সাম্প্রতিক পোস্ট

আসুন গাছ লাগাই সুস্থ থাকি

নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমি

নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের নগুয়া গ্রামের কিছু সবুজ মনের মানুষ মিলে গড়ে তোলেন “সবুজ শ্যামল কৃষক সংগঠন” নামে একটি গ্রামভিত্তিক জনসংগঠন। সংগঠনের সদস্যরা এলাকার উন্নয়নে, পরিবেশ সুরক্ষায় ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে ছোট ছোট কার্যক্রম করে আসছে বিগত প্রায় ৫ বছর যাবত। এলাকার জনগোষ্ঠী এই সংগঠনের মাধ্যমে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন এবং সমাজের অন্যদেকেও উদ্বুদ্ধ করছেন পরিবেশ রক্ষায় তাদের সাথে কাজে অংশ নিতে।

সংগঠনের সদস্যরা পরিবেশ দিবস ২০১৮ উপলক্ষে জনসচেতনতামূলক নাটকের আয়োজন করেন। নাটকের মাধ্যমে তারা পরিবেশ সম্পর্কিত নানান বিষয় জনগোষ্ঠীর নিকট তুলে ধরেন। নাটকে একজন যুব অভিনেতা বৃক্ষমানব সেজে বৃক্ষের উপকারিতা ও সেবার ধরণগুলো তুলে ধরেন। বৃক্ষ মানব বলেন, ‘‘আমি গাছ, আমি তোমাদেরকে অক্সিজেন দেই, বাতাস দেই, রোদের তাপদাহ থেকে রক্ষা করি। আমাদেরকে তোমরা বাচাঁও এবং বাচতে দাও।’’

20170611_123319-W600

এই প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে নিবিড় সম্পর্ক থাকলে আগামী প্রজন্মের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, পারস্পারিক সহযোগী মনোভাব এবং সকল প্রাণের মধ্যে পরস্পরের প্রতি যতœশীলতা বৃদ্ধি পাবে। গ্রামে ঔষধি গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসায় ভেষজ চিকিৎসার চর্চাগুলো কমে যাচ্ছে দিন দিন। ফলে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর লোকায়ত ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। ঔষধি উদ্ভিদ সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামসভা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

সংগঠনের উদ্যোগে ২০১৭ মৌসুমে গ্রামের রাস্তায় ৫০টি নীম গাছ রোপণ করা হয়েছিল। সবগুলো গাছই মাথা উচু করে রাস্তায় বেড়ে উঠছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ মৌসুমে (২৮ জুন) সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় ৬০টি নিম গাছ রোপণ করা হয়েছে। গবাদী পশুর আক্রমণ থেকে গাছের চারাগুলেঅ রক্ষায় সংগঠনের উদ্যোগে বাঁশের খুঁটি ও বেড়া দেওয়া হয়েছে।

নিম গাছ রোপণের মত এমন মহতী উদ্যোগ গ্রহণের কারণ জানতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি রাখাল দেবনাথ বলেন, “সংগঠনটি গড়ে তোলার পর থেকে আমরা সংগঠনের মাসিক সভায় বারসিক’র কর্মীদের মাধ্যমে গাছের বিভিন্ন গুণাগুন ও পরিবেশ রক্ষায় গাছের অবদান ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারি। ঔষধি বৃক্ষ হিসেবে নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিম গাছের বাতাসের অবদান সম্পর্কে জানার পর থেকেই প্রতিবছর সংগঠনের উদ্যোগ গ্রামের রাস্তায় নিম গাছের চারা রোপণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। গত বছরের ধারাবাহিকতায় সংগঠনের উদ্যোগে ২০১৭ ও ২০১৮ মৌসুম মোট ১১০টি নিম গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। আমরা চারাগুলো রক্ষায় গ্রামের সকলকে জানিয়েছি এবং সকলে চারাগুলোর যত্ন নিচ্ছে।”

পরিবেশ রক্ষায় ও জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় সবুজ শ্যামল কৃষক সংগঠনের নিম গাছ রোপণের উদ্যোগটি এলাকার সকলের নিকট খুবই প্রশংসিত হয়েছে। চলতি বছরে সংগঠনের সদস্যরা নিম গাছ ছাড়াও ৫০টি সুপারি গাছ এবং গ্রামের পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় তালের বীজ রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে।

সবুজ শ্যামল কৃষক সংগঠনের ন্যায় প্রতিটি গ্রামে গড়ে ওঠা জনসংগঠনগুলোর উদ্যোগ প্রতি মৌসুমে রাস্তার ধারে, নদী বা খালের পাড়ে, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, বাজার, পতিত স্থান ও নিজ বাড়িতে বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণে এগিয়ে আসলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি এলাকায় প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে।

তাই আসুন আমরা সকলে সংগঠিতভাবে ও ব্যক্তি উদ্যোগে সামর্থ্য অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় (ফলজ, বনজ ও ঔষধী) গাছের চারা রোপণ করে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখি। বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ গড়ে তুলি।

happy wheels 2

Comments