রিজটি যখন ভালো ছিল, তখন ঢাকায় বড় গাড়িতে করে সবজি যেত।

স্থানীয় ব্যবসায়ী লালন ফকির বলেন, ‘সেতুটি সংস্কার না হওয়ায় ৩০ বছর ধরে মানুষের দুর্ভোগ দেখছি। বহু সরকার, মেম্বার-চেয়ারম্যান এল-গেল, দুর্ভোগ আর শেষ হলো না! আমরা না হয় কোনো রকম চলাফেরা করতে পারলাম। কিন্তু আমাদের সন্তানদের কী হবে কে জানে ‘

সংস্কারের বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে এমপি-মন্ত্রীদের জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। মানুষের যাতায়াতের জন্য ইউপি থেকে বাঁশের মাচা করে দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি কেন সংস্কার করা হচ্ছে না, আমরাও বুঝতে পারছি না।

তবে স্থানীয় অনেকের মতে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণেই নালোড়া সেতু সংস্কার হচ্ছে না। অথচ মানিকগঞ্জে কত সেতু নতুন করে নির্মাণ হলো, সংস্কার হলো। দেশের প্রধান দুই দলের দ্বন্দ্বেই সেতুটি মেরামত হয়নি বলে মনে করেন অনেকে।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, নালোড়া সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মাটি পরীক্ষা ও নকশা তৈরি করার কাজ চলছে। এরপর সেতু নির্মাণের নকশা ও চাহিদাপত্র পাঠানো হবে।

 

 

 

happy wheels 2

Comments