হারিয়ে যাচ্ছে পঞ্চ ফলের অন্যতম ফল কালো জাম
মানিকগঞ্জ থেকে নজরুল ইসলাম
হাজার বছরের লোকায়ত সংস্কৃতির এই বাংলা শাসন ও শোষণ করেছে আর্য, পাল, মুঘল, পাঠান, সুলতান,ব্রিটিশ বা ইংরেজ তথা ঔপনিবেশিক দেশগুলো। প্রত্যেক রাজ-রাণীর আহারের পর তাদের প্রিয় পঞ্চফল যেমন-আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা ও লিচুর প্রয়োজহন হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল জাম।
গ্রীষ্মের ফল ফলাদির মধ্যে জাম একটি গুরুত্বপুর্ণ ঔষুধি ফল। জাম সাধারণত দুই ধরনের হয় ছোট বা তিত জাম এবং বড় বা লাল জাম। গ্রামে কালো বা তিত জাম বেশি দেখা যায়। এটি কষায় রস তিক্ত ও মধুর অ¤ø ও পিত্তনাশক। সামান্য লবণ ও গুল মরিচের গুড়া দিয়ে জাম খেলে ত্রিদোশ নাশ করে।
জাম গাছ বড় চিরহরিত সবুজ পত্রাচ্ছিদ বৃক্ষ, গাছের বাকল মসৃণ পরু ও ধুসর। কাচা অবস্থায় সবুজ পাকলে বেগুনি ও কালো রং হয়। জামের আদি জন্ম ভারতবর্ষে তবে বাংলাদেশসহ উপমাদেশের সব অঞ্চলে এবং মালেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে দেখা যায়। এক সময় দেশের গ্রাম গঞ্জে সকল স্থানেই কম বেশি এই গাছ দেখা যেত। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ এবং বাজার অর্থনীতির দাপট ও অতিরিক্ত মুনাফার ভিড়ে এই গাছের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
জাম একটি অর্থকারি ফল এই গাছ পরিকল্পিতভাবে চাষ করলে ফল ও কাঠ দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করা সম্ভব। ভেষজগুণের শেষ নেই। বিশেষ করে জাম বীজ শরীরের অতিরিক্ত সুগার নিয়ন্ত্রণ করে, ইনসুলিনের অভাব পূরণ করে, জামবীজ শর্করাযুক্ত বহুমুত্র রোগে কর্যকর। পাকস্থলী প্লিহা, যকৃতের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং রক্ত ও পিত্তের প্রকোপ প্রশমিত করে।
এছাড়াও জাম হজমকারক, দাঁতের গোড়া ও মাড়ি শক্তিশালী করে। দেশী এই কালো ফলে রয়েছে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান। জামে আছে শর্করা আমিষ, চর্বি, ভিটামিন এ, বি, সি, লৌহ ও ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। জাম বীজ ডায়বেটিকস, বহুমুত্র, মেহ, প্রমেহ, বমন, পেটের অসুখসহ বিভিন্ন রোগে অব্যর্থ ভেষজ।
সিংগাইর উপজেলা বনবিভাগ কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন বলেন, “সরকারিভাবে আমাদেরকে যে বীজগুলে দেওয়া হয় আমরা সেগুলো দিয়েই বীজতলা তৈরি করি। তবে গ্রাহক পর্যায় থেকে প্রচুর চাহিদা আসলে আমাদের তালিকা পাঠানোর নিয়ম আছে এবং তালিকা পাঠালে পরের বছর সেগুলে পাওয়া যায়। জাম বীজের তালিকা কম হলেও এর গুণাগুণ অনেক। আগামী বছর আশা রাখি আমরা জামের বীজতলা তৈরি করব।” সিংগাইর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, “আমার বিদ্যালয়ে সকল প্রকার ফল গাছ আছে এবং বাড়িতেও আছে। জাম আমার প্রিয় ফল। আমি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে সকল প্রকার দেশী ফল রোপণে উৎসাহিত করি।” বায়রা ইউপি এর কৃষক মো আজাদ হোসেন বলেন, “ছোট বেলায় আমরা গাছে গাছে থাকতাম। দিনের বেশিরভাগ সময় বিশেষ করে জাম ও গাব গাছে বেশি উঠতাম আনন্দ করতাম।”
জাম গাছ আগের মত নেই, বাজারে টাকা হলেও জাম পাওয়া যায় না। জাম গাছের অনেক উপকার। ওষুধি গুণের পাশাপাশি বর্ষায় নৌকা বানাতে প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় জাম গাছের কাঠ। তাই প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে আম, জাম, কাঁঠাল, পিয়ারা, জাম্বুরাসহ দেশীয় গাছ থাকা উচিত।
কালো জামে এত গুণ থাকার পরও কেন আমরা দেশীয় ফল রোপণে পিছিয়ে আছি? আসুন আমরা বাণিজ্যিকভাবে শুধু বনজ নয়; দেশীয় ফল ও ওষুধি গাছ রোপণ করি। সুস্থ জীবন ও পারিবারিক সচ্ছলতা গড়ে তুলি। পরিবেশবান্ধব বৃক্ষ রোপণের মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুকি মোকাবেলায় তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করি।