নিজের উন্নয়ন নিজে করব
রাজশাহী থেকে উত্তম কুমার
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মোহর গ্রামের ৯নম্বর ওর্য়াডের বাঘা পাড়া ৪৫ ঘর পরিবারের বসবাস। কিন্তু চলাচলের রাস্তা না থাকায় অনেকদিন যাবত গ্রামের মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান এর জায়গা দিয়ে চলাচল করত ৪৫টি পরিবারের লোকজন। সে রাস্তাটি ছিল অনেক সরু, পায়ে হেঁটে চলাচল ছাড়া কোন কিছুই করা যেত না। কোন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে আসতে হলেও পাশের ফসলী জমির মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হতো। এতে ফসল নষ্ট হতো আর সাথে হতো কষ্ট। বর্ষার সময় কোন প্রবীণ ব্যক্তি সে রাস্তা দিয়ে হাটাচলা করতে পারতেন না। বর্ষায় ওই রাস্তা দিয়ে হাটাচলা করতে ছোট খাটো দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে কেউ কেউ।
বাঘা পাড়ার সেই রাস্তার দাবিতে ও মেরামতোর দাবিতে অনেকবার ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে যাওয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে সেই দাবি পূরণ হচ্ছিল না।
বিষয়টি স্বপ্ন আশার আলো সংগঠন এর নজরে আসে। সবাই মিলে আলোচনায় বসে রাস্তা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। মোহর স্বপ্ন আশার আলো যুব সংগঠনের সভাপতি আলমগির হোসেন বলেন, ‘আমরা নিজেরা কাজ করে হলেও রাস্তাটি তৈরি করার ব্যাপারে একমত হই। দুই পাশের জমির মালিকের সাথে করে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদেও নিয়ে আমরা আলোচনা বসি। কিন্তু কেউ বিনামূল্য কোন জমি দিতে রাজি হচ্ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবশেষে আমরা সবাই মিলে পাড়ার ৪৫টি পরিবার মিলে দুইজন জমির মালিকের নিকট থেকে এক শতাংশ করে ২ শতাংশ জমি ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জমির মূল্য ঠিক হয় ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকা ৪৫টি পরিবারের মধ্য চাঁদা হিসেবে তোলা হয়। এবার সমস্য আসে মাটি এবং তৈরি করার শ্রমিকের।’
তিনি জানান, গ্রামের অন্য পাড়া থেকে মাটির ব্যবস্থা হলেও যখন শ্রমিকের ব্যবস্থা না হয় সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় নিজেরাই কাজ করবে। স্বপ্ন আশার আলো যুব সংগঠনের সবাই মিলে এবং পাড়ার কয়েকজন মিলে ৩দিন বিনামূল্য শ্রম দিয়ে রাস্তাটি তৈরি করেছেন। এ কাজে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন তালন্দ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার হয়রত আলী। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সকল সমস্যা মোকাবেলায় আমরা স্বপ্ন আশার আলো যুব সংগঠনের সদস্যদের সহযোগিতা পাই। তারা এগিয়ে আসে সকল বিপদে আপদে।’
এই প্রসঙ্গে বাঘাপড়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মোঃ সিরাজুল ইসলাম (৭২) বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু তরুণরা কী অনায়াসেই না কাজটি করেছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’
গ্রামের সমাজ সেবক মোঃ রইছ উদ্দিন বাচ্চু (৫৫) বলেন, ‘প্রথমে স্বপ্ন আশার আলো সংগঠনকে ধন্যবাদ জানাই। যুবকদের এরকম যৌথ উদ্যোগে গ্রামের অনেক ছোট বড় সমাজকল্যাণ কাজ করা সম্ভব। যা কখনো একার পক্ষে সম্ভব না। আজ যুবক এবং জনগোষ্ঠীর যৌথ উদ্যোগের ফলে ৪৫টি পরিবার সারাজীবনের জন্য একটি চলাচলের পথ পেলেন।’
আসুন আমরা নিজের উন্নয়নের কাজ নিজেই করার চেষ্টা করি, উদ্যোগী হই। এতে করে আমাদের অনেক সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব।ল